বৃহস্পতিবার কলকাতায় আরিফিন শুভ। ছবি: সংগৃহীত।
তিন বছরের সফর অবশেষে শেষ হয়েছে। খুব একটা সহজ ছিল না আরিফিন শুভর এই যাত্রা। চলতি মাসেই বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ছবি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের এই বায়োপিক ভারতে মুক্তি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার শহরে ছবির প্রিমিয়ারে উপস্থিত হয়েছিলেন ছবিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রাভিনেতা আরিফিন শুভ। তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে এই ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা শোনালেন অভিনেতা।
বাংলাদেশে এই ছবির প্রিমিয়ারের পরেই সমাজমাধ্যমে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন আরিফিন। নাকে অস্ত্রোপচার করাতে হয় তাঁকে। আরিফিন বললেন, ‘‘এখনও আমি খুব একটা ভাল নেই। নাকের মধ্যে হাড় এবং মাংস কাটা হয়েছে। কিন্তু জানি থেমে থাকলে তো চলবে না।’’ মুম্বইয়ের পর কলকাতায় ছবির প্রচার সেরেছেন। অভিনেতা জানালেন বুধবার থেকে কোনও রকম বিশ্রাম পাননি। তবে অসুস্থতা এবং কাজের এই চাপ একসঙ্গে সামলানোকে এই ছবি এবং অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্যাশনের ফল বলে জানালেন আরিফিন।
বাংলাদেশে এই ছবি সাড়া জাগিয়েছে। কিন্তু মুজিবুর রহমানের চরিত্র মানে, সেখানে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হত। প্রস্তাব আসার পর সমালোচনার ভয় ছিল না? আরিফিন সপাট বললেন, ‘‘প্রত্যেকে বলেছিলেন ভুল কাস্টিং হয়েছে! সমাজমাধ্যমে যে যা লিখেছিলেন, সবটা আমি দেখেছি। এখন তাঁরাই প্রশংসা করছেন।’’ এরই সঙ্গে আরিফিন জানালেন, লোকে কথা বলবেই। তা নিয়ে তিনি বিচলিত নন। অভিনেতা যোগ করলেন, ‘‘শ্যাম বেনেগাল এই উপমহাদেশের এক জন কিংবদন্তি পরিচালক। তাঁর সিদ্ধান্তকে সহজে ফেলে দেওয়া যায় না।’’ কথা প্রসঙ্গেই শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শোনালেন আরিফিন। জানালেন, বর্ষীয়ান পরিচালক কোনও ‘কাট’-এ বিশ্বাসী নন। তিনি সব সময়েই ওয়ান টেক শট নিতে পছন্দ করেন। কিন্তু আরিফিনকে কি তিনি বকাবকি করেছেন? অভিনেতা হেসে বললেন, ‘‘উনি সুইট হার্ট। শুধু ফ্রেম করার সময় ক্যামেরার সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে উনি রেগে যান।’’
এই ছবির সূচনা লগ্ন থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ছবির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর থেকেও চরিত্রের জন্য প্রযোজনীয় খুঁটিনাটি জেনেছিলেন আরিফিন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রচুর ভিডিয়ো ফুটেজ দেখা, বই পড়া এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নিজেকে এই চরিত্রের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন অভিনেতা। ছবি দেখার পর হাসিনার থেকে কী রকম প্রতিক্রিয়া পেলেন? আরিফিন বললেন, ‘‘বলা খুব কঠিন। কারও পরিবারের সদস্যদের এক রাতে যদি গুলি করে মারা হয়, তার পর সেই মানুষটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না। সেই মানুষটা ছবি দেখার পর খুব ভাল অভিনয় করেছি বলবেন সেই প্রত্যাশা করিনি। চোখের জলে অন্ধকার অতীত দেখে তিনি আর কী বলতে পারেন!’’
৫৫ বছর বয়সে প্রয়াত হন বঙ্গবন্ধু। আরিফিনের বয়স এখন ৩৯ বছর। মূলত দর্শক তাঁকে রোম্যান্টিক এবং অ্যাকশন হিরো অবতারে দেখেই স্বচ্ছন্দ। নিজের ইমেজ নিয়ে কি খুব একটা চিন্তাভাবনা করেছিলেন তিনি? এক সময় টলিপাড়ায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সকালে বাণিজ্যিক ছবি এবং বিকালে অন্য ধারার ছবির শুটিং করতেন। আরিফিন জানালেন, এই চরিত্রের জন্য প্রসেনজিৎ তাঁকে অনেকাংশে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ‘‘আজকে যুগ পাল্টেছে। গতে বাঁধা জিনিস দিনের পর দিন দর্শক গ্রহণ করবেন না। শুধু নায়ক নয়, অভিনেতা হিসাবেও নিজেকে গড়ে তুলতে হবে’’, বললেন আরিফিন।
শুধু ঢালিউড নয়। টলিউডে এর আগে ‘আহা রে’ ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন আরিফিন। সম্প্রতি, অরিন্দম শীল পরিচালিত ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু ও পার বাংলার চঞ্চল চৌধুরী বা জয়া আহসানের মতো টলিপাড়ায় কাজের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন না কেন অভিনেতা? আরিফিনের স্পষ্ট উত্তর, ‘‘আমাকে ডাকলেই বেশি কাজ করব। আমি তো নিজে এসে কাউকে কাজের জন্য অনুরোধ করতে পারব না।’’ টলিপাড়ার এক পরিচালকের সঙ্গে নতুন কাজের কথাও চলছে অভিনেতার। শুক্রবারেই এক প্রস্ত আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু সে প্রসঙ্গে এখনই মুখ খুলতে চাইলেন না আরিফিন। হেসে বললেন, ‘‘আগে সব ঠিক হোক। তার পর জানাব।’’