(বাঁ দিকে) ‘কালিয়াচক চ্যাপ্টার ১’ ছবির পোস্টার। পরিচালক রাতুল মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
কয়েক বছর আগে মালদহের কালিয়াচকে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে নতুন ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক রাতুল মুখোপাধ্যায়। বুধবার ছবির ট্রেলার প্রকাশ্যে এসেছে। ছবির পোস্টার প্রকাশের পর থেকেই সমাজমাধ্যমে এই ছবিকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণার দাবিও উঠেছে। এক দিকে বিতর্ক, অন্য দিকে ছবি মুক্তির দিন আসন্ন। পরিচালকের মনের অবস্থা কী রকম?
কয়েক বছর আগে কালিয়াচকে বছর ১৯-এর তরুণ মহম্মদ আসিফ ঠান্ডা মাথায় নিজের পরিবারের চার সদস্যকে খুন করেছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, আসিফ হ্যাকিংয়ে দক্ষ ছিলেন। পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের খুন করার কথা স্বীকার করার পরেও তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ছিল না বলেই জানায় পুলিশ। কালিয়াচকের এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে রাতুলের ছবিটি।
হঠাৎ কালিয়াচকের প্রেক্ষাপটে ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন পরিচালক? আনন্দবাজার অনলাইনকে রাতুল বললেন,‘‘পৃথিবীর যে কোনও জায়গাতেই কিছু ভাল ও খারাপ মানুষ থাকে। কালিয়াচকও সে রকমই একটা জায়গা। যে প্লটের উপর নির্ভর করে ছবিটা, সেই ঘটনাটি কালিয়াচকে ঘটেছিল।’’ এরই সঙ্গে পরিচালক জানালেন যে, ‘শর্টকার্ট’ যে সাফল্যের সিঁড়ি হতে পারে না, তরুণ প্রজন্মের কাছে সেই বার্তাই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।
ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন অতনু তানুজ ঘোষ। তবে তাঁর সঙ্গেই বিষয়টা নিয়ে আলাদা করে পড়াশোনা করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন রাতুল। বললেন, ‘‘আমরা নিজেরা কালিয়াচকে গিয়ে অনেক তথ্য জোগাড় করেছিলাম। ছবিতে ওখানকার কিছু স্থানীয় অভিনেতাকে নিয়েছি। ওখানকার আঞ্চলিক ভাষাও ব্যবহার করেছি।’’
সমাজমাধ্যমে ছবির মুক্তির বিরুদ্ধে চর্চা সম্পর্কে অবগত রাতুল। শোনা যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এই ছবিতে কালিয়াচক সম্পর্কে ভুল ভার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে রাতুল জানালেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখনও কোনও হুমকি তিনি পাননি। রাতুলের কথায়, ‘‘বিরোধিতার বিষয়টা আমি দেখেছি। কিন্তু ট্রেলার দেখার পর এখন কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’
কালিয়াচকের হত্যাকাণ্ড এখনও আদালতে বিচারাধীন। এলাকার বেআইনি কারবারের জন্য প্রায়শই কালিয়াচক উঠে আসে খবরের শিরোনামে। কিন্তু রাতুলের দাবি, ‘‘এখন কিন্তু জায়গাটা অনেকটাই বদলাচ্ছে।’’ এই ছবির কথা প্রকাশ্যে আসতেই কালিয়াচকের স্থানীয়দের তরফে তিনি শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছেন বলেই জানালেন রাতুল। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন রাতুলের স্ত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র। সম্প্রতি বিয়ের পর দম্পতি কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাতুল বললেন, ‘‘কাশ্মীর যাওয়ার আগে সমাজমাধ্যমে বিরোধিতা দেখেছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে বাস্তবে কালিয়াচকে গিয়ে সে রকম কিছুই কিন্তু দেখিনি।’’ এই ছবি কালিয়াচক সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করবেই বলে বিশ্বাস করেন পরিচালক। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অসীম, পার্থসারথী, দেবপ্রসাদ হালদার, দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত প্রমুখ। ছবিটি আগামী ১৪ জুন মুক্তি পাবে।