গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পর্দায় অভিনেতাদের অভিনয় কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠল, তা নিয়ে চুলচেরা হিসাব চলতে থাকে। কোথাও একটু এ দিক থেকে ও দিক হলেই সমালোচনা। অভিনয় নিয়ে প্রশংসা, সমালোচনা, বিতর্কের পাশাপাশি আলোচনায় থাকে তাঁদের সাজপোশাকও। কে কী পরলেন, কেমন করে সাজলেন— তা নিয়ে কৌতূহলী অনেকেই। কারও সাজ প্রচলিত ধারণার ছক ভেঙেছে, কেউ আবার সাদামাঠা, ছিমছাম, পরিমিত সাজেও কেড়ে নিয়েছেন দর্শকের নজর। পর্দায় চমকে দেওয়ার পাশাপাশি বছরভর যাঁরা ‘ফ্যাশন কা জলওয়া’ দেখালেন, বছরশেষে তাঁদের বেছে নেওয়ার পালা। আনন্দবাজার অনলাইনের সেরা শৌখিনীদের তালিকায় কোন পাঁচ জন রইলেন?
সায়নী গুপ্ত
কলকাতার ভূমিসূতা। বলিউডের পরিচিত মুখ। দেখতে দেখতে বলিউডে ১১ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। দক্ষ অভিনেত্রী হিসাবে তো বটেই, ফ্যাশন-সচেতন হিসাবেও নামডাক রয়েছে সায়নীর। তাঁর সাজপোশাকে সুস্পষ্ট ভাবনার ছাপ। বেড়াতে ভালবাসেন। নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে তাঁর সাজগোজও বদলে যায়! শাড়ি, গাউন ছেড়ে তখন বিকিনি, বডিকনেও দেখা যায় তাঁকে। ভারতীয় পোশাক থেকে পশ্চিমি— সব ধরনের পোশাকেই সাবলীল তিনি। পর্দার মতো ব্যক্তিগত জীবনেও ‘লুক’ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।
তাসনিয়া ফারিণ
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে ‘কারাগার’ এবং ‘আরও এক পৃথিবী’র পর তাঁকে শুধু ও পার বাংলার বললে চলবে না। এ বছরই বিয়ে করেছেন। অভিনেত্রীর বিয়ের সাজ নিয়ে কাঁটাতারের এ পারেও যথেষ্ট আলোচনা হয়েছিল! লাল মসলিন জামদানি শাড়ি, কপালে ছোট্ট লাল টিপ, হালকা লিপস্টিক, সোনার গয়না, পাহাড়ি নদীর মতো একঢাল চুলে লাল ওড়নার পরশ— ‘তিন কবুল’ বলার সন্ধ্যায় তাসনিয়ার সাজ চোখে লেগে রয়েছে দুই বাংলার অনুরাগীদের। অভিনয় কিংবা সাজগোজ— তাসনিয়া সবেতেই বেশ ছিমছাম, পরিমিত। তাঁর ইনস্টাগ্রাম বলছে, ভারতীয় পোশাকেই বেশি স্বচ্ছন্দ তিনি। তবে তাঁর বিদেশ সফরের ছবি অন্য কথা বলে। পশ্চিমি পোশাকে একেবারে বদলে যান তাসনিয়া। পোশাক নিয়ে বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষা না করলেও সাজপোশাকে স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেন।
সৌরভ দাস
সৌরভ নাকি বাংলা ইন্ডাস্ট্রির রণবীর সিংহ! অনেকে এমন বলে থাকেন। হাবেভাবে, চালচলনে, দুরন্তপনায় খানিকটা মিল আছে বটে। কিন্তু আর কিসে মিল? সৌরভের সাজগোজের সঙ্গে নাকি মাঝেমাঝে রণবীরের কিছু ‘লুক’ মিলে যায়। সৌরভ এমনিতে বেশ ফ্যাশনেব্ল। সদ্য বিয়ে করেছেন। পাঞ্জাবি-ধুতি পরেই বিয়ের আসরে ‘জামাল কুদু’তে উদ্দাম নেচেছেন। ছেঁড়াফাটা জিন্সের সঙ্গে ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা— ইদানীং সৌরভ নিজের একটা আলাদা ‘লুক’ তৈরি করেছেন। ছবির প্রিমিয়ার থেকে বন্ধুর বিয়ে, এমন সাজেই দেখা যায় তাঁকে। ‘মন্টু পাইলট’ সিরিজ়ের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে আনারকলির মতো এক ধরনের পোশাকে দেখা গিয়েছিল। তা নিয়ে বেশ সমালোচনা, ব্যঙ্গবিদ্রুপও হয়েছিল। কিন্তু সৌরভ সে সবে পাত্তা দেননি, দেনও না। নিজের মেজাজে চলেন। ছেলেদের সাজ মানেই সেই একঘেয়ে খাড়া-বড়ি-থোড়, থোড়-বড়ি-খাড়া— এই ধারণা খানিকটা হলেও ভেঙেছেন সৌরভ।
দেবচন্দ্রিমা সিংহরায়
আপাতত তিনি পর্দায় নেই, কিন্তু নিরন্তর চর্চায় আছেন। টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ দেবচন্দ্রিমা। ‘সাহেবের চিঠি’ ধারাবাহিকের পর এখনও পর্দায় ফেরেননি। পর্দায় না থেকেও চর্চায় থাকার রহস্য জানেন যদিও। তাঁকে নিয়ে গুঞ্জনের অন্যতম কারণ পোশাক নিয়ে তাঁর পরীক্ষানিরীক্ষা। দেবচন্দ্রিমার সাজ মানেই নতুন কিছু। সারা বছর বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা গিয়েছে। প্রতি বারেই আলাদা ‘লুকে’। বেড়াতে ভালবাসেন। কিছু দিন আগেই গোয়া গিয়েছিলেন। তাঁর স্নানপোশাকের ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে বলিউড নায়িকার সাহসী ফোটোশুটের।
রণজয় বিষ্ণু
ছোটপর্দার গণ্ডি ছাড়িয়ে মঞ্চে পা রেখেছেন অভিনেতা রণজয়। কিছু দিন আগে একটি মিউজ়িক্যাল ড্রামার হাত ধরে একেবারে অন্য অবতারে হাজির হয়েছেন। এমনিতে তিনি ছোট পর্দার ‘চকোলেট বয়’। তাঁর চেহারা বলে, তিনি ফিটনেস সচেতন। তাঁর ইনস্টাগ্রামের পাতা ঘাঁটলে বোঝা যায় তিনি পোশাক সচেতনও। শৌখিনতার ছাপ রয়েছে সাজগোজে। পাঞ্জাবি-পাজামায় তাঁকে যতটা সপ্রতিভ দেখায়, টি-শার্ট, পাটিয়ালার সঙ্গে রঙিন দোপাট্টাতেও তিনি ততটাই স্বচ্ছন্দ। বোঝা যায়, জুতো থেকে রোদচশমা— সব কিছুই ভাবনাচিন্তা করে বাছাই করেন। সাবেকি সাজ বা পশ্চিমি পোশাক-আশাক, সবেতেই রণজয় ভিড়ের মধ্যেও আলাদা।