Bangladesh-Student Conflict

ছাদ থেকে দেখেছি বাংলাদেশের টিভি স্টেশন, গাড়ি জ্বলছে! ভীত ভারতীয় পড়ুয়ারা

এখনও ইন্টারনেট স্বাভাবিক হয়নি। শিথিল হলেও কার্ফু এখনও একেবারে উঠে যায়নি। তার মধ্যেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

Advertisement
অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৭:১২
Image Of Bangladesh-Student Conflict

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের সময়ের ছবি। ফাইল ছবি।

সদ্য ইন্টারনেট চালু হয়েছে। তা-ও খুব ধীর। ফেসবুক এখনও পুরোদমে চালাতে পারছেন না কেউ। যাঁদের ভিপিএন আছে তাঁরা মাঝেমধ্যে তবু ফেসবুকে বিশ্বকে দেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মন খুলে আগের মতো সেখানে মনের কথা উজাড় করার মানসিকতা নেই কারও। সব কেমন যেন থমথমে। ব্যথায়, যন্ত্রণায় সকলে মূক হয়ে গিয়েছেন। আর ফোন এলে একটাই প্রশ্ন, কেমন আছে বাংলাদেশ? আমি অনেক দিন পড়শি দেশের বাসিন্দা। পরিবার ভারতে থাকেন। আমি ও পার বাংলায় একা। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা প্রথমে উদ্বিগ্ন ছিলেন। পরে ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়। জানাই, আমি ঠিক আছি। আমার বসতি ‘গুলশন’ অঞ্চলে। অন্যান্য জায়গার চেয়ে এই অঞ্চল অভিজাত। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকেন এখানে। ফলে, আমাদের নিরাপত্তা একটু বেশি। তার উপর আমার মতো যাঁরা ভারতীয়, তাঁদের জন্য বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেছিল। ভারতীয় দূতাবাস থেকে নির্দেশ ছিল, আমরা যেন বাড়ি থেকে বার না হই। যাতে কোনও ক্ষতি না হয়।

Advertisement

সেই সময় উত্তাল বাংলাদেশ। যতই নিরাপত্তার মধ্যে থাকি, ভয় তো ছিলই। ছাদে উঠে দেখতাম, দূরে গাড়ি পুড়ছে, বাড়ি পুড়ছে! বাংলাদেশের সরকারি টিভি স্টেশনের অফিসে আগুন ধরানো হয়েছে। ব্যাপক ভাঙচুর মেট্রোতেও। সেখানেও আগুন জ্বলছে। এ ভাবেই দিনের পর দিন গৃহবন্দি। কিছু খাবার বাড়িতে ছিল। ফলে, খাওয়াদাওয়া নিয়ে খুব সমস্যা হয়নি। কিন্তু ইন্টারনেট, টিভি বন্ধ। ডিশ অ্যান্টেনার দৌলতে আমার এলাকার লোক অবশ্য খবর দেখতে পেয়েছেন। স্কুল-কলেজ বন্ধ। রাস্তা খাঁ-খাঁ করছে। তার উপরে কার্ফু। আমি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন দেখিনি। এই আন্দোলনও কিছু কম নয়। যে সকল ছাত্র শহিদ হয়েছেন তাঁদের জন্য খুব খারাপ লাগছিল। চিন্তা হচ্ছিল বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে আসা ভারতীয় ছাত্রদের নিয়ে। দশ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে তখন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে, কে আগে নিরাপদে দেশে ফিরতে পারবেন। বন্দিদশায় একমাত্র সঙ্গী বলতে বই। কাজের চাপে অনেক দিন বইপত্র থেকে দূরে। উত্তাল সময়ে বেশ কয়েকটি বই পড়েছি। ইন্টারনেট না থাকায় অফিসের কোনও কাজ করতে পারিনি।

ক্রমে কার্ফু শিথিলের সময়কাল একটু একটু করে বাড়ল। যে হেতু বাংলাদেশের ওয়েব প্ল্যাটফর্মের কর্মী, তাই আমাদের আলাদা পাস ছিল। আমরা একটু বেশি সময় বাইরে থাকতে পারতাম। সেই সময় স্থানীয় দোকানগুলোয় গিয়ে দেখেছি, গৃহস্থালির সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য রীতিমতো মারামারি হচ্ছে! খোলার সঙ্গে সঙ্গে দোকানের জিনিস শেষ। তবু কোথাও যেন ছন্দ কেটে গিয়েছে। চাইলেও আগের মতো অবস্থায় এখনও ফিরতে পারছে না দেশ। এর মধ্যে মঙ্গলবার শহিদদের জন্য শোকদিবস পালন করল বাংলাদেশ সরকার। সরকারের অনুগামীদের হোয়াট্সঅ্যাপ ডিপি, ফেসবুকে শোকের কালো রং। বিরোধীরা সেই রংকে বদলে নিয়েছেন লালে।

তাঁদের যুক্তি, আরও এক বার ‘আমার দেশ রক্তে রাঙানো! আমরা কী করে ভুলতে পারি?’

(লেখক বাংলাদেশের একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট হেড। মতামত নিজস্ব।)

আরও পড়ুন
Advertisement