Artificial intelligence on music

কেকে, মুসেওয়ালার কণ্ঠে আসছে নতুন গান! কী ভাবে ফিরছেন প্রয়াত শিল্পীরা?

সত্যি আর কল্পনার জগতের ব্যবধান অনেকটাই ঘুচিয়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রয়াত শিল্পীর কণ্ঠে নতুন নতুন গান শোনা যাবে আবার? পক্ষে-বিপক্ষে নানা জনের নানা মত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ১২:০৪
AI generates Arijit Singh, Atif Aslam, Sidhu Moosewala, Sonu Nigam’s voice

(বাঁ দিকে) কেকে। সিধু মুসেওয়ালা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র

ভাবুন তো, ‘তু ঝুঠি ম্যায় মক্কর’ ছবিতে অরিজিৎ সিংহের গাওয়া ‘বেদরদিয়া’ গানটি যদি শোনা যায় প্রয়াত শিল্পী কেকে-র কণ্ঠে? অথবা ‘গেরুয়া’ গানটি শোনা যায় আতিফ আসলামের কণ্ঠে? এমনকি, নুসরত হতেহ আলি খানের গাওয়া ‘তুমহে দিল্লগি’ যদি শুনতে পান প্রয়াত পঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালার কণ্ঠে?

এখন আর কল্পনা নয় এ সব। ইউটিউবে এমন কভার খুঁজলেই মিলবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌলতে এ ঘটনা এখন ঘোর বাস্তব। সত্যি আর কল্পনার জগতের ব্যবধান অনেকটাই ঘুচিয়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা জনের নানা মত।

Advertisement

কেকে-র ঘনিষ্ঠ বন্ধু সঙ্গীতশিল্পী শান বেশ বিরক্ত। প্রয়াত বন্ধুর কণ্ঠ যে ভাবে এআই অন্যের গানে বসিয়ে দিচ্ছে, তার বিরোধিতা করে শান বললেন, “এটা খুবই অসংবেদনশীল ব্যাপার। সেই ব্যক্তির গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করার শামিল। তারা তো আর জানতে পারছে না, তাদের কণ্ঠ এ ভাবে জীবিত হয়ে উঠছে আবার। এটা তো নৈতিক ভাবেও ঠিক নয়। প্রত্যেকের কণ্ঠের ‘পেটেন্ট’ আছে এখন। তারা বেঁচে থাকলেও এমনটা করার অনুমতি দিত না।”

ক্ষুব্ধ শান আরও বলেন, “শিল্পীর কণ্ঠ দিয়েই তো তাকে চেনা যায়। বেঁচে থাকলে কেকে কি এই ভাবে গাইত গানগুলো? মজা হিসাবে করলে তা-ও ঠিক আছে, কিন্তু এটা একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলেই মুশকিল।”

তাঁর সাফ কথা, কেকে-র গান তিনি অন্য রকম ভাবে শুনতে চান না। প্রয়াত বন্ধু যেমন ভাবে গেয়েছেন, সেরকমই তাঁর পছন্দ। এআই-এর মধ্যে ইতিবাচক কিছু দেখছেন না শান। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে কেন অমরত্ব পাবেন শিল্পী?

তাঁর কথায়, “এক জন শিল্পী তো তাঁর কাজের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন।”

নৈতিকতার প্রশ্ন আছেই, কিন্তু কী বলছে আইন? সম্প্রতি অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠের অনুকরণ করে একটি লটারির বিজ্ঞাপনের প্রচারে ব্যবহার করা হয়েছিল। এর পরই দিল্লি হাই কোর্ট অভিনেতার নাম, ছবি বা কণ্ঠ তাঁর অনুমতি ব্যাতীত ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

‘আনন্দ অ্যান্ড আনন্দ’-এর সিরিয়র পার্টনার শিল্পীদের কণ্ঠকে এই ভাবে পুনর্নির্মাণ করার প্রসঙ্গে বললেন, “গায়কদের পারফরম্যান্সের স্বত্ব আছে, নিজের কাজের নৈতিক স্বত্বও আছে, ব্যবসার খাতিরেও তাঁরা নিজেদের কণ্ঠ ব্যবহার করতে পারেন। ভারতের মেধাস্বত্ব আইনেই আছে এমনটা। প্রয়াত শিল্পীদের ক্ষেত্রেও এই আইন খাটে।”

এআই-এর সৃষ্টি করা গানবাজনা এই অধিকার ভঙ্গ করতে পারে বলেই তাঁর মত। সারা বিশ্ব জুড়েই এ বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলছে। এইআই-এর কাজের কপিরাইট কার হবে? মানুষের তেমন কোনও ভূমিকা তো এখানে থাকছে না।

সঙ্গীত পরিচালক সেলিম মার্চেন্ট অবশ্য মনে করেন, ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক কাজে আসবে। তাঁর কথায়, “ধরা যাক, একজন শিল্পী এই মুহূর্তে হাতের কাছে নেই, কিন্তু দরকারে তাঁর গলাটাও আমি ব্যবহার করতে পারব, এটা তো সুবিধাজনক।” তবে প্রয়াত শিল্পীর কণ্ঠ ব্যবহার করলেও তাঁদের পরিবারকে টাকা দেওয়া উচিত বলেই মত সেলিমের।

জীবিত শিল্পীদের ক্ষেত্রে এটা কি এক ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না? তাঁরা কি জায়গা হারাতে পারেন?

সেলিম বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তো আর আবেগ আনতে পারবে না গানে। তার জন্য ভিতরের উদ্দীপনা চাই। কাউকে সত্যি সত্যি গাইতে হবে সে জন্য।”

নাক্কাশ আজিজ গান লেখার সময় ‘ডামি ওয়ার্ড’ বসাতে এআই-এর সাহায্য নেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “ যত ক্ষণ এটা নৈতিক ভাবে হচ্ছে, কাউকে আঘাত করছে না, তত ক্ষণ কোনও ভুল নেই এর ব্যবহারে। কিন্তু কেকে-র গলা ব্যবহার করে কেউ যদি অর্থ উপার্জন করে, আমার খারাপ লাগবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement