গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিজেপি-র ভোট শতাংশ বেড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলার ৩১ আসনে। যেখানে মঙ্গলবার তৃতীয় দফার ভোট। ২০১৬ সালে তৃণমূল এই ৩১ আসনের মধ্যে ২৯টিতে জিতেছিল। ২টি আসনের ১টি পেয়েছিল সিপিএম এবং ১ কংগ্রেস। অন্য দিকে, ২০১৯ লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফল বলছে, এই দুই কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে। কিন্তু, হুগলির দু’টি কেন্দ্রে গেরুয়া শিবির এগিয়ে। যদিও লোকসভা নির্বাচনে এই ৩১ কেন্দ্রে ভোট শতাংশ বেড়েছে তৃণমূলের। সুতরাং ভোট তৃতীয়ায় জোড়া ফুল চাইবে ২০১৯-এর ফল ধরে রাখতে। অন্য দিকে, পদ্মের চ্যালেঞ্জ তিন বছরের ভোট বৃদ্ধি ধরে রাখা। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার পালে হাওয়ায় ভর করে যদি তারা ৪টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারে, তা হলে বলতে হবে তারা ১০০ শতাংশ আসন বৃদ্ধি করেছে।
২০১৬ বিধানসভায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে কুলতলিতে একমাত্র লাল ঝান্ডা জিতেছিল। বাকি ১৫টি ছিল তৃণমূলের দখলে। অন্য দিকে, হাওড়ার আমতা কেন্দ্রে জিতেছিলেন কংগ্রেসের অসিত মিত্র। হাওড়ার বাকি ৬টি ও হুগলির ৮টি কেন্দ্রেই জিতেছিল শাসক দল। খাতা খুলতে পারেনি বিজেপি।
ভোট শতাংশ বিচার করলেও ২০১৬ বিধানসভায় বাকি সবার থেকে অনেকটাই এগিয়েছিল তৃণমূল। মোট ভোটের ৫০.১৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা। অন্যদিকে, মাত্র ১টি আসনে জিতলেও বামফ্রন্টের দখলে ছিল ২৮.২০ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পেয়েছিল ৯.৭১ শতাংশ ভোট। কোনও আসন না পেলেও গেরুয়া শিবিরের দখলে ছিল ৬.৯১ শতাংশ ভোট।
৩ বছর পরে ২০১৯ লোকসভায় অবশ্য ছবিটা বদলেছে। তৃণমূল ২৯টি কেন্দ্রে এগিয়ে থাকলেও ভোট বেড়েছে বিজেপি-র। লোকসভায় কুলতলি ও আমতা অর্থাৎ সিপিএম ও কংগ্রেসের জেতা দু’টি আসনে এগিয়েছে শাসক দল। হুগলির দু’টি আসন পুরশুড়া ও গোঘাটে তৃণমূলকে ছাপিয়ে এগিয়েছে বিজেপি।
কিন্তু বড় পরিবর্তন হয়েছে ভোট শতাংশে। তৃণমূলের ভোট শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ বিধানসভায় ৫০.১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ লোকসভায় হয়েছে ৫১.০৫ শতাংশ। অর্থাৎ তিন বছরে ০.৮৭ শতাংশ ভোট বেড়েছে শাসক দলের। ভোট শতাংশ অনেকটাই কমেছে সিপিএমের। ২৮.২০ শতাংশ থেকে তিন বছরে তাদের ভোট ২১.৪৯ শতাংশ কমে হয়েছে ৬.৭১ শতাংশ। ভোট কমেছে কংগ্রেসেরও। ২০১৬ সালে তাদের ভোট ছিল ৯.৭১ শতাংশ। ২০১৯ লোকসভায় তা কমে হয়েছে ১.৬২ শতাংশ। সিপিএমের ২১.৪৯ ও কংগ্রেসের ৮.০৯ অর্থাৎ ২৯.৫৮ শতাংশ ভোটের পুরোটাই গিয়েছে বিজেপি-তে। ২০১৬ বিধানসভার তুলনায় ৩০.৫৪ শতাংশ ভোট বেড়ে ২০১৯ লোকসভায় তাদের ভোট শতাংশ দাড়িয়েছে ৩৭.৪৫- এ।
ভোট শতাংশের বিচারে এখনও তৃণমূলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি। ১৩.৬ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে থাকলেও নির্বাচনের আগে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী গেরুয়া শিবির। কারণ, তৃণমূলের অনেক নেতা, এমনকি বিধায়কও নাম লিখিয়েছেন বিজেপি-তে। তাঁদের মধ্যে অনেককেই প্রার্থীও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইতিমধ্যেই এই জেলাগুলিতে ভোট প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
অন্যদিকে, নিজেদের গড় ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক সভা করছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩১-শে ৩১ করার ডাক দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। সেই সঙ্গে দু’দলই এ বার বেশ কিছু তারকা প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে। তাই তৃতীয় দফায় জোর টক্কর হতে চলেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।