অনির্বাণ ভট্টাচার্য সানজানা সরফের মেহরানের ‘অনি’! ছবি: ফেসবুক।
একটি পোস্ট সমাজমাধ্যমে। “ভারত দখল কি হয়ে গিয়েছে? না, ইয়ে মানে দখলের পর এই কিউট ছেলেটিকে আমার হাতে তুলে দেবেন। অনি শুধু আমার।” পাশে একাধিক হৃদয়ের চিহ্ন। সঙ্গে ‘অনি’র ছবি, তা থেকেই বোঝা যায় ‘তিনি’ অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
যিনি সমাজমাধ্যমে সকলকে জানিয়ে অভিনেতার উদ্দেশে এ ভাবে প্রেম নিবেদন করেছেন তিনি বাংলাদেশের অভিনেত্রী সানজানা মেহরান। ‘সুড়ঙ্গ’ ছবিতে আফরান নিশোর সহ-অভিনেত্রী। মঞ্চাভিনয়ের পাশাপাশি ও পার বাংলার বেতারশিল্পী। প্রয়োজনে বাচিক শিল্পী হিসাবে কণ্ঠদান করেন। লেখালিখিতেও তাঁর মন। এ হেন শিল্পকলায় যিনি আকণ্ঠ ডুবে, তিনি আপাতত কলকাতার অভিনেতাকে চোখে হারাচ্ছেন।
গত কয়েক মাসে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা যত না তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মশকরা চলছে সমাজমাধ্যমে। দু’দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ লড়াইয়ে বদলে বিষয়টিকে হালকা মেজাজে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আপ্রাণ। হয়তো উদ্দেশ্য একটাই, কাঁটাতারের দু’পাশে দুই বাঙালির মন যেন না রক্তাক্ত হয়।
সানজানাও যে ভাবে প্রেম প্রকাশ করেছেন তাতে ফুটে উঠেছে এ পারের অনির্বাণের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা। এ ভাবে প্রকাশ্যে প্রেম নিবেদন করছেন, আপনি খুব সাহসী? আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল তাঁর কাছে। অনির্বাণের কথা উঠতেই ফোনের ও পারের কণ্ঠে যেন আবেশের ছোঁয়া। নিটোল গলায় বললেন, “আমায় সকলে তাই-ই বলে। আর সমাজ যতই এগিয়ে যাক, এখনও মেয়েরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে। ফলে, নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে সাহসী তো হতেই হবে।” সমাজমাধ্যমে সানজানার পরিচয়জ্ঞাপক ছবি তাঁর কথাই সমর্থন করে। কপালে বড় লাল টিপ, চওড়া কাজল, গাঢ় লিপস্টিক। খোলা চুলে কাঠগোলাপ ছড়ানো। ভাল লাগার আবেশ ছড়িয়ে তাঁর আধবোজা চোখে, হাসিতে।
এই ছবিও বুঝি ভালবাসার প্রকাশ! কী দেখে এত প্রেম জাগল অনির্বাণের প্রতি?
অভিনেত্রীর কণ্ঠস্বর আরও দৃপ্ত, “বলুন, কী দেখে নয়! ওঁর সব কিছু ভাল লাগে। ওঁর চাহনি, হাসি, দাঁতের পাটি, ঠোঁট, উচ্চতা, কণ্ঠস্বর, উচ্চারণ...। কবিতা আবৃত্তি... সব স-অ-ব। ওঁকে ঘিরে শরীরী আবেদনের বলয়। কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না ‘অনি’কে!” বলতে বলতে বুঝি তাঁর চোখেমুখে লজ্জা রং ছড়াল। অনির্বাণকে খুব ভাল মনের মানুষ বলেও মনে হয় সানজানার। সর্বোপরি মঞ্চ। এ পার-ও পার বাংলার দুই থিয়েটার অভিনেতার মূল যোগসূত্র হয়ে উঠতেই পারে সেই মঞ্চ। সানজানা অবশ্য অনির্বাণের মঞ্চাভিনয় দেখার সুযোগ পাননি এখনও। দেখেছেন সমস্ত ছবি এবং সিরিজ়।
এমন প্রেম যাঁর মনে, তিনি কি হিংসে করেন না! ‘পাঁচফোড়ন’ আর ‘দশম অবতার’ ছবিতে অনির্বাণ যে জয়া আহসানকে ঠোঁট-ঠাসা চুমু খেয়ে ফেললেন...!
বুকে জ্বালা ধরেনি, হিংসা করেননি দুই দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে? প্রশ্ন শুনে আরও একপ্রস্ত হাসলেন সানজানা। “যা করেছেন সবই তো চিত্রনাট্যের খাতিরে, অভিনয় ও সব...!” তার পরেই জানালেন, তাঁরও অনির্বাণের সঙ্গে অভিনয়ের খুব ইচ্ছে। নায়িকা হতে পারলে অবশ্যই চুম্বনদৃশ্যে অভিনয় করবেন। সাহসী সানজানার জবাব সপাট।
কিন্তু এ জীবনে যদি অভিনয়ের সুযোগ না আসে? সানজানা জানালেন, আক্ষেপ নেই। হাত ধরে কিছু ক্ষণ বসে থাকতে পারলেই খুশি। অনির্বাণ বিবাহিত, জানেন? “ওটা কোনও সমস্যাই নয়। আমিও বিবাহিত, তিন ছেলের মা। স্বামীর সামনেই বলি, আমি অনির্বাণকে ভালবাসি। ওঁকে আমার করে পেতে চাই”, স্পষ্টভাষ অভিনেত্রী।
সদ্য সানজানা অভিনীত ছবি ‘নয়া মানুষ’ মুক্তি পেয়েছে। পরিচালক সোহেল রানা বয়াতি। সে ছবির প্রচারেই আপাতত ব্যস্ত তিনি। আগামী ছবির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। কলকাতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রয়েছে তাঁর। মায়ের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন শহরে। তখন নিউ মার্কেট, যমুনা সিনেমাহল, বড় বাজার-সহ একাধিক জায়গা ঘুরেছেন। অনির্বাণের কাছে আসছেন কবে? “পারলে এখনই যাই। জানেনই তো, ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত এখন সমস্যা রয়েছে”, উত্তরে যেন অনেক দিনের নীল নীলিমায় ভেসে এল এক টুকরো কালো মেঘ। কবে কাটবে মেঘ, জানে না এ পার, ও পার।
পর ক্ষণেই ঝলমলিয়ে উঠলেন, “অনিকে বলবেন, ওঁর জন্য খুব তাড়াতাড়ি শহরে আসছে তাঁর সানজানা।”
সানজানা জানাতে বললেন বটে, কিন্তু ব্যস্ত অনির্বাণকে ফোন করেও পায়নি আনন্দবাজার অনলাইন।