দৌড়ে কি জিতল ‘ফাস্ট এক্স’, জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন। ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় অবিশ্বাস্য গতিবেগসম্পন্ন গাড়ি, লাতিন আমেরিকার ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’-এর আঁধারি দুনিয়া, ঝুঁকিপূর্ণ ‘স্ট্রিট রেস’ সংস্কৃতি, আর এক দল বেপরোয়া তরুণ-তরুণী। ২০০১ সাল থেকে এই উপাদান নিয়েই দৌড়ে চলেছে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি। গল্প শুরু হয়েছিল চোর-পুলিশ খেলা দিয়ে। পরবর্তী কালে অবশ্য কলেবরে বেড়ে তা পরিণত হয়েছে ভাল মাফিয়া ও খারাপ মাফিয়ার লড়াইয়ে। মাঝে যোগ হয়েছে পরিবারতন্ত্র। এই পরিবারতন্ত্র অবশ্য স্বজনপোষণের নীতিতে চলা পরিবারতন্ত্র নয়। এটা বরং পরিবারমন্ত্র! গত দু’দশক ধরে যা নির্বিকারে উচ্চারণ করে চলেছেন ভিন ডিজ়েল তথা ডমিনিক টরেটো, ওরফে ডম। ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির দশম ছবিতে এসেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। পরিবারের সুরক্ষার জন্যই যত লড়াই ডমের, পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতেই যত মারামারি ও মিশন, আর পরিবারের স্বার্থেই একের পর এক ত্যাগস্বীকার তার। এত আটঘাট বেঁধে কি শেষ পর্যন্ত নিজের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে বাঁচাতে পারবে সে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ‘ফাস্ট এক্স’ দেখতে হবে বটে। তবে উত্তর মিলবে কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই!
‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির গোড়ার দিকে গল্প শুরু হয়েছিল ‘স্ট্রিট রেস’-এর মাধ্যমে। রিও দি জেনেইরোর ‘স্ট্রিট রেস’ বৃত্তের অবিসংবাদিত তারকা ডমিনিক টরেটো। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল হাতে অপ্রতিরোধ্য সে। অন্য দিকে, স্ট্রিট রেসারের ছদ্মবেশে আবির্ভাব হয় এফবিআই অফিসার পল ওয়াকার তথা ব্রায়ান ও’কনারের। এই দুই মূল চরিত্রের হাত ধরে শুরু ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর গল্পের দৌড়। চোর-পুলিশ খেলা দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী কালে আরও দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়ে সেই ‘চেজ়’-এর। পরিবারে যোগ হতে থাকে আরও নতুন নতুন সদস্য। পরিবারের আয়তন যত বড় হতে থাকে, অতীতের নানা অপরাধমূলক ঘটনার ছায়া আরও লম্বা হয়ে পড়তে থাকে সেই সদস্যদের উপরে। ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির দশম ছবি ‘ফাস্ট এক্স’-এ এসে ডম ও তার পরিবারে শত্রু ঠাহর করতে যাওয়া বেশ জটিল ব্যাপার।
তবে শত্রুর যে হেতু কমতি নেই, তাই ফ্র্যাঞ্চাইজ়িও চলছে রমরমিয়ে। তবে তাতে গল্প খুঁজতে গেলে হোঁচট খেতে হবে বইকি। কী, কেন, কী ভাবে— ‘ফাস্ট এক্স’ দেখার সময় এই সব প্রশ্ন ও যুক্তি প্রেক্ষাগৃহের বাইরে জমা রেখে ভিতরে ঢুকতে হবে। প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে ঢুকে কী পাবেন? জমজমাট অ্যাকশন, চোখের নিমেষে হারিয়ে যাওয়ার মতো গতিসম্পন্ন একঝাঁক গাড়ির দৌড়, আর স্ট্রিট রেসার হিসাবে ডমিনিক টরেটোর মুনশিয়ানা। তার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছেন অভিনেত্রী মিশেল রড্রিগেজ়। নজর কেড়েছেন চার্লিজ় থেরন তথা সাইফার। অ্যাকশন দৃশ্য যদি উপভোগ করতে হয়, তা হলে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘অ্যাকোয়াম্যান’ খ্যাত অভিনেতা জেসন মোমোয়া। দান্তে চরিত্রে তাঁর অভিনয় বেশ এলোমেলো। কখনও কখনও কিছু দৃশ্যে তাঁকে অতিরিক্ত নাটুকে বলেই মনে হয়েছে। খলনায়ক হিসাবে জেসন স্ট্যাথাম ও চার্লিজ় থেরনের ধারেকাছেও যেতে পারেননি জেসন মোমোয়া। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আস্ফালন ছাড়া ডমিনিক টরেটোকে টক্কর দেওয়ার মতো বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে দিতে পারেননি মোমোয়া। বরং, ‘উন্মাদ’ খলনায়কের নিরিখে বিচার করলে, তালিকায় উপরের দিকেই জায়গা পাবেন তিনি।
তবে একশো একটা খামতি থাকলেও ছবির রেসিং ও কার চেজ় দৃশ্যগুলি থেকে চোখ সরানোর উপায় নেই। অবশ্য এই ‘অ্যাড্রেনালিন রাশ’-এর হাতছানিই ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর সবচেয়ে বড় ইউএসপি। অ্যাকশন দৃশ্যগুলিও দুর্দান্ত। মারামারির মধ্যেও যে নাচের মতো সমন্বয় থাকতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ ‘ফাস্ট এক্স’। ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির গোড়ার দিকের ছবিগুলোয় যে উদ্দাম যৌবনের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়, ‘ফাস্ট এক্স’ সেই তুলনায় অনেকটা পরিণত। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর একনিষ্ঠ অনুরাগী যাঁরা, তাঁদের কাছে এই তুলনামূলক চিত্রটা অনেক বেশি পরিষ্কার।
তবে, ‘ফাস্ট এক্স’-এর সব থেকে বড় চমক লুকিয়ে আছে ছবির সহ-অভিনেতাদের মধ্যে। খুব কম সময় পর্দায় থাকলেও নজর কেড়েছেন জন সিনা। বিশেষ চরিত্রে অদ্বিতীয় হেলেন মিরেন। ভাল মানিয়েছে মার্ভেল তারকা ব্রি লারসনকেও। সময়ে সময়ে নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন তাঁরা, আর গোটা প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়েছে উল্লাস আর হাততালিতে। এই উত্তেজনাই প্রমাণ করে, গল্পের গরু গাছে উঠুক বা গাড়ি দৌড় করিয়ে ভ্যাটিকানে নিয়ে যাক— ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর অনুরাগীরা তার সঙ্গ ছাড়বেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির একেবারে গোড়ার দিকে যে শপথবাক্য পাঠ করেছিল ডম, লেটি, ব্রায়ান ও মিয়া, তার দাম এখনও রেখেছেন অনুরাগীরা— ‘রাইড অর ডাই’। তবে, ছবির সব থেকে বড় অপ্রত্যাশিত চমক আছে একেবারে শেষে। কী সেই চমক, তা জানতে ক্রেডিট রোল হওয়ার পরেও কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে প্রেক্ষাগৃহে।
ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির তারকা ভিন ডিজ়েল ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনটি ভাগে বিভক্ত ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ছবির শেষ অধ্যায়। এর মধ্যে প্রথমটি ‘ফাস্ট এক্স’। এখনও বাকি আরও দু’টো ছবি। শত্রুর সংখ্যা কি উত্তরোত্তর বাড়বে, না কি ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’ তত্ত্বের ভিত্তিতে ডমের পাশে এসে দাঁড়াবে তার পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বীরা? এই শেষ লড়াই লড়তে লড়তে কি আদৌ নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে পারবে সে? নাকি গল্পের মাথামুণ্ডুর মতো হারিয়ে যাবে তারাও? প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে দেখতে হবে আরও দু’টি ছবি। তবে, একঘেয়ে চিত্রনাট্যের উপর ভর করে কেবল নতুন নতুন প্রযুক্তির আড়ম্বর কত দিন ধরে রাখতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির অনুরাগীদের, এখন প্রশ্ন সেটাই।