দলবদলু বিরোধী নেতা-নেত্রীরা।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘নজরে’ থাকা মোট ২৫ জন বিরোধী নেতা-নেত্রী বিজেপিতে বা বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএতে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত চলাকালীন এই ঘটনা ঘটেছে বলে বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, সরাসরি বিজেপি বা তাদের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ার পরে ওই ২৫ জনের মধ্যে ২৩ জনই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত থেকে রেহাই পেয়েছেন বলে ওই প্রতিবেদন জানাচ্ছে। এঁদের মধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২০ জনের ক্ষেত্রে তদন্ত চলে গিয়েছে ‘হিমঘরে’।
কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধীরা গত এক দশকে বারে বারেই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ওয়াশিং মেশিন’ রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহারের অভিযোগ আরও জোরালো করেছে।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে পদ্মশিবিরে শামিল হওয়া নেতাদের তালিকায় আছেন কংগ্রেসের ১০ নেতা, এনসিপি এবং শিবসেনার চার জন, তৃণমূলের তিন, টিডিপির দু’জন নেতা। সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এবং ওয়াইএসআরসিপি-র এক জন করে নেতা। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া তিন নেতাই পশ্চিমবঙ্গের— শোভন চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী এবং তাপস রায়। তাঁদের মধ্যে শেষ দু’জন এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা অধুনা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ২০১৬-য় নারদ মামলায় অভিযুক্ত। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভনের বিরুদ্ধেও রয়েছে নারদ মামলা। ২০১৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শোভন ২০২১ সালের মে মাসে মোদীর দল ছাড়ার পরেই গ্রেফতার হয়েছিলেন নারদ মামলায়। ২০২০-তে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে শুভেন্দু সেই দলেই রয়েছেন। তাঁকে গ্রেফতারও হতে হয়নি।
অন্য দিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বরাহনগরের তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক তাপসের বৌবাজারের বাড়িতে পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডির গোয়েন্দারা। ঘটনাচক্রে, তার দু’মাসের মাথাতেই বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন তাপস। এ বার লোকসভা ভোটে তিনি উত্তর কলকাতায় ‘পদ্ম’ চিহ্নের প্রার্থী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের মুখে পড়া অন্য যে বিজেপিতে (বা এনডিএতে) যোগদানকারী বিরোধী নেতা-নেত্রীদের নাম রয়েছে তাঁর হলেন, অজিত পওয়ার (এনসিপি), প্রফুল্ল পটেল (এনসিপি), প্রতাপ সরনায়েক (শিবসেনা), হিমন্ত বিশ্বশর্মা (কংগ্রেস), হাসান মুশরিফ (এনসিপি), ভাবনা গাওলি (শিবসেনা), যামিনী এবং যশবন্ত যাদব (শিবসেনা), সিএম রমেশ (টিডিপি), রনিন্দর সিংহ (কংগ্রেস, পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দরের পুত্র), সঞ্জয় শেঠ (এসপি), কে গীতা (ওয়াইএসআরসিপি), ছগন ভুজবল (এনসিপি), কৃপাশঙ্কর সিংহ (কংগ্রেস), দিগম্বর কামথ (কংগ্রেস), অশোক চহ্বাণ (কংগ্রেস), নবীন জিন্দল (কংগ্রেস), অর্চনা পাটিল (কংগ্রেস), গীতা কোড়া (কংগ্রেস), বাবা সিদ্দিকি (কংগ্রেস), জ্যোতি মির্ধা (কংগ্রেস) এবং সুজনা চৌধরি (টিডিপি)।