গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সময়ের সঙ্গে বাংলায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতি মাসেই মুক্তি পায় একগুচ্ছ ওয়েব সিরিজ়। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ‘নম্বর’ দেখলে বোঝা যায়, তার মধ্যে কিছু ‘চলে’। কিছু ‘চলে না’। নম্বরের মারপ্যাঁচে না ঢুকে আনন্দবাজার অনলাইন খুঁজল বছরের সেরা পাঁচ ওয়েব সিরিজ়।
১. ছোটলোক
সহজ রাস্তায় না হেঁটেই ছবি তৈরি পছন্দ পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর। ফলে তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ় নিয়ে শুরু থেকেই উৎসাহ ছিল। মুক্তির পর সিরিজ়ের বিষয়বস্তুও নজর কেড়েছে। থ্রিলার, কিন্তু বাজারচলতি নয়। খুনের তদন্তের মোড়কে গল্প সাজানো হলেও তা ছুঁয়ে গিয়েছে সমাজের নানা আঙ্গিক। এক উঠতি মডেলের খুনের রহস্যের তদন্তে নামে সাব-ইন্সপেক্টর সাবিত্রী মণ্ডল। ক্রমশ তাতে জড়িয়ে পড়ে সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজন। ‘সাবিত্রী’র চরিত্রে অভিনেত্রী দামিনী বেণী বসুর অভিনয় দেখার মতো। তিনি ছাড়াও সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রাণী হালদার, ঊষসী রায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, গৌরব চক্রবর্তী প্রমুখ।
২. মাইসেল্ফ অ্যালেন স্বপন
কক্সবাজার থেকে আইনরক্ষকদের নজর এড়িয়ে ড্রাগ মাফিয়া অ্যালেন স্বপন বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু চারপাশে অজস্র চোখ তাকে খুঁজছে। অবিকল নিজের চেহারার এক আত্মীয়কে খুন করে সে তার পরিচয় নিয়ে ফিরে আসে নিহতের বাড়িতে। নিহতের স্ত্রী, স্বজন আর পরিচিতদের চোখে ধুলো দিয়ে সে কি ভেসে থাকতে পারবে মূলস্রোতের জীবনে? বার বার আত্মপরিচয় ঘটিত সমস্যা, লোভ, কাম আর পরতে পরতে খুলে যাওয়া রহস্যের অন্ধিসন্ধির মধ্যে দমবন্ধ-করা এই থ্রিলার আসলে পরিচালক শিহাব শাহীনের আর এক সিরিজ় ‘সিন্ডিকেট’ থেকে ছিটকে আসা কাহিনিকূটের দীর্ঘায়িত অংশ। তবে কেউ ‘সিন্ডিকেট’ না-ও দেখে থাকলেও কোনও অসুবিধা হয় না স্বপনের রোমাঞ্চকাহিনির স্বাদগ্রহণে। নাসিরউদ্দীন খান আর রাফিয়াত রশিদ মিথিলার অভিনয় এই সিরিজ়কে অন্যমাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছে।
৩. ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
কল্লোল লাহিড়ীর চর্চিত উপন্যাস ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’কে পর্দায় নিজের মতো ফুটিয়ে তোলা। বাংলা ওটিটি-র বেশির ভাগ একঘেয়ে গল্পের মধ্যে দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত এই সিরিজ় একঝলক টাটকা বাতাস। ‘নন লিনিয়ার’ কায়দায় গল্প বলেও তিন সময়কালকে নিপুণ ভাবে এক সুতোয় বেঁধেছে এই সিরিজ়। চিত্রগ্রহণ, সঙ্গীত, সম্পাদনা— সব দিক থেকেই ভালর চেয়ে ভাল। তবে সিরিজ়ের ‘তুরুপের তাস’ ইন্দুর চরিত্রে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়। ব্যয়বহুল হলেও প্রস্থেটিক মেকআপের ঝুঁকি ভাল লাগে। কিশোরী ইন্দুর ভূমিকায় নবাগতা পারিজাত চৌধুরীর অভিনয় বড্ড সাবলীল।
৪. রাজনীতি
বাংলায় ‘স্লো বার্ন থ্রিলার’ আর ক’টা হয়? আশ্চর্য নয় যে, সৌরভ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘রাজনীতি’ আলাদা করে উল্লেখের দাবি রাখবে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই রহস্যগল্প শুরু থেকেই দর্শকদের ছোটখাটো ‘ক্লু’ দিতে দিতে যায়। সিরিজ়ের মুখ্যচরিত্র রাশির (দিতিপ্রিয়া রায় অভিনীত) সঙ্গে সঙ্গে যাতে তাঁরাও রহস্য সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। এই সিরিজ়ে দিতিপ্রিয়ার অভিনয় এখনও পর্যন্ত ওটিটি-তে তাঁর সেরা কাজ। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্জুন চক্রবর্তীর অভিনয়গুণ সিরিজ়কে আরও উপভোগ্য করেছে। গল্প যে ভাবে শেষ হয়েছে, তা পরের সিজ়নের জন্য কৌতূহল জাগায়।
৫. ডাকঘর
বাংলায় থ্রিলারের ভিড়ে ভিন্নস্বাদের গল্প স্বাগত। সেখানেই আলাদা ‘ডাকঘর’। শহরাঞ্চল থেকে দূরের গ্রামে নিজের শিকড়ের সন্ধানে পৌঁছে যাওয়া এক পোস্টমাস্টারের গল্প। মুখ্যচরিত্রে সুহোত্র মুখোপাধ্যায়ের সাবলীল অভিনয় সিরিজ়ের ভিত তৈরি করেছে। সঙ্গে গ্রামজীবনের সারল্য এবং নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। অভিনয়ে দিতিপ্রিয়া রায়, কাঞ্চন মল্লিক, কোরক মুর্মু-সহ আরও অনেকে। হিন্দিতে তৈরি ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজ়ের সঙ্গে এই সিরিজ়ের তুলনা হয়েছে। সেটা অস্বাভাবিকও নয় বোধহয়। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে ‘ডাকঘর’-এর গল্প যথেষ্টই মৌলিক।