Karar oi louho kopat controversy

রহমানের হাতে বিকৃত নজরুলগীতি! ঠিক যেন দুঃস্বপ্ন, বলছেন টলিউডের সঙ্গীত পরিচালকেরা

‘পিপ্পা’ ছবিতে কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিতে নতুন ভাবে সুর প্রয়োগ করেছেন এ আর রহমান। তা ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৩
Composers Debojyoti Mishra and Prabuddha Banerjee shares their take on the recent Nazrul Geeti controversy created by A R Rahman in the film Pippa

(বাঁ দিক থেকে) দেবজ্যোতি মিশ্র, এআর রহমান, প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

শুক্রবার ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে ‘পিপ্পা’। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ আর রহমান। ছবিতে কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সেই গানের সুর এবং খোলনলচে গিয়েছে বদলে। ফলে সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। নজরুল অনুরাগীদের দাবি, রহমানের মতো বিচক্ষণ মানুষের থেকে এই ভুল কাম্য নয়। এই ভাবে গানের সুর পাল্টে ফেলা কতটা যুক্তিযুক্ত? দেবজ্যোতি মিশ্র এবং প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়— বাংলা সঙ্গীত জগতের দুই বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালকের সামনে প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

এই বিষয়টি প্রথম দেবজ্যোতির নজরে আনে আনন্দবাজার অনলাইন। রহমানের সঙ্গে দেবজ্যোতির বন্ধুত্বের কথাও কারও অজানা নয়। তাই কাজী সাহেবের গানের এই সংস্করণ আরও বেশি করে ব্যথিত করেছে দেবজ্যোতিকে। বললেন, ‘‘আমার যেন মনে হচ্ছে একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি! মনে হল স্বপ্ন ভেঙে উঠে দেখব আসলে এ রকম কিছু ঘটেনি।’’ এরই সঙ্গে দেবজ্যোতি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দিকে আলোকপাত করলেন। বললেন, ‘‘এই গানটি তো কবিতা আকারেও রয়েছে। তা হলে কি আমার বন্ধু রহমানকে শুধু কবিতাটি দেওয়া হয়েছিল? তার পরেও কিন্তু এটা অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ।’’ তাই এই সুর রহমান নিজে করেছেন কি না সেই প্রশ্নও দেবজ্যোতির মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আদালতে কি রহমান সেটা স্বীকার করবেন যে, এটা তাঁর করা সঙ্গীত?’’ দেবজ্যোতির মতে, রহমানের সংস্করণটি চালু লোকগান তৈরির প্রয়াস, যেটা ভাসানে বাজানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। দেবজ্যোতি বললেন, ‘‘যদি তাঁকে গানটি নতুন ভাবে সুর করতে দেওয়া হয়, তা হলেও বলতে পারি আমার বন্ধুটি প্রকৃতিস্থ নন।’’

কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটির মধ্যে বিদ্রোহ এবং বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে। দেবজ্যোতি বললেন, ‘‘আজকে গাজা, প্যালেস্টাইনে যা ঘটে চলেছে, সেখানে মনে হয় যদি শামিল হতে পারতাম। বাংলা থেকে কেউ এগিয়ে এলে কিন্তু সবার আগে কাজী নজরুল ইসলাম এবং তাঁর এই গান এগিয়ে আসত।’’ কথা প্রসঙ্গেই দেবজ্যোতি বললেন, ‘‘আমি আধুনিকতায় বিশ্বাসী। আজকে জন লেননের ‘ইম্যাজিন’ গানটির সুর পাল্টে দেওয়াই যায়। কিন্তু নতুন কাজটিকে অন্তত আগেরটির সমগোত্রীয় হতে হবে বা তাকে ছাপিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে তো সেটা হয়নি। এটা নজরুল সাহেবের প্রাপ্য ছিল না।’’ দেবজ্যোতি নিজেও বাঙালিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে শামিল হওয়ার অনুরোধ করতে চান। পাশাপাশি জানালেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি তাঁর নজরে আনবেন।

জাতীয় পুরস্কার জয়ী সঙ্গীত পরিচালক প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ও রহমানের এই ‘কীর্তি’কে মেনে নিতে পারছেন না। তবে সমালোচনা করার আগে তিনি বাংলায় আলোকপাত করতে চাইলেন। বললেন, ‘‘কপিরাইট নেই বলে বিগত কয়েক বছরে রবীন্দ্রসঙ্গীতে শিল্পীরা তো যথেষ্ট স্বাধীনতা নিচ্ছেন! এর মধ্যে বহু প্রতিষ্ঠিত শিল্পীও রয়েছেন।’’ প্রবুদ্ধ প্রশ্ন তুলতে চাইলেন। জানালেন পাশ্চাত্যে যাঁরা বাখ, বিঠোভেন বা মোৎজ়ার্টের সৃষ্টিকে বাজান, তাঁরা সেখানে নিজেদের সুর প্রয়োগ করেন কি? প্রবুদ্ধ বললেন, ‘‘প্রশ্নটা কোনও শিল্পীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার নয়, সার্থকতা সেখানেই, যদি আমি নিজের আবেগ এবং নিষ্ঠা দিয়ে মূল সৃষ্টিকে ফুটিয়ে তুলতে পারি।’’

রহমানের এই সঙ্গীতায়োজনকে প্রবুদ্ধ ‘ছেলেমানুষি’ হিসেবে উল্লেখ করতে চাইলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আজকে ওঁর ‘রোজা জানেমন’ গানটির আমি যদি বাউল আঙ্গিকে সঙ্গীতায়োজন করি, সেটা নিশ্চয়ই শ্রোতাদের পছন্দ হবে না। তাই সবার আগে শিল্পীকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত।’’ কথা প্রসঙ্গেই নিজের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করলেন ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক। প্রবুদ্ধ বললেন, ‘‘এটা ছবির জন্য তৈরি হয়েছে। ফলাও প্রচার হবে। ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবাদ না করলে মুশকিল।’’ রহমান বলেই আজকে সকলে প্রতিবাদ করছেন বলে মনে করেন প্রবুদ্ধ। তাঁর মতে, বাংলাতেও এই জিনিস দিনের পর দিন ঘটে চলেছে। প্রবুদ্ধ বললেন, ‘‘নিজেরা সচেতন না হলে ভবিষ্যতে আগামী প্রজন্ম তো ভুল জিনিসটিকেই ঠিক বলে শিখবে। আসল রবীন্দ্রসঙ্গীত বা নজরুলগীতি তো হারিয়ে যাবে!’’

আরও পড়ুন
Advertisement