‘ঝিল্লি’র হাত ধরে পরিচালনায় এলেন পরিচালক গৌতম ঘোষের ছেলে ঈশান ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
‘রাত দিন সাত দিন সিনেমায় ডুব দিন’-এর পালা সাঙ্গ। ১ মে শেষ হল ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। রবীন্দ্রসদনে কানায় কানায় পূর্ণ সভাগৃহে যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন চেয়ারপার্সন রাজ চক্রবর্তী। কিন্তু বিসর্জনেই যে পরের উৎসবের আবাহনের সুর, সে কথা মনে করাতে ভুললেন না বিধায়ক-পরিচালক। তাঁর দাবি, ২৭তম চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হচ্ছে। পূর্ণ হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ। তাই এ বছরের উৎসব ছিল ‘রায় ময়’!
মঞ্চে তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। উপস্থিত ছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ, অরিন্দম শীল, প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী, হরনাথ চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, রাইমা সেন, সুদেষ্ণা রায়, অনন্যা চক্রবর্তী প্রমুখ।
উৎসব শেষ হলেও উন্মাদনার রেশ নন্দনের সিইও এবং উৎসবের আধিকারিক মিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। তিনিও রাজের সুরেই সুর মিলিয়ে বলেন, ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো!’
একই সঙ্গে উৎসবের বিদায়ী মঞ্চে ঘটেছে নতুন প্রতিভার আত্মপ্রকাশ। সেরা আন্তর্জাতিক ছবি ‘ঝিল্লি’র হাত ধরে পরিচালনায় এলেন পরিচালক গৌতম ঘোষের ছেলে ঈশান ঘোষ। এই ছবিতে ছেলে ক্যামেরার পিছনে। বাবা প্রযোজক! উৎসবের আরও এক আবিষ্কার পরিচালক অমর্ত্য ভট্টাচার্য। তাঁর পরিচালিত ছবি ‘আদিকু গোদার’ তাঁকে ‘সেরা পরিচালক’-এর সম্মান এনে দিয়েছে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় সাহেব চট্টোপাধ্যায়।
সমাপ্তি দিবসেও উৎসবপ্রিয় বাঙালি সকাল থেকে রাত যথারীতি নন্দন চত্বরে। এ দিন প্রিমিয়ার হয় বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানিত, অপর্ণা সেনের ছবি ‘দ্য রেপিস্ট’-এর। আক্ষরিক অর্থেই নন্দন ১ প্রেক্ষাগৃহে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ছবির মুখ্য চরিত্র, অভিনেত্রী কঙ্কনা সেনশর্মা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছবির পরিচালক, প্রযোজক। ছবি শুরু হতেই আসনের অভাবে মাটিতে দলে দলে দর্শক। দর্শকদের আবেগে আপ্লুত অপর্ণা-কঙ্কনা। বরাবর সমাজের জ্বলন্ত বিষয় উঠে আসে পরিচালকের ছবিতে। এ বার তিনি তুলে ধরেছেন ধর্ষিতার যন্ত্রণা। অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াতে গিয়ে কী ভাবে পুরুষের লালসার শিকার হন কলেজের দুই অধ্যাপিকা; প্রশাসন, সমাজ কী ভাবে তাঁদের দগদগে ক্ষত প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে আরও দগদগে করে তোলে, তা-ই উঠে এসেছে ছবিতে।
সিনেমা যে উৎসবের প্রাণভোমরা, সেই উৎসব যে শেষ হবে ছবি দেখিয়েই, তা বলাই বাহুল্য। এ দিন নন্দন ১ এবং নন্দন ২ প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ যথাক্রমে অমর্ত্য এবং ঈশানের সৌজন্যে। তাঁদের দুই ছবিই ছিল এ দিনে শেষ আকর্ষণ।