(বাঁ দিকে) গৌতম ঘোষ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রুদ্রনীল ঘোষ (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
বুধবার সকাল থেকে টালিগঞ্জ ফের পুরনো মেজাজে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিচালক-টেকনিশিয়ানদের দ্বন্দ্ব মিটিছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ, প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, প্রযোজক-অভিনেতা দেব অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বৈঠকে কর্মবিরতি মেটানোর পাশাপাশি আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক অনুযায়ী, বুধবার থেকে টলিউড ফের কাজের মেজাজে। বড় পর্দা, ছোট পর্দা, সিরিজ়— সব মাধ্যমের শুটিং শুরু হবে। রাহুল মুখোপাধ্যায় বসবেন পরিচালকের আসনেই। তবে তিনি শুটিং শুরু করবেন আরও সাত দিন পর। পাশাপাশি, ফেডারেশনের নিয়মকানুন নতুন করে খতিয়ে দেখতে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তিন মাসের মধ্যে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে গঠিত রিভিউ কমিটির কাছে নতুন নিয়মকানুন জমা দিতে হবে।
এই বক্তব্যের বিপক্ষে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে মুখ খুলেছেন রাজনীতিবিদ-অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। তাঁর কথায়, “শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াল? তৃণমূল বনাম তৃণমূলের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতল তৃণমূল। হারল টলিউড।” অভিনেতার আরও দাবি, মাননীয়া আসন্ন চলচ্চিত্র উৎসবের সম্ভাব্য চেয়ারপার্সন, কো-চেয়ারপার্সনদের নিয়ে বৈঠক করলেন। আর গলা তুলে দাবি জানানোর খেসারত দিলেন রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে তাঁরা নেই! অভিনেতার মতে, “এই ধরনের প্রতিবাদে ওঁদের মতোই জোরালো কণ্ঠস্বরের দরকার ছিল।” যাঁর ছবি নিয়ে এত ডামাডোল, সেই প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাও মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যে নেই, জানাতে ভোলেননি তিনি।
একই সঙ্গে ইঙ্গিত করেছেন ফেডারেশনের ভূমিকা নিয়েও। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপরে দায়িত্ব তাঁর ভাই এবং ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের নীতি বদলানোর। আদৌ তিনি কি বদলাবেন? তা-ও আবার তিন মাস পরে!” এ ক্ষেত্রে রুদ্রনীলের মত, শুটিংয়ের পাশাপাশি আলোচনা চলতে পারত। এতে হয়তো সমস্যার সমাধান হত। পর পর দু’দিন কর্মবিরতির কারণে এমনিতেই টলিউড আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বে। ফেডারেশনের নিয়মনীতি সংস্করণ বিশ বাঁও জলে। তার উপরে সামনে পুজো। অর্থাৎ, নিয়ম বদল নিয়ে যাঁরা আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁদের আশা কতটা সফল হবে, এ বিষয়ে তাঁর যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এসভিএফের পুজোর ছবির পরিচালক ডিরেক্টর্স গিল্ডের নির্দেশে কর্মবিরতিতে থাকা রাহুল মুখোপাধ্যায়। এই নিয়ে কাজিয়া শুরু। গত কালের মিটিংয়ে ‘গুপি শুট’ নিয়েও কথা হয়। কথা হয়, বর্তমানের আর্থিক বাজারের কথা মাথায় রেখে টেকনিশিয়ানদের প্রাত্যহিক পারিশ্রমিকের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার। এর পরেই টালিগঞ্জের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, এই বিষয়টি পরিচালকদের নয়। ফেডারেশনের সঙ্গে প্রযোজকেরা কাজের আগে উভয় পক্ষ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই জায়গা থেকে নিন্দকদের দাবি, রাহুলকে সামনে রেখে প্রযোজকেরা আখের গোছালেন। আর তাই প্রতিবাদের মুখ হন প্রযোজক-পরিচালক, নয় কোনও না কোনও প্রযোজনা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। রুদ্রনীল অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর পাল্টা যুক্তি, “তার কারণ, প্রযোজক-পরিচালকদের সাঁড়াশি চাপে পড়তে হয়। তাঁরা স্বাধীন ভাবে শুটিং করতে পারেন না। আবার, ছবি তৈরির টাকাটাও তাঁদের ঘর থেকেই আসে। ফলে, তাঁরা এগিয়ে এসেছেন।”
রুদ্রনীল স্বাধীন-নতুন পরিচালকদের সম্বন্ধে তাঁর ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে আক্ষেপ করেছেন, “গতকালের বৈঠকে তাঁদের কথা তালেগোলে ভুলে গেলেন সবাই। এঁরা আগামী দিনে স্বল্প বাজেটে কাজ করবেন কী করে? তাঁদের স্বার্থরক্ষা নিয়ে কেউ একটা কথাও বললেন না!” বিস্ময়কর ভাবে, ফেডারেশন বা পরিচালক বা নবান্নের বৈঠকে প্রযোজকদের সংগঠন ইম্পাকে কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে বুঝলাম না। যাঁরা অর্থ না দিলে শিল্পী বা টেকনিশিয়ানদের অন্ন জোটে না। ধারাবাহিক-ছবিকিছুই তৈরি হয় না। এই ব্যতিক্রমও চোখে পড়েছে অভিনেতার।