খাতায়কলমে তাঁরা গত বছরের উল্টোরথে আইনি বিয়েতে বাঁধা পড়েছিলেন। ক্যালেন্ডার বলছে, চলতি মাসে তাঁদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। হাতে মাত্র দিন দু’য়েকের ছুটি। কী ভাবে উদ্যাপন করলে মন ভরবে? অনেক ভেবে সায়নী দত্ত-গুরবিন্দরজিৎ সমরা উড়ে গিয়েছিলেন ব্যাঙ্কক। পায়ের তলায় সর্ষে আর দু’চোখে স্বপ্ন। তাতেই ভর করে দুটো দিন বিদেশের রাস্তায় উড়ে বেড়ালেন কপোত-কপোতি। ভালবাসাবাসির কিছু মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে ভোলেননি দম্পতি। যা প্রথম প্রকাশ পাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইনের গ্যালারিতে।
সায়নী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, কম সময়ে ঝটিতি সফরের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। ছুটি ফুরোলে সায়নী ফের মুম্বই। গুরবিন্দরজিৎ লন্ডনে। তাই ব্যাঙ্ককে পা রাখা মাত্র তাঁরা এক মুহূর্তও নষ্ট করেননি। আনাচকানাচ ঘুরেছেন। দু’হাত ভর্তি শপিংও করেছেন। ভূরিভোজ সেরেছেন রকমারি স্ট্রিট ফুডে।
লম্বা উড়ান। ব্যাঙ্ককে পা দিয়ে প্রথমে নির্দিষ্ট হোটেলে পা রাখেন দম্পতি। তত ক্ষণে পেটে ছুঁচোর ডন। একটু বিশ্রাম নিয়েই তাঁরা পথে নামেন। রাস্তার দু’ধারে নানা স্বাদের খাবারের দোকান। ভরপেট খাওয়াদাওয়া সেরে ফের হোটেলের বিলাসবহুল ঘরে। সে দিন শুধুই বিশ্রামের। আর একান্তে সময় কাটানো।
দ্বিতীয় দিনে ম্যারাথন বেড়ানো। সে দিন রাতে জমজমাট উদ্যাপন। সকালে সায়নী নিজেকে সাজিয়েছিলেন সাদা টিউব টপ আর ট্রাউজ়ারে। দিন শুরু পথের ধারের জনপ্রিয় এক রেস্তরাঁয় ভরপেট খানাপিনা সেরে। তার পর শহরের ইতিউতি বেড়ানো। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, গুরবিন্দরজিতের ভৌগোলিক জ্ঞান তাঁর থেকেও বেশি। এক দিনে তিনি শহরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলো তাঁকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন।
যেমন, শহরের সবচেয়ে উঁচু রেস্তরাঁয় নবদম্পতি বিবাহবার্ষিকীর উদ্যাপন সেরেছেন। ৫০ তলার উপরে নির্দিষ্ট স্থানে সায়নী পা রাখতেই মুগ্ধ। গোটা শহর আলোয় আলো। আর অভিনেত্রী অনেক উঁচু থেকে যে কোনও শহর দেখতে খুব ভালবাসেন, সেটা জানতে পেরেছিলেন তাঁর স্বামী। সায়নীকে চমকে দিতেই তাঁর এই আয়োজন।
শুধু বেড়ানো নয়, খাওয়াদাওয়াতেও সায়নী তাঁর বরের উপরে প্রচণ্ড নির্ভর করেন। কোন শহরের কোন খাবার বিখ্যাত, গুরবিন্দরজিৎ খুব ভাল জানেন। কোন খাবার বেশি সুস্বাদু, তারও খবর নখদর্পণে। তাই এ বিষয়গুলিতে অভিনেত্রী চোখ বন্ধ করে স্বামীকে ভরসা করেন।
রেস্তরাঁয় ভালমন্দ খেয়ে দম্পতি নৈশ অভিসারে। রাতের ব্যাঙ্কককে উপভোগ করতে তাঁরা পৌঁছে যান এক বিখ্যেত নাইটক্লাবে। আনন্দবাজার অনলাইনকে সায়নী জানিয়েছেন, এই প্রথম তাঁরা কোনও নাইটক্লাবে পা রাখলেন। মানুষের ভিড়, তাঁদের হৃদয়ের উত্তাপে ক্লাবটি তখন যেন মোহময়ী, উদ্ভিন্নযৌবনা!
খাওয়াদাওয়া, নাইটক্লাবে হুল্লোড়, উদ্যাপন পর্ব মিটতেই কেনাকাটার পালা। সাধারণত, মেয়েরা কোথাও গেলেই ব্যাগ উপচে কেনাকাটা সারেন। জেনে অবাক হবেন, সায়নীর থেকেও এই বিষয়ে বেশি উৎসাহী তাঁর স্বামী! কেনাকাটার সময় সায়নী নিজেকে সাজিয়েছিলেন টিয়া-সবুজ মিনিতে। তাঁর কথায়, “ভাল শপিং মলে খানিক ক্ষণ সময় কাটালেই আমার মন ভাল হয়ে যায়। আমার স্বামীর তাতে শখ মেটে না। তিনি প্রচুর কেনাকাটা করেন। এখানেও সেটাই করেছেন।”
আরও একটা জিনিস খুব ভালবাসেন গুরবিন্দরজিৎ। ভাল রেস্তরাঁয় ভাল ভাল খাবার খাওয়া। ব্যাঙ্ককে নাকি তিনি আর সায়নী খাবারের উপরেই ছিলেন। তবে, অভিনেত্রী শরীর সচেতন। তিনি তাই ততটাও খাদ্যরসিক নন।
সব কিছুর মধ্যেও স্বামী-স্ত্রী একান্তে নিশ্চয়ই সময় কাটিয়েছেন? প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার অনলাইনের। লাজুক গলায় সায়নী জানিয়েছেন, এই একটি বিষয়ে একটু অন্য রকম তাঁর স্বামী। আড্ডবাজ নন। কথায় মাত করবেন, এমনটা তাঁর স্বভাবে নেই। সম্পর্কে থাকলে সারা ক্ষণ কথা বলতে হবে, মানেন না গুরবিন্দরজিৎ। সায়নীও এ বিষয়ে স্বামীকে সমর্থন করেন। তাই সারা দিন হুল্লোড়ের পর কিছুটা সময় পাশাপাশি চুপচাপ বসে সময় কাটিয়েছেন। পরস্পরের হাতে হাত রেখে। তাঁরা জানেন, ‘হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়, সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়’।
সায়নী-গুরবিন্দরজিৎ পায়ে হেঁটে গোটা শহর ঘুরে দেখেছেন। যখন খিদে পেয়েছে, নির্দ্বিধায় বসে পড়েছেন পথের ধারের রেস্তরাঁয়। পেট ভরতেই মন ভরাতে ডুব দিয়েছেন শহরের সৌন্দর্যে। এ ভাবেই দুটো দিন পাখা মেলে উড়ে গিয়েছে।
স্বামীর থেকে প্রথম শুভেচ্ছা পেয়েছেন সায়নী। খুব লাজুক গলায় নতুন বৌকে ভালবাসার কথা জানিয়েছেন তিনি। অভিনেত্রীর ভাল লেগেছে ছোট্ট সময়ে তাঁর স্বামী এত কিছু আয়োজন করেছেন দেখে। মাত্র এক বছরে গুরবিন্দরজিৎ যে তাঁকে এতখানি বুঝে ফেলবেন, ভাবতে পারেননি তিনি। প্রথম বছরের বিবাহবার্ষিকী তাই সারা জীবন মনে রাখবেন সায়নী।