Celebrity Interview

কাজ নিয়ে আলোচনা করার জন্য জিতুর কাছে ডেটই পাই না: নবনীতা

এক বছর পর ছোট পর্দায় ফিরছেন অভিনেত্রী নবনীতা দাস। অভিনেতা জিতু কমলের সঙ্গে বিয়ের পর তুলনায় কমই পর্দায় দেখা যায় তাঁকে। কেন? খোলসা করলেন নবনীতা।

Advertisement
উৎসা হাজরা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ১৫:১২
Nabanita Das

অভিনেত্রী নবনীতা দাস। ছবি: সংগৃহীত।

অনেকেই মনে করেন, স্বামী-স্ত্রী এক পেশায় থাকলে ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব পড়তে পারে। তবে এমনটা মনে করেন না অভিনেত্রী নবনীতা দাস। ‘অপরাজিত’-এর পর থেকে তাঁর স্বামী জিতু কমলকে নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে দর্শকমহলে এবং ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে। কিন্তু ছোট পর্দার নায়িকা নবনীতাকে প্রায় ভুলতে বসেছিলেন দর্শক। যদিও এর মাঝে ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ সিরিয়ালে ‘মা তারা’র চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কাজের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কখনও কি দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে? একে অন্যের অনুপ্রেরণা, না কি প্রতিযোগী? জিতু-নবনীতার সম্পর্কের অন্দরের খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রশ্ন: কত দিন পর আবার নতুন সিরিয়াল শুরু করছেন?

Advertisement

নবনীতা: আমি তো চ্যানেলের চুক্তিতে ছিলাম। প্রায় এক বছর হয়ে গেল কিছু করিনি। অনেক দিন পর শুরু হচ্ছে আমার নতুন সিরিয়াল ‘বিয়ের ফুল’। সেই চুক্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। তার আগে সবটাই চ্যানেল ঠিক করত। আমায় কোন চরিত্রে ভাল লাগবে কিংবা লাগবে না, তা-ও ছিল চ্যানেলের হাতে। জানুয়ারিতে নিজের মতো কাজ করার স্বাধীনতা যখন পেলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে ‘কলি’ চরিত্রটার সুযোগ আসে। এই মুহূর্তে আমার জন্য এটাই সঠিক চরিত্র বলে মনে হয়েছিল।

প্রশ্ন: কেন মনে হল ‘কলি’ চরিত্রটা সঠিক?

নবনীতা: আমি আগে রোম্যান্টিক, পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু কমেডি করতে কেউ দেখেননি আমায়। এই সিরিয়ালে এটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। আগে কখনও কমেডি চরিত্রে অভিনয় করিনি। সেটা যে কী কঠিন কাজ, অভিনয় করতে গিয়ে বুঝতে পারছি। আর আমাদের টিমে রয়েছেন দুলাল লাহিড়ি, রিমঝিম মিত্র-সহ আরও অনেক অভিনেতা। তাঁদের থেকে শিখতেও পারছি। সব দিক থেকে আমারই লাভ। আর মজার বিষয় হল সাধারণত দেখা যায়, একটা মেয়ের পিছনে একটি ছেলে ঘুরেই বেড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুরো উল্টো। এই বিষয়টাও আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। খুবই স্পষ্টবক্তা চরিত্র।

Nabanita Das and Raja Goswami

নবনীতা-রাজা। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: নবনীতাও কি বাস্তবে এমনই মানুষ?

নবনীতা: এখন আর কী বলব! বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য এমনটাই হয়েছিল। এই সিরিয়ালটার গল্পের সঙ্গে আমার নিজের জীবনের অনেক মিল আছে। আমিও স্পষ্টবক্তা। জিতুকে আমিই প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দিই। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রথম উদ্যোগ আমিই নিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: রাজা গোস্বামীর সঙ্গে আগেও অন্য সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। পুরনো সমীকরণ কাজে লাগছে?

নবনীতা: হ্যাঁ, সে তো বটেই। রাজার সঙ্গে আমি আগেও কাজ করেছি। যে কোনও ক্ষেত্রেই যদি এক বার একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাই এবং সেই বোঝাপড়াটা তৈরি হয়ে যায়, তা হলে আর কোনও সমস্যা হয় না। রাজা আর আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

প্রশ্ন: এক বছর পর অভিনয়ে ফিরলেন। মুখ্য ভূমিকা ছাড়া করবেন না বলেই কি অপেক্ষা করছিলেন?

নবনীতা: না, আমি এ সব ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী নই। নায়িকাই হতে হবে আমায়, তেমনটা নয়। তবে ভাগ্যক্রমে সব সময়ই আমি মুখ্য চরিত্রের সুযোগই পেয়েছি। এই নতুন সিরিয়ালে যদিও নায়ক-নায়িকা ছাড়া বাকিদের সকলকে পার্শ্বচরিত্র বলা যাবে না। এটা একটা পারিবারিক গল্প। এখানে প্রতিটা চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ।

Nabanita Das and Jeetu Kamal

প্রশ্ন: জিতুর সঙ্গে কাজ নিয়ে আলোচনা হয়?

নবনীতা: ওরে বাবা! জিতুর তো ডেটই পাই না আমি। আমার সঙ্গে জিতুর খুব কম কথা হয়। শেষ তিন-চার মাসে তো তেমন ভাবে কথাবার্তাই হয়নি। আমরা বিদেশে গেলাম শুটিংয়ের জন্য। ওর রুটিন আর আমার দৈনন্দিন জীবনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমাদের সিরিয়ালের একটি নিয়মে বাঁধা সময় থাকে। সিনেমার ক্ষেত্রে তা হয় না। প্রতি দিন কোনও না কোনও কাজ। এক এক দিন তো বাড়িতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিং চলে। ওর প্রজেক্ট নিয়ে আগে অবশ্য একটু আলোচনা হত। এখন সেই আলোচনাটাও অনেকটা কম হচ্ছে।

প্রশ্ন: জিতু পর পর সিনেমা করছেন, আপনি কেন ছোট পর্দায় আটকে রাখছেন নিজেকে?

নবনীত‌া: সব কিছুরই একটা সময় থাকে। আর এমনটা নয় যে, জিতু পাঁচ বছর আগে বড় পর্দায় চেষ্টা করেনি। অবশ্যই করেছে। সেই সময় হয়তো ওর তেমন প্রস্তুতি ছিল না। আমারও কিছু প্রস্তুতি দরকার মনে হয়।

প্রশ্ন: অর্থাৎ বড় পর্দায় কাজ করার জন্য আপনি এখন প্রস্তুত নন?

নবনীতা: দেখুন মাঝে আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকে আমি কিন্তু তেমন ভাবে কোনও বিরতি পাইনি। বিয়ের পরেও টানা সিরিয়াল চলেছে। তার পর লকডাউন হয়েছে। জিতুর নতুন নতুন সুযোগ এসেছে। তার প্রস্তুতি নিতে দেখেছি। মাঝে এই যে বিরতিটা পেলাম এই সময়টাকেই আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। অভিনয় থেকে আমার হাঁটাচলা, কথা বলা সব দিকেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। ভাবারও সময় পেয়েছি। এখন আমি আপনার সঙ্গে যে ভাবে কথা বলছি, সেটাও শিখেছি। আমার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি। তা হলে আরও অনেক বেশি সুযোগ পাব।

প্রশ্ন: জিতু বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম চর্চিত অভিনেতা। আপনাদের মধ্যে কখনও ইগোর লড়াই হয়েছে?

নবনীতা: ইন্ডাস্ট্রিতে আরও অনেক দম্পতি কাজ করছেন। প্রত্যেকের সমীকরণ আলাদা। আমার আর জিতুর মধ্যে বয়সের পার্থক্য ১০ বছরের। ইন্ডাস্ট্রিতেও ও আমার থেকে অনেক বছরের সিনিয়র। সেখানে ইগো আসার কোনও প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া আমাদের দু’জনের ভাবনাচিন্তাও আলাদা। একে অন্যের উন্নতিতে হিংসে হওয়া বা ইগো আসার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কাজ শেষ হওয়ার পর আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। ওর পরিশ্রম আমার চেয়েও অনেক বেশি। কারণ, আমার আগে থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে লড়াই করে চলেছে। আর আমাদের কাজের বাইরেও জগৎ আছে। তাই এ সব নিয়ে ভাবার সময়ই নেই। আমি এবং জিতু ভাল আছি ঈশ্বরের আশীর্বাদে।

আরও পড়ুন
Advertisement