নাচের পাশাপাশি অভিনয়ের শখ ছিল বরাবর। সহজ সাবলীল অভিনয় দিয়ে বাজিমাত করেছেন বিনোদনের একাধিক মাধ্যম। রাজনীতিতে এসেও বজায় রাখতে চান স্বকীয়তা। অভিনয়ের ব্যস্ত সূচির পাশাপাশি অঞ্জনা বসু এ বার সোনারপুর দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামায় অঞ্জনা জানিয়েছেন ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে তাঁর উপার্জন ছিল ১৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। তার আগের আর্থিক বছরে এই উপার্জনের অঙ্ক ছিল ১৬ লক্ষ ১৮ হাজার ১৩৬ টাকা।
অঞ্জনার স্বামী সুমন্ত্র বসুর ক্ষেত্রে ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে উপার্জনের পরিমাণ ২১ লক্ষ ৬০ হাজার ২৫২ টাকা। তার আগের আর্থিক বছরে তাঁর দাখিল করা উপার্জন ২০ লক্ষ ৮২ হাজার ৬৮৪ টাকা।
সুমন্ত্র-অঞ্জনার একমাত্র ছেলে অরিত্রর বয়স ২০ বছর। তিনি ছাত্র। উপার্জনের দিক থেকে এখনও বাবা মায়ের উপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে অঞ্জনার হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর স্বামীর হাতে আছে ৬০ হাজার টাকা। তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অঞ্জনার নামে গচ্ছিত আছে যথাক্রমে ২৫ লক্ষ ৮০ হাজার ১৬২ টাকা, ৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ৭২ হাজার ২০৬ টাকা। তাঁর স্বামীর নামে ব্যাঙ্কে আছে ৬০ হাজার টাকা।
বিমার ক্ষেত্রে অভিনেত্রী-রাজনীতিক বিনিয়োগ করেছেন ২৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৯১ টাকা। তাঁর স্বামী অবশ্য বিমায় বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনও নথি দাখিল করেননি। তাঁদের দু’জনের নামে কোনও ব্যাঙ্কঋণও নেই।
অঞ্জনার নামে গাড়ি রয়েছে তিনটি। মাহিন্দ্রা এসইউভি ৫০০, মারুতি অল্টো এবং হুন্ডাই আই ২০। সুমন্ত্রর নামে একটি হুন্ডাই গ্র্যান্ড আই টেন ছাড়াও আছে হিরো হন্ডার মোটরবাইক।
সোনারপুর দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী অঞ্জনার কাছে থাকা ১২০ গ্রাম সোনার গয়নার বাজারমূল্য ৫ লক্ষ ৮১ হাজার ২২২ টাকা। তাঁর স্বামীর নামে গচ্ছিত ১০ গ্রাম সোনার গয়নার মূল্য ৫০ হাজার টাকা।
যাদবপুরের জুবিলি পার্কে যে ফ্ল্যাটে অঞ্জনা থাকেন, তাঁর মালিকানা যুগ্ম ভাবে রয়েছে তাঁর এবং স্বামী সুমন্ত্রর নামে। এ ছাড়াও তাঁদের একটি ফ্ল্যাট আছে যাদবপুরের রসা রোডে। পাশাপাশি অঞ্জনার আরও একটি বাড়ি আছে শান্তিনিকেতনে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে সাম্মানিক স্নাতক অঞ্জনা নিজের পেশা অভিনয় বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর স্বামী চাকরি করেন।
ভোটের ময়দানে নতুন হলেও অঞ্জনার অভিনয়জীবন বেশ কয়েক দশকের। মডেলিং দিয়ে শুরু। তার পর নজর কাড়েন ‘রবির আলোয়’ ধারাবাহিকে।
ছবিতে আত্মপ্রকাশ ২০০৫ সালে। প্রথম ছবি ‘রাত বারোটা পাঁচ’। এর পর ক্রমে ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’, ‘দম কাটা’, ‘অংশুমানের ছবি’, ‘ছ-এ ছুটি’, ‘বাই বাই ব্যাঙ্কক’, ‘ল্যাপটপ’, ‘রুম নাম্বার ১০৩’, ‘ব্যোমকেশ ফিরে এল’, ‘অভিমান’-সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় বাংলা ছবির অংশ তিনি।
তবে ছবির তুলনায় অঞ্জনা অনেক বেশি সফল ছোটপর্দায়। অমল পালেকরের পরিচালনায় হিন্দি ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’ তাঁর কেরিয়ারে অন্যতম মাইলফলক। এ ছাড়া ‘গানের ওপারে’, ‘আলপনা’, ‘ভালবাসা ডট কম’, ‘প্রবাহিনী এই সময়’, ‘অসম্ভব’, ‘জাগরণ’, ‘ঘরের ভিতর ঝড়’, ‘বিধির বিধান’, ‘বিজয়িনী’ এবং ‘বধূবরণ’ ধারাবাহিকে অঞ্জনার অভিনয় দর্শকমনে দাগ কেটে গিয়েছে।
ধারাবাহিক, ছবির মতো অঞ্জনা অভিনয় করেছেন বেশ কিছু ছকভাঙা টেলিছবিতেও। ‘পরকীয়া’, ‘ঝুমুরিয়া’, ‘ডার্ক রুম’, ‘যে যেখানে দাঁড়িয়ে’, ‘ফিরে দেখা’, ‘একমুঠো কাশফুল’, ‘দিনান্তে’, ‘অদ্ভুত নকশা’-র টেলিছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল।
অঞ্জনার বাবা অভিনয় করতেন নাটকে। তবে চেয়েছিলেন মেয়ে আগে পড়াশোনা শেষ করুক। হাওড়া গার্লস স্কুলের পরে অঞ্জনার পড়াশোনা বিজয়কৃষ্ণ কলেজে। মনোবিদ্যায় স্নাতক হওয়ার পরে চলে আসেন কলকাতায়। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ভর্তি হন স্নাতকোত্তরে।
কিন্তু স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। বিয়ের পরে অঞ্জনাকে চলে যেতে হয় পটনা। অভিনয়ের টানে ফিরে আসেন কলকাতায়। প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিলে তিলে তৈরি করেন নিজের অভিনেত্রী-পরিচয়। এ বার তাঁর নতুন লড়াই দেখার অপেক্ষায় রাজনীতির দুনিয়া।