চিরাগ পাসোয়ান। —ফাইল চিত্র।
টিকিট বণ্টন নিয়ে অসন্তোষের জের। চিরাগ পাসোয়ানের দলের ২২ জন নেতা শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে জানিয়ে দিলেন, এনডিএ নয়, লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে সমর্থন করবেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে রয়েছেন চিরাগের দল লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-এর প্রাক্তন বিধায়ক এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও। টিকিট না মেলায় তাঁরা সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রামবিলাস-পুত্র চিরাগের বিরুদ্ধে।
এই ২২ জন নেতাই দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ টাকার বিনিময়ে দলের বাইরের লোকেদের প্রার্থী করা হয়েছে। দল থেকে ইস্তফা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রাক্তন সাংসদ রেণু কুশওয়াহা বলেন, “দলের লোকেদের প্রার্থী না করে বাইরের লোকেদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে।” তার পরই চিরাগের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “আমরা কি আপনার দলের কর্মচারী, যারা আপনার জন্য খেটে আপনাকে নেতা বানাবে?” তার পরই ২২ জন বিদ্রোহী নেতার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে প্রাক্তন বিধায়ক তথা চিরাগের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সতীশ কুমার জানান, তাঁরা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ-কে নয়, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে সমর্থন করবেন।
বিদ্রোহী নেতাদের তালিকায় আরও যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা হলেন রবীন্দ্র সিংহ, অজয় কুশওয়াহা, সঞ্জয় সিংহ এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজেশ ডাঙ্গি। প্রসঙ্গত, এনডিএ জোটের শরিক হিসাবে বিহারের ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৫টিতে লড়ছে চিরাগের দল। এই আসনগুলি হল বৈশালী, হাজিপুর, সমস্তিপুর, খাগাড়িয়া এবং জামুই।
২০১৯ সালে এনডিএ-র শরিক হিসাবে ছ’টি আসনে লড়ে সব ক’টিতেই জিতেছিল সাবেক লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি)। রামবিলাসের মৃত্যুর পর আড়াআড়ি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় তাঁর দল এলজেপি। রামবিলাসের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে চিরাগ এবং তাঁর কাকা পশুপতির মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এনডিএ ছাড়েন চিরাগ। কিন্তু নিজের দল রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি (আরজেএলপি)-কে নিয়ে এনডিএ-তে থেকে যান পশুপতি।
সম্প্রতি, চিরাগ আনুষ্ঠানিক ভাবে এনডিএ-তে ফেরেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ২০২১-এর মধ্যপর্বে এলজেপির ভাঙনের সময় বিজেপি দাঁড়িয়েছিল তাঁর কাকা পশুপতি পারসের পাশে। সে সময় পশুপতি-সহ লোকসভায় দলের পাঁচ সাংসদ এক দিকে ছিলেন। অন্য দিকে একা চিরাগ। সেই পরিস্থিতিতে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা পশুপতি গোষ্ঠীকেই ‘এলজেপি সংসদীয় দলের’ স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এনডিএ জোটে পশুপতি গোষ্ঠীকে স্থান দিয়েছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও চিরাগকে ব্রাত্য করে পশুপতিকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন।
রামবিলাসের যে দলিত ভোটব্যাঙ্ক, তা চিরাগের সঙ্গেই রয়েছে, এমন ইঙ্গিত পেয়েই তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে পদ্মশিবির। পশুপতিকে ব্রাত্য করে চিরাগকেই এলজেপি-র ভাগের আসন দেওয়া হয়। অভিমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব এবং এনডিএ-দুইই ছাড়েন পশুপতি। সম্প্রতি তিনি অবশ্য সুর নরম করার চেষ্টা করেছেন।