চড়কাণ্ডে ক্ষমা চাইলেন সোহম চক্রবর্তী। ছবি: ফেসবুক।
ক্ষমাপ্রার্থী সোহম। রেস্তরাঁ মালিককে নিগ্রহের ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ ভাবে মেজাজ হারিয়ে কারও গায়ে হাত তোলা মোটেও উচিত হয়নি বলে স্বীকার করলেন তিনি। যদিও গোটা ঘটনার পিছনে প্ররোচনা তত্ত্বকেই খাড়া করতে চাইছেন তিনি।
শুক্রবার রাতে নিউ টাউনের এক রেস্তরাঁর মালিককে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে চণ্ডীপুরের তৃণমূলের বিধায়ক ও টলিউড অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে ক্ষমা চেয়ে সোহম বলেন, ‘‘আগে আমার ও আমার প্রযোজনা সংস্থার কর্মীদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল। অকথ্য গালিগালাজ করা হয়, কুকথা বলা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেও। সেই সময়ে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমন কাজ করা উচিত হয়নি। আমার ভুল হয়েছে।’’
শনিবার সোহম জানান, যে ফুটেজ প্রকাশ্যে এনেছেন ওই রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ, তাতে শুধু তাঁর মারমুখী চেহারাটাই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে আধ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট আগে। বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর তরফে জানানো হয়েছে, ওই সন্ধ্যায় তাঁরা শুটিং করতে যাওয়ার সময় থেকেই কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পরে রেস্তরাঁর মালিক অভদ্র ব্যবহার শুরু করেন। তাঁর এবং তাঁর দেহরক্ষীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। এমনকি, দেহরক্ষীর গায়ে হাতও তোলা হয়। তার পর রেস্তরাঁর অন্য কর্মীদের ডেকে এনে শুরু হয় দুর্ব্যবহার। চলে অকথ্য গালিগালাজ।
সোহম বলেন, ‘‘সেই সব ঘটনার ফুটেজ প্রকাশ্যে আসছে না। গোটা হার্ড ডিস্কটা নিয়েই চলে গিয়েছেন ওই রেস্তরাঁর মালিক। সেটা খুঁজে বার করা দরকার। তবে বিষয়টা প্রথমেই প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।’’
সোহম জানিয়েছেন, তাঁরা অনুমতি নিয়েই ওই রেস্তরাঁয় শুটিং করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে নানা রকম আপত্তি তোলেন মালিক। সোহমের প্রযোজনা সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই রেস্তরাঁয় শুটিং করার জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও ঝামেলা শুরু হয়। এমনকি, রেস্তরাঁর মালিক শুটিংয়ের নানা মুহূর্ত কাউকে ভিডিয়ো করে পাঠাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। সোহমের সহযোগীদের উপর চড়াও হন রেস্তরাঁর কর্মীরা, অভিযোগ প্রযোজনা সংস্থার সদস্যদের। এক মহিলা আহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে সংস্থার তরফে। তার পরই সোহম ঘটনায় জড়িয়ে যান বলে জানানো হচ্ছে।
সোহমের দাবি, ওই রাতেই তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু থানা থেকে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয় বলেই তিনি আর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। সোহমের দাবি, পুলিশ আধিকারিকেরা বলেছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে প্রয়োজন হলে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হবে। সোহম জানিয়েছেন, শনিবার তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমন কাজ করা কি উচিত হয়েছে?
সোহম বলেছেন, ‘‘মানুষ হিসেবে আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছিল। তাই ঘটনাটা ঘটে গিয়েছে। এখন অনুশোচনা হচ্ছে।’’
শুক্রবার অবশ্য সোহম জানিয়েছিলেন, শুটিং-এ ব্যস্ত ছিলেন তিনি। চিৎকার শুনে ছুটে যান, দেখেন তাঁর এক নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা দিচ্ছেন ওই রেস্তরাঁর মালিক। সোহমের অভিযোগ, সেই সময়ই তাঁকে গালিগালাজ করা হয়, গায়ে হাত তোলা হয় তাঁর দেহরক্ষীর।
আনিসুলকে মারধর করার প্রসঙ্গে এর আগে সোহম বলেছিলেন, ‘‘সে তো মেরেছিই। কটূক্তি করেছে এবং অভিষেককে নিয়ে গালিগালাজ করেছে— সেটা মেনে নেওয়া যায় না। চারটে চড় মেরেছি। ধাক্কা দিয়েছি। অভিনেতারাও মানুষ। আমাদেরও আবেগ আছে। তারই প্রতিফলন হয়েছে। ছোটখাটো বিষয়। পুলিশ দেখছে।’’