গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে প্রথম দফার ভোটে কোচবিহার আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে নামছে বিজেপি। আর তৃণমূলের লড়াই আসন ফিরে পাওয়ার। মাত্র দু’দশক আগেও কোচবিহার নামক ‘বামদুর্গে’ এমন ভাবাও যেত না। কিন্তু এখন ওই আসনে বামেরা কার্যত আর প্রাসঙ্গিক নয়। বরাবরই এই আসন ছিল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের (ফব)। ১৯৬৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত টানা কোচবিহারে জিতেছে ফব। তাদের অমর রায়প্রধান একাই আট বার সাংসদ হয়েছেন এই আসন থেকে।
কিন্তু রাজ্যে ‘পালাবদল’-এর পরে আর বামেরা কোচবিহারে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বরং প্রতি নির্বাচনেই একটু একটু করে কমেছে তাদের শক্তি। ২০১৪ সালে তৃণমূলের রেণুকা সিংহ জিতেছিলেন। তবে দু’বছরের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হওয়ায় উপনির্বাচনে বড় জয় পান তৃণমূলের পার্থপ্রতিম রায়। সেই বছরেই কোচবিহারে উত্থান দেখা যায় বিজেপির। প্রথম বার দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে তারা। তার পাঁচ বছর পরেই পদ্ম প্রতীকে জেতেন নিশীথ প্রামাণিক।
নিশীথ জিতেছিলেন বটে কোচবিহারে। তবে ব্যবধান খুব বড় ছিল না। যদিও পদ্মের উত্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। নিশীথ জেতেন ৫৪ হাজার ২৩১ ভোটে। আর বিজেপির প্রাপ্ত ভোট পৌঁছে যায় ৪৭.৯৮ শতাংশে। বৃদ্ধি ৩১.৬৪ শতাংশ! তৃণমূলের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ফল। কারণ, লোকসভার ফলাফলের নিরিখে সংসদীয় এলাকার সাতটির মধ্যে পাঁচটিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। তার ছাপ পড়ে ২০২১ সালে। সেই বছরে নীলবাড়ির লড়াইয়ে কোচবিহার উত্তর ও দক্ষিণ ছাড়াও মাথাভাঙা, দিনহাটা, শীতলখুচি ও নাটাবাড়িতে জয় পায় পদ্ম। তবে সাংসদ নিশীথ দিনহাটায় জিতেছিলেন মাত্র ৫৭ ভোটে! কিন্তু তিনি বিধায়ক পদ না নেওয়ায় উপনির্বাচনে ওই আসনে ৮৪.১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ১,৬৪,০৮৯ ভোটে জেতেন তৃণমূলের উদয়ন গুহ।
রাজ্যের মন্ত্রী হন ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রথমে হেরে যাওয়া উদয়ন। অন্য দিকে, কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব পান নিশীথও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ এ বারেও কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী। তাঁর বিপক্ষে তৃণমূলের প্রার্থী সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। নিশীথের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আবার জগদীশের হয়ে প্রচার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারে গিয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ভোটের ইতিহাস বলছে, রাজবংশী অধ্যুষিত এই এলাকায় কারা ওই সম্প্রদায়ের ভোট বেশি পাবে, সেটাই কোচবিহারের নির্বাচনী ফলাফল ঠিক করে দেয়। তাই রাজবংশী নেতা অনন্ত রায়কে সংসদে পাঠিয়েছে বিজেপি। তবে তাতে যে খুব বেশি লাভ হয়েছে পদ্মশিবিরের, তা হলফ করে বলা যাবে না। কারণ, অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পরেও জলপাইগুড়ি জেলার জেতা আসন ধূপগুড়িতে উপনির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হয়েছে। তবে বিজেপি শিবির বলতেই পারে যে, উপনির্বাচনের ফলের সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনের তুলনা করা যায় না। সাধারণত উপনির্বাচনে রাজ্যের শাসকদলই জয়ী হয়। বরং ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে মাত্র ৪,৩০৯ ভোটে শাসকদলের কাছে হার বলে দেয় না যে, রাজবংশীরা বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
কোচবিহারে এ বার তৃতীয় শক্তি কে হবে, সেই লড়াইও থাকবে। কারণ, কংগ্রেসের সঙ্গে বামের জোট হয়নি এই আসনে। ২০১৯ সালে ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে ছিল ৩.০৭ শতাংশ ভোট আর কংগ্রেসের ঝুলিতে ভোট পড়েছিল ১.৮৫ শতাংশ। ২০২১ সালে যৌথ ভাবে ৩.৭০ শতাংশ। এ বার কে হবে তৃতীয়? কোচবিহারে সেটাও প্রশ্ন।