অম্বরীশ ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
‘আমরা সব খোদার খাসি, যাবই ফাঁসি ভোট ফুরালে’, নচিকেতা চক্রবর্তীর গান দিয়ে ভোটের রাজনীতি প্রসঙ্গে কথা শুরু করলেন অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য। যদিও কুড়ি বছর আগে লেখা এই গানের সঙ্গে বর্তমানে সহমত পোষণ করেন না অভিনেতা। “গত কুড়ি বছরে মানুষের সচেতনতা অনেকটা বেড়েছে। আমরা ভোট দিই বটে, কিন্তু খোদার খাসি নই। রাজনৈতিক নেতাদের এটা মাথায় রাখা উচিত, ক্ষমতা আমাদের হাতে। আমরাই শেষ কথা”, দৃঢ়তার সুর অম্বরীশের গলায়।
উত্তর কলকাতায় মুখোমুখি দুই সতীর্থ। তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপক্ষে পদ্মশিবিরের তাপস রায়। এই কেন্দ্রে সিপিআইএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য। উত্তর কলকাতার জয়ী সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অম্বরীশের সাক্ষাৎ হয়েছে কখনও? স্মিত হাসি রেখে অম্বরীশের উত্তর, “আমি ওঁকে চিনি না। কখনও আলাপ হয়নি। আমাদের পাড়ায় নির্বাচনী প্রচারে আসেন। তখন হয়তো আমি থাকি না। তাই দেখা হয় না।” অভিনেতা জানালেন, তাঁর অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। না হলে তিন বার লোকসভা ভোটে জয়ী হতে পারতেন না, এমনটাই মনে করেন অম্বরীশ।
তবে ভোটের পরে অধিকাংশ প্রতিনিধিকেই নিজেদের সংসদীয় এলাকায় দেখা যায় না। এই প্রসঙ্গে অভিনেতার বক্তব্য, “কোনও প্রতিনিধিই তো ভোটের পরে এলাকায় আসেন না। আমার মনে হয়, প্রত্যেক প্রতিনিধির ভোটের পরে নিয়ম করে প্রতি মাসে নিজেদের অঞ্চলে ঘুরতে আসা উচিত। সেই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। যে ভাবে ভোটের আগে রোদের মধ্যে ভোট চাইতে যান বা ভোট পাওয়ার পরে ধন্যবাদ জানাতে যান, সেখানেই থেমে গেলে চলবে না। তার বাইরেও নিজের অঞ্চলে যাওয়া উচিত।”
এক দিকে সতীর্থ, অন্য দিকে রাজনৈতিক পরিচিতি। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মিমির সঙ্গে কখনও রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে? “মিমি এত ঘেরাটোপের মধ্যে থাকেন যে, ওঁর সঙ্গে কথা বলা খুব কঠিন। চারিদিকে এত নিরাপত্তারক্ষী, বাউন্সার ইত্যাদি ঘিরে থাকে! অভিনয়ের বাইরে ওঁর সঙ্গে কখনও আড্ডা বা গল্প হয়নি,” বললেন অম্বরীশ। তবে দেবের ব্যাপারে ভাল নম্বর দিলেন অম্বরীশ। তাঁর কথায়, “দেব নিজের শুটিং, প্রযোজনার বাইরে নিয়ম করে খুঁটিনাটি দেখেন। আমি নিজের চোখে দেখেছি। নিজে অথবা নিজের সচিবের মাধ্যমে হলেও খোঁজ রাখেন।” মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা হয়নি। অম্বরীশ বললেন, “মিঠুনদার সঙ্গে এই আলোচনা হয়নি। এত সিনিয়র ব্যক্তি যদি না বলেন, বার বার সেই বিষয়ে বলার সাহস হয় না। মিঠুনদা রাজনৈতিক আলোচনা করতে চান না।”
ভোটের পরিবেশে রাজনীতিবিদদের নানা ধরনের প্রতিশ্রুতির প্রতিধ্বনি শোনা যায়। কত জন প্রতিনিধি সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন? আনন্দবাজার অনলাইনের এই প্রশ্নের উত্তরে অম্বরীশ জানালেন, অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়তো প্রতিশ্রুতি রাখতে চান। কিন্তু, পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে তা পূরণ করতে পারেন না। তিনি আরও বললেন, “একটি রাজনৈতিক দলের অনেক শাখা-প্রশাখা থাকে। অনেক মানুষকে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। কোনও উপায় নেই তো! দিনের শেষে এটা সংসদীয় রাজনীতি, ভোটের রাজনীতি।”
তবে প্রচারে প্রার্থীদের নিজেদের নিয়ে সুখ্যাতি করার প্রয়াসকে একেবারেই ভাল চোখে দেখেন না অভিনেতা। তিনি বললেন, “প্রচারে এসে প্রার্থীদের নিজেদের ঢাক পেটানোর দরকার নেই। পাঁচ বছরে কী কী হয়েছে, সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি। কী কী করতে পারেননি, সেটা বলুন। আগামী দিনে সেই বকেয়া কাজগুলো করার জন্য কী কী প্রচেষ্টা করছেন, তা নিয়ে কথা বলুন। কী কী কাজ করেছেন, সেগুলো নিয়ে বড়াই না করলেও চলবে।”
চলতি বছরে শহর কলকাতায় কোন উন্নয়ন চান অম্বরীশ? তাঁর মতে, কলকাতার ট্র্যাফিক ব্যবস্থার উপর কাজ করা উচিত। গড়িয়াহাট মোড় বা শ্যামবাজারের মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তাঁরা কোনও কাজ করেন না। অভিনেতার কথায়, “তাঁরা নিষ্ক্রিয়।” তিনি আরও যোগ করলেন, “আমাদের এলাকা-সহ অন্যান্য এলাকার সাংসদদের কাছে আমার আবেদন, অফিস টাইমে, যখন মেট্রো চলে, সেই সময়ে অটোর দৌরাত্ম্য বা অকারণে পর পর বাস দাঁড়িয়ে থাকা, সে দিকে তাঁদের নজর দেওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র মেট্রো স্টেশন থেকে যাত্রী তুলবে বলে এই অব্যবস্থা! হুলিগ্যানের পর্যায়ে চলে গিয়েছে বিষয়টা। উত্তরপ্রদেশে ট্র্যাফিকে যে রকম লাগামহীন চূড়ান্ত অব্যবস্থা, সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কলকাতা।”
এক সময় প্রিয় শহর কলকাতা তাঁর কাছে গৌরবের কারণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস পুঞ্জীভূত হচ্ছে তাঁর প্রাণের শহরকে ঘিরে। তবুও তিনি আশার আলো দেখছেন, ক্ষমতা যে জনগণের হাতে!