Raj Chakraborty on Saayoni Ghosh

জানতাম ও জিতবেই, বরাবর ওর পাশে থাকব, যাদবপুর কেন্দ্রে জয়ী সায়নীকে নিয়ে লিখলেন রাজ

সায়নী ঘোষের অভিনয় এবং রাজনৈতিক জীবনের কান্ডারি চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। যাদবপুরে জয়ের পর ‘ছাত্রী’কে নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনে কলম ধরলেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক।

Advertisement
রাজ চক্রবর্তী
রাজ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ১৮:০৭
Bengali director and TMC MLA Raj Chakraborty celebrates the win of Saayoni Ghosh in Lok Sabha Election 2024

(বাঁ দিকে) সায়নী ঘোষ। রাজ চক্রবর্তী (ডান দিকে) ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে শুরু করব সেটাই ভাবছি। কারণ সায়নীর সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। বলা যেতে পারে, ইন্ডাস্ট্রিতে আমার সঙ্গেই ওর প্রথম কাজ। একই ভাবে রাজনীতির ময়দানেও আমরা একই সঙ্গে পা রেখেছিলাম। তাই সায়নীর কথা লিখতে গিয়ে এখন প্রচুর স্মৃতি ভিড় করে আসছে। শুধু সায়নী নয়, দলের অনেকের কথাই যতটা সম্ভব উল্লেখ করার চেষ্টা করছি।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল থেকেই আমি ব্যারাকপুরে। ভোটগণনা এবং নির্বাচনী ফলাফলের লাইভ সম্প্রচারে চোখ রেখেছি। যাদবপুর কেন্দ্রকে সব সময়েই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ কেন্দ্র বলা হয়। কিন্তু আমি শুরু থেকে জানতাম, সায়নী জিতবেই। রেকর্ড ব্যবধানে জিতবে। আর সেটাই হয়েছে।

আমার মনে হয়, সায়নী যথেষ্ট বুদ্ধিমতী এবং আমাদের দলের ও বড় সম্পদ। এতটা অল্প বয়সে এতটা বহুমুখী এবং সাহসী মেয়েকে রাজনীতির ময়দানে সচরাচর দেখা যায় না। সেখানে সায়নী শুরু থেকেই নিজেকে বার বার প্রমাণ করেছে।

শুরু থেকেই সায়নী রাজনীতি নিয়ে সিরিয়াস এবং বিষয়টি নিয়ে নিজের মতো পড়াশোনাও করে। ওর মতো মেয়েদের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন। সায়নী সংসদে গেলে আমার মনে হয়, ও যাদবপুরের পাশাপাশি এ রাজ্যের মানুষের কথাও তুলে ধরবে।

আমি সায়নীর জন্য সত্যিই খুশি। পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে, কোনও মানুষই একা এগোতে পারে না। তাই এগিয়ে চলার পথে আমাদেরও সায়নীর পাশে থাকতে হবে। প্রথম দিনের মতোই আমি সব সময় ওর পাশে থাকার চেষ্টা করব।

সাংসদ হিসেবে কাজ করা খুব কঠিন। কারণ এলাকাটা অনেক বড়। সে দিক থেকে আমার মনে হয়, সায়নীকে যদি সমর্থন করা হয়, ওর পাশে থাকা যায়, তা হলে ও বড় এলাকাতেও দেখার মতো কাজ করবে।

এই প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর নিয়ে আমি কিছু কথা জানাতে চাই। যে দিন থেকে ব্যারাকপুরে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, সে দিন থেকেই জানতাম আমরা জিতব। পার্থদাকে (ভৌমিক) জেতানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। কারণ অনেক দিন পর ব্যারাকপুর পার্থদার মতো এক জন ভাল মানুষকে পেয়েছে।

শুরু থেকেই আমাদের একটাই স্লোগান ছিল— গুন্ডারাজ নয়, শান্তি চাই। ভাল লাগছে, এ বার ব্যারাকপুরে গুন্ডারাজ শেষ হতে চলেছে। আর মানুষ একজোট হয়ে তাঁদের গণতান্ত্রিক মত জানিয়েছেন বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে।

সায়নীর মতো পার্থদার সঙ্গেও আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। শুধু রাজনীতি নয়, ওঁরা দু’জনেই আমার ছবি এবং ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন। গত বছর আমার পরিচালনায় ‘আবার প্রলয়’ ওয়েব সিরিজ়ে সুন্দর কাজ করে সায়নী যেমন প্রশংসাও কুড়িয়েছে, তেমন পার্থদাও। ভাল লাগছে চলচ্চিত্রের জগতের বাইরে, রাজনীতির ময়দানেও আমরা গত কয়েক মাস এক সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করলাম। আজ আমি ওদের দু’জনের জন্যই অত্যন্ত খুশি।

বাকিদের কথাও ভুলি কী করে! দেব তো জিতবে জানতামই। জুন (মালিয়া), সায়ন্তিকা (বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রত্যেকে, যাঁরা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি হিসাবে এই নির্বাচনে লড়লেন, তাঁদের জন্য আমি গর্বিত। আমি বিশ্বাস করি, সিনেমা বা রাজনীতি নয়, এর পাশাপাশি যে পেশাতেই তাঁরা পা রাখতেন, সেখানেই তাঁরা নিজেদের সেরাটাই দিতেন।

একটা সময় ছিল যখন ভাবা হত, তারকারা রাজনীতির ময়দানে আসেন এবং তার পর আবার পালিয়ে যান। আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি হিসেবে আমরা মানুষের সেই দৃষ্টিভঙ্গিটা অনেকটাই বদলাতে পেরেছি। মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন। এ বার তার প্রতিদান দেওয়ার পালা।

আরও একটা বিষয়, গত কয়েক দিন বুথফেরত সমীক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম, ফলাফল অন্য হবে। কারণ আমার পরিচিত মুম্বইয়ের বহু বাঙালি অভিনেতা, দেশের অন্যান্য প্রান্তের আইনজীবী বা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগের দিন এ রাজ্যে বিমানে করে এসেছেন এবং পরের দিন ভোট দিয়েছেন। কারণ তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতেই ভোট দিয়েছেন। তাঁরা বাংলাকে বিজেপির হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসেই এই ফল সম্ভব হয়েছে। আমি তাঁদের প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।

আজকে আমরা সবাই ব্যস্ত। সায়নীর সঙ্গে আমার এখনও কথা হয়নি। তবে ওকে মেসেজ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। কিছু ক্ষণ বাদেই ওর সঙ্গে দেখা হবে। সায়নী-সহ আমাদের দলের যাঁরা যাঁরা নির্বাচনে জিতেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে আমার তরফে শুভেচ্ছা জানাই।

আগামী দিনে আশা করি, আমরা বাংলার উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। একই সঙ্গে সকলকে বলি, দয়া করে অবাঞ্ছিত উত্তেজনা ছড়াবেন না। আমরা মানুষের ভোটে জিতেছি। সেটা মনে করেই, মাথা ঠান্ডা রাখবেন, এইটুকুই আমার অনুরোধ। সকলে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আরও পড়ুন
Advertisement