Bhog

‘ভোগ’ না খেয়ে মাছ-মাংসে মজে পরমব্রত! সাত্ত্বিক অনির্বাণ ডুব দিলেন কালো কফিতে

পরমব্রত ভোগে বিশ্বাসী না উপভোগে? জবাব এল, “পাত্র বুঝে উপায় বদলায়! কোনওটা সরাসরি আপন করে নেওয়ার মতো। কোনওটা ‘ভায়া...!”

Advertisement
উপালি মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৮
‘ভোগ’ সিরিজ়ের শুটিংয়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

‘ভোগ’ সিরিজ়ের শুটিংয়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

রবিবার সকলের ছুটি। কেবল ছুটি নেই অনির্বাণ ভট্টাচার্যের! ব্যস্ত অফিসপাড়া ঝিমিয়ে। মিঠেকড়া রোদ মেখে কিছু ফলবিক্রেতা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এমন ছুটি-ছুটি পরিবেশে বেচারা অনির্বাণ অফিসের কিউবিকলে বন্দি! ল্যাপটপের উপরে উপুড় হয়ে পড়ে মনোযোগ দিয়ে হিসাব মেলাচ্ছেন। তাঁর মনোযোগ দেখে বাকি সহকর্মীরা কিঞ্চিত বিস্মিত, বিমূঢ়।

Advertisement

বিস্মিত, বিমূঢ় অভিনেতার ‘বস্’-ও। লম্বা ছুটি দিয়েছিলেন অধস্তন কর্মীকে। ছুটি ফুরোনোর আগেই তিনি হাজির! অনির্বাণের অবশ্য সে সবে মন নেই। হাফহাতা সোয়েটার, ধূসর রঙের পুরোহাতা শার্ট আর ট্রাউজ়ার। চুল উল্টে আঁচড়ানো। মুখে অবিন্যস্ত দাড়ি-গোঁফ, তাতে নুন-মরিচের ছোঁয়া উধাও! সব কালো কুচকুচে। গলায় আবার লকেট। এই সাজে অফিসে।

আপনি নাকি সিএল, পিএল-সহ ছুটির তালিকা মেলাচ্ছেন? প্রশ্ন শুনে চোখ তুলে তাকিয়েই মৃদু হাসি। বললেন, “বেশ লাগছে।” ফের মনোযোগী কাজে। অফিস জুড়ে নীরবতা। যাঁরা অনির্বাণের আশপাশে তাঁরা দু-একবার তাঁর দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। তার পরেই কাজে ডুবেছেন। আইটি অফিস মানেই যেন যে যার সে তার।

অভিনেতার জীবন অনিশ্চিত। সম্ভবত তাই বুঝি অনির্বাণ পেশা বদলালেন? বরাবরের মেধাবী ছাত্রটি আইটি সেক্টর বেছে নিয়েছেন?

একেবারেই না। অনির্বাণ যা ছিলেন তাই-ই রয়েছেন। তিনি অভিনয় করছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের আগামী ভৌতিক সিরিজ় ‘ভোগ’-এ। কাহিনি অভীক সরকারের। প্রযোজনায় হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্ম। গল্পের নায়ক অতীন মুখোপাধ্যায়ের জীবন ওলোটপালট এক দেবীমূর্তির দাপটে। একের পর এক অমঙ্গল। পালটে যায় অতীন নিজেও। এই চরিত্রেই অভিনয় করছেন অনির্বাণ। সিরিজ়ের সিংহভাগ শুটিং শহরের নানা জায়গায়। অভিনেতা নির্বাচক অনিমেষ বাপুলি। রবিবার অতীনের অফিসের দৃশ্যগ্রহণ ছিল। তাই অফিসপাড়ায় হাজির পুরো দল। উপস্থিত আনন্দবাজার অনলাইনও।

অফিসকর্মী অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

অফিসকর্মী অনির্বাণ ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।

রাজর্ষি দে-র ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ উত্তর আসবে’ ছবিতেও তো একই গল্প দেখানো হয়েছিল?

প্রশ্ন ছিল পরিচালকের কাছে। ঘিয়েরঙা গোল গলার টিশার্ট আর জিন্‌স। এলোমেলো চুলে আঙুল বোলাতে বোলাতে পরমব্রত বললেন, “রাজর্ষির ছবিতে চারটি গল্প ছিল। তার একটি ‘ভোগ’। এই সিরিজ়টি শুধুই এই গল্প নিয়ে।” একটি শট নেওয়ার পরে তখন দুপুরের খাওয়ার বিরতি। শুনশান অফিস ঘর দিয়ে কথা বলতে বলতে লম্বা পায়ে হাঁটছেন তিনি। বললেন, “আমার ভূতের গল্প ভাল লাগে। বিশেষ করে পৌরাণিক ভূতের গল্প, ছবি বা সিরিজ়। ‘পর্ণশবরীর শাপ’ সিরিজ় প্রশংসিত হওয়ায় উৎসাহ বেড়েছে। দুটো পর্বই সফল। সেটি তো থাকছেই। এটি আর একটি। যদিও ‘নিকষ ছায়া’ করার আগে থেকে এই গল্পটি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল।” পরম জানিয়েছেন, আগামী দিনে অভীকবাবুর গল্প নিয়ে আরও কাজ করবেন।

অনির্বাণ কেন? “অভিনেতাকে এর আগে কেউ এই ভূমিকায় দেখেননি বলে। ‘অতীন’ চরিত্রটি মনস্তত্ত্বের দিক থেকে অত্যন্ত জটিল। যা অনির্বাণ ছাড়া অন্য কেউ ফোটাতে পারবেন না। এ ছাড়া, অনেক দিন শুধু ‘অভিনেতা’ অনির্বাণকে দর্শকেরা পাননি। ওর সেই দিকটাও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলাম। ওর যা বয়স সেই বয়সের চরিত্রই ওকে দেওয়া হয়েছে। আর অনির্বাণ নিজেও ভৌতিক কাহিনির পোকা। সব মিলিয়ে তাই...” কথা শেষ না করে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন পরমব্রত। জবাব যেন তাঁর চোখের তারায়। ছবিতে একদম আলাদা চরিত্রে দেখা যাবে পার্নো মিত্রকে। বরাবরের আধুনিকা, উচ্চশিক্ষিতা, গ্ল্যামারাস চরিত্রে অভিনয় করে আসা অভিনেত্রীকে দেখে না দর্শকেরা ভয় পেয়ে যান! মৃদু হেসে জানালেন পরিচালক। দেখা যাবে সুদীপা বসু, রজতাভ দত্তকেও। সিরিজ়মুক্তি সম্ভবত চলতি বছরের ডিসেম্বরে।

কথোপকথনের মধ্যেই শুটিংয়ের জায়গা ছেড়ে খাওয়ার জায়গায়। সারি দিয়ে টেবিল- চেয়ারে সকলে বসে খাচ্ছেন। সকলের মধ্যে সকলের মতো ভাত, মুসুরির ডাল, উচ্ছে-আলুভাজা, শাকের ঘণ্ট, ফুলকপি দিয়ে মাছ, মুরগির পাতলা ঝোল, চাটনি, দই খেলেন পরমব্রত। বাকি বাঙালির মতোই আঙুল চাটতে চাটতে! সিরিজ়ের নামটি যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক, সিরিজ়টিও কি বড়দের? ‘ভোগ’ বললে অনেকে অনেক কিছু বোঝেন। চেয়ার সরিয়ে উঠতে উঠতে জবাব দিলেন, “ভোগ কিন্তু ঈশ্বরের প্রসাদকেও বোঝানো হয়।” কথাশেষে আবারও হাসি, “এর বেশি বললে গল্প বলা হয়ে যাবে।”

পরমব্রত যখন আঙুল চেটে খাচ্ছেন অনির্বাণ তখন কোথায়? তিনি পোশাক পরিবর্তনের ঘরে, ‘অতীন’ চরিত্রে ডুবে। খাওয়া মিটতেই ফের শুটিং শুরু। আরও একবার অফিস ঘরের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি। প্রথম অনির্বাণকে পরিচালনা করে কেমন লাগছে? দু’জনেই পরিচালক দু’জনেই অভিনেতা। শট নিয়ে পরমব্রত বললেন, “আমার বেশ লেগেছে। পরিচালক হওয়ায় অনির্বাণ ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলটাও বোঝে। কাজ করে খুব আরাম।”

আর দু’দিনের শুটিং বাকি। এক দিন হবে বেলগাছিয়া রাজবাড়িতে। আর এক দিন অ্যান্টিক শপের সেট বানিয়ে শুটিং হবে।

পরিচালক পরমব্রত।

পরিচালক পরমব্রত। নিজস্ব ছবি।

লম্বা শটের পরে আবারও বিরতি। মন্থর গতিতে অনির্বাণ ফের সাজঘরে। অভিনয় ছেড়ে চাকরি করতে কেমন লাগছে?

অভ্যর্থনা করে সামনে বসিয়ে একগাল হাসলেন, “এ তো এক দিনের জন্য। আমি যা তাই-ই রইলাম।” আপনারও তো ভূত প্রিয়, পরমব্রতর মতো? “যা বলেছেন। ভয় পেতে ভালবাসি। আগামী দিনে হয়তো কাজও করব এই নিয়ে।” তখন নিশ্চয়ই ক্যামেরার সামনে পরমব্রত থাকবেন? ‘অতীন’-এর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন অভিনেতা। হা-হা হাসলেন। হলঘর মাপের ঘরটিতে তার প্রতিধ্বনি। বললেন, “এখন থেকে তা কী করে বলি? দেখা যাক।” আপনি ভূতের দুনিয়ায়। এ দিকে, বাস্তবে যে শিল্পীরা আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁরা অনেকে ভূত ছাড়াই ভয় পাচ্ছেন ...

সঙ্গে সঙ্গে সজাগ তিনি। বললেন, “সেই বিতর্কিত প্রশ্ন তো? আপনাকে জবাব দিই। আর এক বছর ধরে তার মাসুল গুনি— না? এই মুখ বন্ধ করলাম।” সামনে রাখা কালো কফির প্রতি কী গভীর মনযোগ তাঁর।

পরমব্রত তখন পরের শট নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন। আপনি ভোগে বিশ্বাসী না উপভোগে? প্রশ্ন শুনে নিমেষে মুখচোখ লাল! ওই অবস্থাতেই পাল্টা প্রশ্ন, “আপনার কাছে দুই উপায়ের সংজ্ঞা কী?” ‘‘একটি সরাসরি, অন্যটি ‘ভায়া’।’’ জবাব শুনে হাসির ঝিলিক। দাবি, “পাত্র বুঝে উপায় বদলায়! কোনওটা সরাসরি আপন করে নেওয়ার মতো। কোনওটা আপনার কথা অনুযায়ী.... ‘ভায়া...!”

Advertisement
আরও পড়ুন