গৌরব-দেবলীনা। ছবি: সংগৃহীত।
গৌরব মানুষটা বাইরে ও ভিতরে একেবারে আলাদা। বিয়ের ৪ বছর পার করলাম আমরা। ৪৮টা মাস। যদিও বিয়ের পর প্রথম প্রথম ওকে বুঝতে অসুবিধে হয়েছিল। বিয়ের পর দু’বার চেষ্টা করেছিলাম গৌরবের জন্মদিন পালন করার। লোকজন ডেকে পার্টির আয়োজন করে। কিন্তু খুশি তো হয়নি, বরং উল্টোটাই হয়েছে। এখন বুঝি, ও মানুষটাই ভীষণ আলাদা। পার্টি করা বা বিস্তর হইহই করা, এ সব ওর পছন্দ নয়। বাইরের লোকের সামনে ও যেন নিজেকে খোলসে জড়িয়ে নেয়। এখন এতগুলো বছর পর জন্মদিনে ওর এই আয়োজনহীন উদ্যাপনের কারণটা খুঁজে পেয়েছি।
গৌরব মানুষটা চাপা স্বভাবের। নিজের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করে। তাই বলে ও মোটেই উদাসীন নয়, পরিবারের সকলের প্রতি ওর ভীষণ দায়িত্ববোধ। আর সেটাই কারণ আড়ম্বরহীন জন্মদিন পালনের। এই দিনটায় ও বাবাকে বড্ড মিস্ করে। তাই আমার মা-বাবা-শাশুড়ি-ননদদের নিয়ে বাড়িতেই কাটবে গৌরবের জন্মদিন। এমনিতেই খুব স্বাস্থ্য সচেতন, ভীষণ রকম নিয়ম মেনে চলতে ভালবাসে ও। সঠিক সময়ে খাওয়া থেকে সঠিক সময়ে ঘুম। অভ্যেসটা অবশ্যই ভাল। ওর পাল্লায় পড়ে আমিও এখনই সাড়ে ১০টায় ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু ওর জন্মদিনটা প্রতি বছরই প্রায় জামাইষষ্ঠীর গায়ে গায়ে থাকে। সেই কারণে ক'টা দিন শুধুই ‘চিট ডে’।
শরীরচর্চার সফর আমাদের দু’জনকে কাছাকাছি এনেছে ঠিক, তাই বলে যে আমরা একে অপরের ব্যক্তিগত জায়গায় হস্তক্ষেপ করি, এমন নয়। সম্পর্ককে আমরা দু'জনেই অনেকটা জায়গা দিই। সে কারণে আমাদের জিমও আলাদা। আমি তো বহু বছর আগে এই সফরটা শুরু করেছিলাম। তার সঙ্গে গৌরবের যে নিবিড় যোগ রয়েছে, তেমনও নয়। তবে এক জন ওয়ার্কআউট সঙ্গী পেয়েছি, সেটা বেশ আনন্দের। আমার জীবনে এই সঙ্গী আসায় কফি টেবিলে বসে সিনেমার বদলে জিমে কী করলাম, তা নিয়েই বেশি কথা হয়। সেটা আমাদের দু’জনের একান্ত সময়।
তবে বিয়ের এই ক'বছরে বুঝেছি, গৌরব এমন একজন মানুষ, যে কোনও জিনিসের শেষ অবধি না দেখে হাল ছাড়ে না। কখনও সেটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। এটার একটু বদল আনার চেষ্টা করেছি, যদিও পুরোটা পারিনি। হয়তো ওকে পুরো বদলাতে চাই না। এটাই মানুষটার স্বভাব। তবে খানিক সমতা বজায় রাখতে শিখিয়েছি। সিঙ্গল থাকলে নিজের মর্জি মতো চলা যায়, কিন্তু বিয়ে করলে অনেকগুলো দিক মাথায় রাখতে হয়।
আমরা অন্য তারকা দম্পতিদের মতো নই। একে অপরকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া, কিংবা সর্ব ক্ষণ রিল বানানো, সে সবের ধারেকাছে যাই না। কোথাও ঘুরতে গেলেও আমার বরকে দিয়ে রিল বানানো সম্ভব নয়। প্রেমে গদগদ হয়ে থাকার মতো দম্পতি নই। তাই জন্মদিনে উপহার দেওয়ার বিষয়ে বিরাট কোনও সারপ্রাইজ় বা চমকে বিশ্বাসী নই। প্রথম থেকেই একে অপরের প্রয়োজনীয় জিনিসই দিয়েছি। এ বার যেমন গৌরব আমার কাছ থেকে একটা রোদচশমা ও ট্র্যাভেল ব্যাগ নিয়েছে। শেষে এটাই চাইব, যাতে ও জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে মন ভরে উদ্যাপন করতে পারে।