সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য
Bollywood

সাত দশক পেরিয়েও বলিউডে রূপের বিশেষণ ‘গোরি’

ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে হিন্দি ছবির মতো জনপ্রিয় গণমাধ্যম কমই রয়েছে। সেই ছবিগুলির মধ্য দিয়ে সমাজের বদলে যাওয়া চিন্তাভাবনা, বৈষম্য, পক্ষপাত কতটা ধরা পড়ে?

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ০৫:৩১
‘গোরি তেরে পেয়ার মে’ ছবির দৃশ্য।

‘গোরি তেরে পেয়ার মে’ ছবির দৃশ্য।

সত্তর বছর পেরিয়ে গিয়েছে স্বাধীনতার পরে। অতিমারির দাপটে বলিউডের ছবি সিনেমা হলের বদলে সরাসরি মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছবির কনটেন্টে কমেছে কি লিঙ্গ বৈষম্যের দাপট? কমেছে কি পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাত এবং পণপ্রথার বিভীষিকা? মূলত এই প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখেই পেনসিলভেনিয়ার কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টম মিচেল, গবেষক আষিক খুদাবখ্‌স এবং এঁদের দু’জনের ছাত্র কুণাল খাদিলকার মিলে গবেষণা করেছেন। পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে গত সত্তর বছরের প্রতিটি দশকের একশোটি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হিন্দি ছবির সংলাপকে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে হিন্দি ছবির মতো জনপ্রিয় গণমাধ্যম কমই রয়েছে। সেই ছবিগুলির মধ্য দিয়ে সমাজের বদলে যাওয়া চিন্তাভাবনা, বৈষম্য, পক্ষপাত কতটা ধরা পড়ে?

কয়েকটি ক্ষেত্রে বদল এলেও এই গবেষণার ফলাফলে উল্লেখযোগ্য ভাবে নজর কেড়েছে বলিউডের বর্ণ-পক্ষপাত। সুন্দরী নারী মানেই ফর্সা নারী। ‘গোরে গোরে মুখরে পে’ থেকে ‘চিটিয়া কলাইয়া’... শব্দবন্ধনী হিন্দি হোক বা পঞ্জাবি, ফর্সা রঙের বিকল্প নেই। এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য কৃত্রিম মেধার আধুনিক প্রযুক্তি মাস্কড ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বার্ট ব্যবহার করা হয়েছে। বার্টকে হাজার হাজার বাক্য ফিড করানোর পরে, মডেলটিকে শূন্যস্থান পূরণ করতে দিলে, বার্ট সম্ভাব্য উত্তরের একটি তালিকা পেশ করে। তেমনই প্রায় ১৪০০ হিন্দি ছবির সাবটাইটেল ফিড করানোর পরে বার্টকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নারীর ত্বক—হওয়া উচিত। শূন্যস্থানে তার জবাব, ‘ফর্সা!’

Advertisement

বর্ণবৈষম্য না কমলেও হিন্দি ছবির পরিবর্তিত ধারায় লিঙ্গবৈষম্য অনেকটাই কমেছে। পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত যদি হিন্দি ছবির গল্পে পুত্রসন্তানের জন্মের পরিসংখ্যান হয় ৭৪ শতাংশ, গত কুড়ি বছরে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশে। অর্থাৎ সমাজে যে ভাবে কন্যাসন্তানকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করার প্রবণতা বেড়েছে, তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে পর্দাতেও। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যদি ছবিতে ‘ধার’, ‘গয়না, ‘ঋণ’ শব্দের আধিক্য থাকে, সত্তরের দশক থেকেই তা বদলেছে ‘দায়িত্ব’, ‘সম্মতি’র মতো শব্দে। বিংশ শতকের পর থেকে পণে অসম্মতির চিত্র বেশি ফুটে উঠেছে।

হিন্দি ছবির চরিত্রের পদবি এবং তাদের ধর্মের নিরিখেও দেশের সামগ্রিক ছবির একটি ধারণা তৈরি হয়। ডাক্তারির মতো পেশাতেও ছবিতে উচ্চবর্ণের চরিত্রই প্রাধান্য পায়। যেমন, কপূর, চোপড়া, সিংহ, কোঠারি, মাথুর, পুরি, নায়েকের
মতো পদবিগুলি গত কয়েক দশকে বেশি দেখা গিয়েছে। শাহিদ কপূর অভিনীত ‘কবীর সিং’ বড় উদাহরণ এ ক্ষেত্রে।

তবে লিঙ্গবৈষম্য শুধু বলিউডের নিজস্ব সমস্যা নয়। এই গবেষণায় হলিউডের কিছু ছবিকেও রাখা হয়েছিল। বলিউডের তুলনায় হলিউডের অ্যাকশন ছবিতে লিঙ্গবৈষম্য বেশি। তবে অস্কারজয়ী ছবিগুলি এই বিভাগে উত্তীর্ণ। অর্থাৎ সামাজিক উত্থান-পতনের সরাসরি প্রভাব পড়ে মেনস্ট্রিম ছবিতে। গবেষক আষিকের কথায়, ‘‘হিন্দি ছবি নিয়ে এই ধরনের কাজ আগে হয়নি।’’

বলিউডেই ‘গোরে রং পে না ইতনা গুমান কর’-এর মতো
গান তৈরি হয়েছে। কিন্তু
দশক ঘুরলেও বলিউডের আকাশে ‘গোরা’ রং অস্তমিত হয় না।

আরও পড়ুন
Advertisement