সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
‘টলিউড’ এবং ‘বলিউড’ শব্দ দুটিতে ঘোর আপত্তি তাঁর। বাংলা এবং হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলতে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ তিনি। সুদীপ্তা চক্রবর্তী। প্রথম জায়গাটির সঙ্গে হৃদ্যতা বহু বছরের। দ্বিতীয়টিতে পা রাখতে চলেছেন লকডাউন পরবর্তী ২০২১-এ।
সুদীপ্তা চক্রবর্তীর হাতেখড়ি হচ্ছে হিন্দি ছবিতে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মনোহর পাণ্ডে’ ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করবেন তিনি। ইতিমধ্যেই সৌরভ শুক্লকে নিয়ে ছবির শ্যুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতায়। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে যোগ দেবেন সুদীপ্তাও। উচ্ছ্বাস চুঁইয়ে পড়ছে অভিনেত্রী গলায়, “কৌশিকদা হঠাৎ একদিন জানালেন একটা হিন্দি ছবি করছেন। আমাকেও নিতে চান। সহ-অভিনেতাদের নাম শুনে আমি বেশি না ভেবেই রাজি হয়ে যাই।”
রঘুবীর যাদব,সৌরভ শুক্ল, সুপ্রিয়া পাঠক কপূরের অভিনয় ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধ করেছে তাঁকে। এ বার তাঁদের সঙ্গেই কাজের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত সুদীপ্তা, “ছোটবেলার থেকে আমি ওঁদের খুব ভক্ত। রীতিমতো হাঁ করে ওঁদের অভিনয় দেখতাম। সেই শিল্পীদের সঙ্গে এক ফ্লোরে কাজ করতে পারা, স্ক্রিন শেয়ার করা আমার কাছে বিশাল সৌভাগ্য।”
হিন্দিভাষী চরিত্র আগেও বেশ কয়েকবার করেছেন তিনি। হিন্দি ভাষার ছবিতে কাজ এই প্রথম। তবে কৌশিকের সঙ্গে ‘কেয়ার অব স্যর’, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’তে কাজ করায়, সবটাই তাঁর ভীষণ চেনা। কাজের ধরন থেকে গোটা ইউনিট, কিছুই ‘নতুন’ নয় সুদীপ্তার কাছে। তার উপরে শ্যুটিংও হচ্ছে নিজের শহরে। তাঁর কথায়, “ভাষাটাই শুধু আলাদা। আর তো কিছুই নতুন নয়। কলকাতাতেই কাজ করব। আর কৌশিকদার সঙ্গে কাজ করা মানে নিজের একটা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আরেকটা বাড়িতে যাওয়া।”
বাংলা ছবিতে বারবার নিজেকে নিয়ে ভাঙা-গড়া করেছেন তিনি। পরিচিতেরা উপদেশ দিয়েছিলেন হিন্দিতেও ‘চেষ্টা’ করার। তবে সুদীপ্তার কাছে ছবির ভাষার থেকেও বেশি প্রাধান্য পেয়েছে তার বিষয়। ছবির গল্প ভাল হলে, যে কোনও ভাষার ছবিতেই কাজ করতে পারেন অভিনেত্রী। তিনি বললেন, “শুধু বাংলা বা হিন্দি কেন! তামিল, তেলুগু, মালায়ালাম ছবি করতেও রাজি। মালায়ালামে খুব ভাল মানের ছবি হয়। সেখান থেকে যদি কাজের প্রস্তাব পাই, তা হলে হিন্দির আগে সেখানেই যাব।”
‘মনোহর পাণ্ডে’তে যে ধরনের চরিত্র তিনি করবেন, সে রকম চরিত্রে আগেও পর্দায় ধরা দিয়েছেন অভিনেত্রী। কিন্তু একই রকমের চরিত্রকে নতুন ভাবে মেলে ধরার মধ্যেও অভিনয়ের সার্থকতা দেখেন সুদীপ্তা। এ বিষয়ে পরিচালকের উপরেও পূর্ণ আস্থা রেখেছেন তিনি। তবে এক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা এবং ‘টাইপকাস্ট’ হওয়ার মধ্যে পার্থক্যটাও স্পষ্ট তাঁর কাছে। সুদীপ্তা বললেন, “ঋতুদার 'বাড়িওয়ালি' করার পর অসংখ্য ওই ধরনের চরিত্রের প্রস্তাব এসেছিল আমার কাছে। একটাও করিনি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির টাইপকাস্ট করে দেওয়ার অভ্যাসটা ভাঙতে চাইছিলাম।”
কেরিয়ারের বেশির ভাগেই ‘ডি-গ্ল্যাম’ অর্থাৎ সাদামাটা চরিত্রে অভিনয় করে এসেছেন সুদীপ্তা। যদিও তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই অভিনেত্রীর। নিজের অভিনয় দিয়ে সাদা কাগজে লেখা চরিত্রগুলিকে ‘রক্ত-মাংসের মানুষ’-এ পরিণত করার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নেন তিনি।