TMC Gana Jagarana Rally

সব ছকে বাঁধা, সংগঠিত, পরিকল্পিত! এই প্রথম এমন পেশাদার ব্রিগেড সমাবেশ দেখছে বাংলার রাজনীতি

দিন বদলেছে। সময় বদলেছে। রাজনীতিতেও অনেক পুরনো আঙ্গিক প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। তৃণমূল হয়তো সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই আয়োজন করেছে সভার। তাতে খরচ নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষও রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ২২:২৮
TMC Brigade Rally is going to show a new professional arrangement and look

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

লাল শালু দিয়ে মোড়া মঞ্চ অনেক দেখেছে ব্রিগেড। তেরঙা বা গেরুয়া মঞ্চও কম হয়নি গড়ের মাঠে। কালের নিয়মে বাম-ডান নির্বিশেষে ব্রিগেডে মঞ্চের ধরন বদলেছে। থার্মোকল থেকে ফ্লেক্স হয়েছে। বিজেপির ব্রিগেডে হ্যাঙারের বন্দোবস্তও দেখেছে ময়দান। কিন্তু নতুন দিনের রাজনীতিকের হাতে নতুন দিনের ব্রিগেড নতুন ইতিহাস লিখতে চলেছে রবিবার। তৃণমূলের ‘জনগর্জন সভা’য় যে পরিকাঠামোগত পরিকল্পনা কষা হয়েছে তার গোটাটাতেই কর্পোরেট ধাঁচ স্পষ্ট। এটাও স্পষ্ট যে, রবিবারের ব্রিগেডের পুরো নকশা আঁকা হয়েছে ক্যামাক স্ট্রিটে বসে। যার নেপথ্যে রয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দিন বদলেছে। সময় বদলেছে। রাজনীতিতেও অনেক পুরনো আঙ্গিক প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। তৃণমূল হয়তো সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই আয়োজন করেছে সভার। তাতে অর্থ খরচ নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষও রয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, ব্রিগেডে নতুন ঘরানা তৈরি হতে চলেছে।

এমনিতে ব্রিগেডে মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকে। অনেক সময়ে কাজ করে না ইন্টারনেটও। রবিবার মিডিয়া জ়োনে পৃথক ভাবে ওয়াইফাইয়ের বন্দোবস্ত রাখছে তৃণমূল। মূল মঞ্চের সামনের ৩৩০ ফুট লম্বা র‌্যাম্প ইতিমধ্যেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যা সাধারণত দেশ-বিদেশের কনসার্টে দেখা যায়, তা-ই তৈরি হয়েছে তৃণমূলের রাজনৈতিক সভায়। সভার আগে তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মঞ্চের উচ্চতা, দৈর্ঘ্য, প্রস্থও। মূল মঞ্চ লম্বায় ৭২ ফুট, গভীরতায় ২০ ফুট। আর মাটি থেকে ১২ ফুট উপরে। মূল মঞ্চের পাশে দু’টি তুলনামূলক ছোট মঞ্চ থাকবে। সেগুলির দৈর্ঘ্য ৬৮ ফুট এবং প্রস্থ ২৮ ফুট।

মঞ্চের ব্যাকড্রপে থাকছে এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড। তৃণমূলের অনেকেই মনে করে বলতে পারছেন না, দলের কোনও কর্মসূচিতে এই ধরনের পরিকাঠামো এর আগে দেখেছেন কি না। বস্তুত, শুধু পরিকাঠামো বন্দোবস্ত নয়, গোটা কর্মসূচিতে সাংগঠনিক বাঁধুনিও থাকছে নজর করার মতো। মূল মঞ্চে এবং দু’পাশের দু’টি মঞ্চে কারা বসবেন সব তালিকা করা রয়েছে। কোন জেলা পরিষদ সভাধিপতি এক নম্বর মঞ্চে, কোন সাংসদ দুই নম্বর মঞ্চে, কোন বিধায়ক কোথায় বসবেন সবটা ছকে বাঁধা ইতিমধ্যেই। প্রত্যেককে কার্ড সংগ্রহ করে রাখতে হয়েছে শনিবার রাতের মধ্যেই। অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে কেউ দূত পাঠিয়ে, কেউ সশরীরে গিয়ে গলায় ঝোলানোর কার্ড সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় যেমন দেখা গেল অভিষেকের অফিসে কার্ড আনার জন্য দূত পাঠিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নুর, জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি থেকে শুরু করে সদ্য বিজেপি থেকে তৃণণূলে যোগ দেওয়া মুকুটমণি অধিকারীরা। আবার সশরীরে কার্ড আনতে গিয়েছিলেন ধূপগুড়ির বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়, মেখলিগঞ্জের বিধায়ক তথা মন্ত্রিত্ব খোয়ানো পরেশ অধিকারীর মতো অনেকে। যাঁরা দূত পাঠিয়েছিলেন, তাঁদেরও দূতের নাম আগাম জানিয়ে রাখতে হয়েছিল। তা মিলিয়ে নিয়ে, তালিকায় টিক দিয়েই কার্ড হস্তান্তর করা হয়েছে।

সমান্তরাল ভাবে সমাজমাধ্যমের প্রচারকেও সংগঠিত আকারে জারি রাখতে চাইছে তৃণমূল। দেশের রাজনীতিতে সমাজমাধ্যমকে প্রথম অস্ত্র করা দেখিয়েছিল বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট তার সাক্ষী। তার পর ধীরে ধীরে সব দলই কম-বেশি আইটি সেল তৈরি করেছে। তৃণমূলও তাকে ঢেলে সাজিয়েছে গত কয়েক বছরে। এ বার লোকসভা ভোটের আগে, এখনও পর্যন্ত একটি ঘটনার কারণে বিজেপির থেকে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। প্রথম দফায় বাংলায় ২০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিজেপি। তাতে আসানসোলে নাম ছিল ভোজপুরি গায়ক পবন সিংহের। কিন্তু সেই পবন কোন গানে বাঙালি মেয়েদের ‘অসম্মান করেছিলেন’, তা তুলে ধরে সমাজমাধ্যমে ঝড় বইয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপির আইটি সেল পাল্টা ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, লাভ হয়নি। পরের দিনই পবন ঘোষণা করে দেন, তিনি আসানসোলে লড়বেন না। রবিবারের ব্রিগেডের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বার্তা, ছবিকে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া শাসকদল। তার জন্য ব্রিগেডের মঞ্চের পিছনেই থাকবে ‘ফিড রুম’।

ব্রিগেডের মাঠ থেকে অনেক দিন-বদলের স্লোগান, বক্তৃতা শুনেছে বাংলা তথা দেশের রাজনীতি। সেই ব্রিগেড রবিবার দেখতে চলেছে ব্রিগেডেরই আবার এক বদলে যাওয়ার ছবি।

আরও পড়ুন
Advertisement