Goutam Ghose

বাবা গৌতম ঘোষের মতোই পড়াশোনা করে ছবি বানাই: ঈশান ঘোষ!

পরিচালক গৌতম ঘোষের ছেলে হয়েও স্বাধীনভাবে প্রথমবার ছবি তৈরি করলেন ঈশান ঘোষ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২২ ১৩:৪২
‘ঝিল্লি’র হাত ধরে পরিচালনায় এলেন পরিচালক গৌতম ঘোষের ছেলে ঈশান ঘোষ।

‘ঝিল্লি’র হাত ধরে পরিচালনায় এলেন পরিচালক গৌতম ঘোষের ছেলে ঈশান ঘোষ।

প্রঃ পরিচালনা, চিত্র পরিচালনা, সম্পাদনা, শিল্প নির্দেশনা- সব কিছু একা হাতে সামলেছেন…

ঈশান ঘোষঃ ক্যামেরার কাজ প্রায় ১০-১২ বছর ধরে করছি। সম্পাদনা আমার নেশা। সুযোগ পেলেই ফুটেজ নিয়ে জুড়তে শুরু করি। ২০১৬ য় ‘ঝিল্লি’র প্রস্তুতি শুরু হয়। ছবিটা প্রকৃত অর্থে জিরো বাজেট ফিল্ম! সবটা একা করা ছড়া উপায় ছিল না! কিছুটা একা করতেও চেয়েছিলাম। তাতে ছবি নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে! নিজের মত কাজ করা যায়!

Advertisement

প্রঃ যদি প্রযোজক পেতেন তা হলেও কি সব বিভাগ একা সামলাতেন?

ঈশান ঘোষঃ ছবির প্রাণ আসলে ইমেজ! আমি পরের পর ইমেজ তৈরি করতে করতে এগিয়েছি! ‘ঝিল্লি’ স্বাভাবিক ছন্দের ছবি! আমর কোন চিত্রনাট্য ছিল না। অ্যাকশন, কাট ছিল না! চরিত্রদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ইম্প্রোভাইস করতাম! তার পর সম্পাদনার টেবিলে ইমেজ জুড়ে গল্প তৈরি হয়েছে! তাই ‘ঝিল্লি’ একাই তৈরি করতে হত! (হাসি)

প্রঃ তা হলে আপনাদের চিত্রনাট্য, ক্যামেরার চলা ফেরা নিয়ে কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না?

ঈশান ঘোষঃ একটা প্রাথমিক ধারণা অবশ্যই ছিল। আমরা শ্যুট করতে করতে জানতাম ‘বোন ফ্যাক্টরি’টা বন্ধ হয়ে যাবে! ধাপার পাশে নতুন একটা পার্ক তৈরি হবে! এই কারখানা সেই স্বাধীনতার সময় থেকে চলে আসছে! তাই বোধ হয় প্রচুর শিশুশ্রমিক কাজ করত! লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল! শহরের তেমন কেউ জানত না! ছবির শেষ দৃশ্য শ্যুট করি ২০১৯ সালে। তত দিনে পার্কটা তৈরি হয়ে গিয়েছে! পরিযায়ী শ্রমিকরা যে যার জায়গায় ফিরে গিয়েছে! ‘ঝিল্লি’ আসলে একটা সময়ের ডকুমেন্টেশন!

প্রঃ সংলাপ?

ঈশান ঘোষঃ আমি আগে শ্যুটিং এর সময়এবং জায়গা ঠিক করে নিতাম! দিনের কোন সময় শ্যুট করছি সেটা আগে বোঝা জরুরি! তার উপর নির্ভর করছে আলো! এ বার সেখানে চরিত্রদের ফেলে দিতাম! হয়ত একটা কিউ দিয়ে দিলাম সেই অনুয়ায়ী চরিত্ররা কথোপকথন শুরু করল। ধাপায় অনবরত প্লেন উড়তে থাকে! আমি ওদের বললাম প্লেনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলো। এ ভাবেই চলতে থকল কথোপকথন...

প্রঃ বাংলা ছবিতে সাধারণত কলকাতা বলতে আমরা দক্ষিণ কলকাতা বুঝি! আপনি হঠাৎ ছবির প্রেক্ষাপট হিসেবে ধাপা বাছলেন কেন?

ঈশান ঘোষঃ ছোটবেলায় যখন ধাপার পাশ দিয়ে যেতাম সবাই নাক বন্ধ করে নিত! আমার ছোটবেলা থেকেই ধাপা ভীষণ ফ্যাসিনেটিং লাগত! কী অদ্ভুত! কাছেই বড় বড় হাইরাইজ! তার দু’কিলোমিটারের মধ্যে শহরের যাবতীয় আবর্জনার স্তূপ! কখনও ভেবে দেখেছেন ধাপা এবং আমরা অর্থাৎ নাগরিক সমাজ কী ভীষণ আন্তঃসম্পর্কীয়! আমাদের বর্জ্য ধাপায় যাচ্ছে! সেই বর্জ্যে’র উপর ধাপার শ্রমিকের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আবার সেটা রিসাইকেল হয়ে ফিরে আসছে! আসলে এই বিষয়গুলি আমাকে ভীষণ ট্রিগার করত! তাই ‘ঝিল্লি’ বানানো।

প্রঃ আপনি সব নন অ্যাক্টর’দের নিয়ে কাজ করেছেন্…

ঈশান ঘোষঃ আমার অভিনেতাদের মধ্যে বিতান অভিনয় করতে চায়। বিতান এর আগে একটা ছবিতে অভিনয় করেছে! সৌরভ নাটকের দলে কাজ! অরণ্য’কে আমি বহুদিন ধরে চিনি! অরণ্যের অদ্ভুত জিনিসের প্রতি ভালবাসা আছে! ভীষণ শিশুসুলভ ব্যাপার আছে! আর শম্ভু’দা বহুবছর বাংলা ছবিতে ক্যামিও করছে! বাবার সঙ্গেও প্রচুর কাজ করেছে! কেউ ঠিকঠাক ব্যবহার করেনি! শম্ভু’দা একজন অদ্ভুত মানুষ! শ্যামবাজারে থাকে! ট্রাফিক পুলিশদের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ! এরা সবাই আমার বন্ধু মানুষ! মজা করে কাজটা করেছি! প্রফেশনাল অ্যাক্টরদের ম্যানারিজম থাকে! আমি সেই প্যাটার্ন ভাঙতে চেয়েছিলাম! তবে একটাই অসুবিধে, নন অ্যাক্টাররা কেউ সময়ে লোকেশনে পৌঁছোয় না! (হাসি)

প্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবির ফান্ডাটা ঠিক কি বলুন তো? সত্যি কি জিরো বাজেট বলে কিছু হয়?

ঈশান ঘোষঃ আমাদের ছবিটা কিন্তু সত্যিই জিরো বাজেট। আমাদের কাছে শুধু একটা ক্যামেরা ছিল। এমনকি সাউন্ডের জন্য জুম( ইনসিডেন্টাল সাউন্ড রেকর্ডার) বা নিদেনপক্ষে একটা মাইক্রফোনও ছিল না।শ্যুট হওয়ার পরে আমরা কিছু টাকা পয়সা জোগাড় করতে পেরেছিলাম। তাই দিয়ে বাকি কাজটা এগোয়!

প্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার’দের জন্য কি পরামর্শ থাকবে?

ঈশান ঘোষঃ আমার মতে ছবির বিষয়টা এমন ভাবে নির্বাচন করা উচিত যেটা টাকা ছাড়াও সম্ভব। রিয়েল লোকেশন বাছতে হবে! এখন তো আই ফোনেও ছবি হচ্ছে! এ ক্ষেত্রে আমি শন বেকারের ‘ট্যাঞ্জেরিন’ ছবির কথা বলতে পারি! পুরোটাই আই ফোনে শ্যুট করা! ভীষণ সফল ছবি! আর ছোট ক্রু থাকলে কেউ খুব একটা নজর করে না! অনুমতির ব্যাপারগুলো এড়ানো যায়!

প্রঃ আপনার মধ্যে গৌতম ঘোষের প্রভাব প্রভাব কতটা?

ঈশান ঘোষঃ অনেকটা। বাবা যেমন একটা ছবি করব বলেই শুরু করে দেয় না! দীর্ঘসময় পড়াশুনো করে। সেটা আমার মধ্যেও আছে!

প্রঃ অনেকেই বলছেন বাবা গৌতম ঘোষ পরিচালক মণ্ডলীর একজন! তাই ঈশানকে সেরার শিরোপা পাইয়ে দেওয়া হল! কী বলবেন!

ঈশান ঘোশঃ লোকে বলবেই! লোককে আপনি থামাতে পারবেন না! কিন্তু আমি জানি, আন্তর্জাতিক বিভাগে পুরস্কৃত হওয়া কতটা কঠিন! আন্তর্জাতিক বিভাগের নির্বাচক মণ্ডলী কে হবেন সেটা ‘ফিয়াপ’ ঠিক করে! সেখানে নেপোটিজম হলে আন্তর্জাতিক নিউজ হয়ে যাবে! এ সব পাত্তা না দিয়ে পরের ছবিতে মন দেওয়া ভাল।

প্রঃ পরের ছবির জন্য প্রস্তুত?

ঈশান ঘোশঃ হ্যাঁ চলছে তো বটেই! কিন্তু এখনও কিছু বলার মত অবস্থায় আসেনি! দেখ যাক! (হাসি)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আরও পড়ুন
Advertisement