সারোগেসিকে টলিউডও কী আপন করতে চলেছে? কী বলছেন বাংলার তারকারা?
হলিউডের পরে ভারতের বিপ্লবের ক্ষেত্র যেন বলিউড। বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, এক ছাদের নীচে জীবন যাপন, সমকামিতা এবং #মি টু- সবেতেই প্রথম পদক্ষেপ মায়ানগরীর। সারোগেসি বা গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই। শাহরুখ খানের ছোট ছেলে আব্রামের জন্ম এ ভাবেই। শুক্রবার মধ্য রাতে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া-নিক জোনাস জানিয়েছেন, একই পদ্ধতিতে মা-বাবা হয়েছেন তাঁরাও।
সারোগেসিকে টলিউডও কী আপন করতে চলেছে? কী বলছেন বাংলার তারকারা?
প্রশ্ন শুনেই আনন্দবাজার অনলাইনকে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘টলিউডের বাইরেও অনেক খ্যাতনামী এই পদক্ষেপ করেছেন। যাঁদের মধ্যে অনিন্দিতা সর্বাধিকারী, ইলিনা বণিক অন্যতম। অনিন্দিতা ছবির পরিচালক। ইলিনা চিত্রকর। ওঁরা আরও সাহসী। ওঁরা একা মা! তার পরেও কেন শুধু টলিউডকে ঘিরে এই প্রশ্ন? কে, কী ভাবে মা-বাবা হবেন, সেটা দম্পতির একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আমার মতে, এখানেও হলি-বলি-টলির ভাগাভাগি ভীষণ হাস্যকর।’’ ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘বাড়িওয়ালি’ ছবির ‘মালতি’র আরও দাবি, অনিন্দিতা বা ইলিনার মতো আরও অনেকেই হয়তো এই বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যেই মা-বাবা হচ্ছেন বা হয়েছেন। তাঁরা তারকা নন। তাই তাঁরা প্রচারের আলোয় নেই। সুদীপ্তার মতে, সংবাদমাধ্যমের উচিত এমন মানুষদের কথা আগে জানানো। তারকা হলেই শুধু তাঁদের খবর প্রকাশ্যে আসবে, এই ভাবনার বদল ঘটানোর সময়ও বোধহয় এসেছে। সুদীপ্তার সাড়ে চার বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে আছে, শাহিদা। ভবিষ্যতে আবার যদি মা হন, সুদীপ্তা সারোগেসির কথা ভাববেন? অভিনেত্রী আবারও অকপট, ‘‘সারোগেসি নিয়ে আমার কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। এই বিশেষ পদ্ধতির প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়েই বলছি, আবার মা হওয়ার ইচ্ছে হলে আমি সন্তান দত্তক নেব।’’
মানালি মণীষা দে-অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের বিয়ের প্রায় দেড় বছর পার। মানালি কখনও সারোগেসিতে মা হওয়ার কথা ভেবেছেন? ছোট পর্দার ‘ফুলঝুরি’রও দাবি, বিষয়টি অত্যন্ত ব্যক্তিগত। পুরোটাই দম্পতিদের মানসিকতার উপরে নির্ভর করে। পরিস্থিতির উপরেও নির্ভর করে। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া-নিক জোনাস তারকা দম্পতি বলেই ওঁদের এই পদক্ষেপ নিয়ে এত মাতামাতি। প্রশ্নও করা হচ্ছে বাংলার তারকাদের। সারোগেসি নিয়ে মানালিরও কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। তাঁর দাবি, ‘‘এখন দত্তক সন্তানও রক্তের সন্তান-সম। একই আদর-যত্নে বড় হয়ে ওঠে। ফলে যে ভাবেই সন্তান আসুক, সংসারে নতুন প্রাণ আসছে সেটাই বড় কথা।’’ পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, ভবিষ্যত নিয়ে আগাম মন্তব্য করার জায়গায় নেই তিনি। যখন যা হবে সেটাই আপন করে নেবেন মানালি এবং অভিমন্যু।
ছোট পর্দায় ন’বছর পরে ফিরলেন রণজয় বিষ্ণু। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ধারাবাহিক ‘গুড্ডি’র হাত ধরে। আনন্দবাজার অনলাইনকে সেই সময়েই রণজয় জানিয়েছিলেন, সব ঠিক থাকলে ২০২২-এর শেষ বা ২০২৩-এর শুরুতে তিনি এবং সোহিনী সরকার বিয়ে করতে পারেন।
আশা, নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা মা-বাবাও হবেন। তাঁরাও সারোগেসির সাহায্য নেওয়ার কথা ভাববেন? রণজয়ের দাবি, ‘‘এই ধরনের একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। নিক-প্রিয়ঙ্কা কী কারণে এই পদ্ধতির সাহায্য নিলেন, সেটাই জানি না। আমাদেরও সেই পরিস্থিতি আসবে কি না, সেটাও এখনই বলা সম্ভব নয়। ফলে, কী হলে কী হবে এখনই বলাটা অসম্ভব।’’
সেই সঙ্গে অভিনেতার দাবি, যিনি যে পদ্ধতিতে মা-বাবা হয়ে খুশি, সেটাই স্বাগত জানানো উচিত। ‘নিয়ঙ্কা’ এ ভাবেই সন্তানের জন্ম দিয়ে সন্তুষ্ট। তাই ওঁদের খুশিতে সবার খুশি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। বাংলা বা টলিউড কি তা হলে সারোগেসিকে মুক্তমনে স্বাগত জানানোর জন্য এখনও তৈরি নয়? রণজয় অকপট, ‘‘আমার চারপাশে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের জন্মদানের ঘটনা চোখে পড়েনি। ফলে, এখনও পর্যন্ত আমি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে বাবা হওয়ার কথাই ভাবব। বাকিটা ভবিষ্যত বলবে। হলি-বলি-টলি বলে নয়, অন্য পেশার মানুষেরাও কতটা এই পদ্ধতিকে এক্ষুণি মেনে নেবেন বা নিচ্ছেন, সেটাও দেখা দরকার।’’ অভিনেতা হলেই সব সময় আলোচনায় থাকতে হবে, সব বিষয়ে মত দিতে হবে- এমন কোনও কথা নেই, দাবি বিষ্ণুর।