প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
লোকসভা নির্বাচনে নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হতেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বার্তা দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লিখেছেন, ‘‘গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবের সূচনা হয়ে গেল। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। বিজেপি-এনডিএ, নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন এবং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ভিত্তিতেই আমরা জনগণের কাছে পৌঁছব।’’
প্রথম দফায় (১৯ এপ্রিল)— পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, লক্ষদ্বীপ, আন্দামান নিকোবার, বিহার, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম, অরুণাচলপ্রদেশ
দ্বিতীয় দফা (২৬ এপ্রিল)— কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা
তৃতীয় দফা (৭ মে)— জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, দাদরা-নগর হভেলী ও দমন-দিউ
চতুর্থ দফা (১৩ মে)— মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড
পঞ্চম দফা (২০ মে)— লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র
ষষ্ঠ দফা (২৫ মে)— দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা
সপ্তম দফা (১ জুন)— হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা
প্রথম দফা (১৯ এপ্রিল)— কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি
দ্বিতীয় দফা (২৬ এপ্রিল)— রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, দার্জিলিং
তৃতীয় দফা (৭ মে)— মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর
চতুর্থ দফা (১৩ মে)— বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল
পঞ্চম দফা (২০ মে)— শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর, হুগলি, বনগাঁ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, আরামবাগ
ষষ্ঠ দফা (২৫ মে)— পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুর
সপ্তম দফা (১ জুন)— উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, যাদবপুর, জয়নগর, বসিরহাট, বারাসত, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, দমদম
পশ্চিমবঙ্গে ভোট হবে সাত দফাতেই। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে সাত দফায় ভোট হবে। গত লোকসভা নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে সাত দফাতেই লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম দফায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে ভোট।
রাজীব জানান, মোট সাত দফায় নির্বাচন হবে। প্রথম দফার ভোট হবে ১৯ এপ্রিল। দ্বিতীয় দফার ভোট হবে ২৬ এপ্রিল। তৃতীয় দফার ভোট হবে ৭ মে। চতুর্থ দফার ভোট হবে ১৩ মে। পঞ্চম দফার ভোট হবে ২০ মে। ষষ্ঠ দফার ভোট হবে ২৫ মে। সপ্তম দফার ভোট হবে ১ জুন। ৪ জুন ভোটগণনা।
Watch LIVE : Press Conference by Election Commission to announce schedule for General Elections 2024 to Lok Sabha & State Assemblies https://t.co/M8MRkdUdod
— Election Commission of India (@ECISVEEP) March 16, 2024
সিকিম, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ— চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও হবে লোকসভার সঙ্গে। পাশাপাশি, বিহার, গুজরাত, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক, তামিলনাড়ুতে উপনির্বাচন লোকসভার সঙ্গেই হবে বলে রাজীব জানিয়েছেন।
অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন— ১৯ এপ্রিল
সিকিমে বিধানসভা নির্বাচন— ১৯ এপ্রিল
অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন— ১৩ মে
ওড়িশায় বিধানসভা নির্বাচন হবে চার দফায়, যথাক্রমে— ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে এবং ১ জুন।
চার রাজ্যেই গণনা ৪ জুন।
এক দশক পরেও বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে না জম্মু ও কাশ্মীরে। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার লোকসভা ভোটের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করলেও ব্রাত্য থেকে গেল দেশের বৃহত্তম (আয়তনের হিসাবে) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি।
রাজীব জানান, রাজনৈতিক দলগুলিকে নোটিস পাঠানো হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে আমাদের নির্দেশিকা থাকবে। যাতে নির্বাচনী আচরণ বিধি বজায় থাকে সে দিকেও নজর রাখা হবে। প্রচারের সময় প্রার্থীরা যাতে কোনও ভাবেই সীমা অতিক্রম না করেন, সে দিকেও নজর দিতে হবে প্রার্থীদেরই। কোনও রকম ভাবে বাজে ভাষার ব্যবহার করা যাবে না। শিশুদের প্রচারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। ২১০০ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। ওই পর্যবেক্ষকদের কাজ, সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর দেওয়া।
ভুয়ো খবরের সঙ্গেও লড়াই করবে নির্বাচন কমিশন। রাজীব জানান, কোনও রকম ভুয়ো খবর যাতে না ছড়ায় তার দিকে নজর থাকবে। তার জন্য অনেক ব্যবস্থা থাকছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। কী ভাবে ভুয়ো খবরের রমরমার সঙ্গে লড়াই করতে হবে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ভোটকর্মীদের। অভিযোগ পেলেই কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
রাজীব বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে বেশ কিছু বাধা পেরোতে হবে কমিশনকে। তার জন্য অনেক কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে, যাঁরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। হিংসা বা রক্তক্ষয় হতে দেওয়া যাবে না।’’ তিনি জানান, কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে জানানো যাবে কমিশনকে। সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করবে কমিশন। জেলাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কোনও রকম অস্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ভোটের দায়িত্বে রাখা যাবে না। সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের হিংসার বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
ভোটে যথেচ্ছ ভাবে টাকা ব্যবহার করাও রদ করা হবে বলে জানালেন রাজীব। তিনি জানান, কয়েকটি রাজ্যে ভোটে টাকার ব্যবহার বেশি হয়। সেগুলির দিকে নজর রাখছে কমিশন। টাকার অপব্যবহার হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কোনও রকম উপঢৌকন যাতে না দেওয়া হয়, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে সংস্থাগুলিকে। সমস্ত বিমানবন্দরগুলির দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। রাজ্যগুলিতে কোনও হেলিকপ্টার নামলে, তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে।
সকলকে ভোট দিতে আসার আবেদন জানালেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। রাজীব জানান, লোকসভা ভোটের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘নো ইওর ক্যান্ডিডেট’ নামে নতুন অ্যাপ চালু করা হচ্ছে, যেখানে প্রার্থীদের বিষয়ে বিশদে জানা যাবে।
রাজীব জানান, নতুন ভোটারদের মধ্যে ৮৫ লক্ষের বেশি মহিলা। ৮২ লক্ষ এমন ভোটার রয়েছেন, যাঁদের বয়স ৮৫ বছরের বেশি। প্রত্যেক বুথ কেন্দ্রে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। পুরুষ এবং মহিলাদের আলাদা আলাদা শৌচালয় থাকবে। প্রবীণ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম যাঁরা ভোট দিতে আসতে পারবেন না, তাঁদের ভোট বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসা হবে।
রাজীব জানালেন, এ বার মোট ভোটারের সংখ্যা ৯৬.৮ কোটি। যার মধ্যে ৪৯.৭ কোটি পুরুষ এবং ৪৭.১ কোটি মহিলা। রূপান্তরিত এবং রূপান্তরকামী ভোটারের সংখ্যা ৪৮ হাজার। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ১.৮২ কোটি নতুন ভোটার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পুরুষ এবং মহিলা ভোটারদের অনুপাত ভাল হয়েছে। দেশের ১২টি রাজ্যে মহিলা ভোটারদের সংখ্যা বেশি।’’
রাজীব বলেন, ‘‘গত এক বছরের মধ্যে ১১টা নির্বাচন হয়েছে। সে ভাবে কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। যেখানে হিংসার ঘটনা ঘটত, সেখানেও কমেছে। ভুয়ো খবর ছড়ানোর বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ করেছি।’’
নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা শুরু হল। ঘোষণা করতে বসেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। তাঁর ডান দিকে বসেছেন জ্ঞানেশ কুমার। বাঁ দিকে সুখবীর সিংহ সান্ধু। রাজীব বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। ১৬ জুন ১৭তম লোকসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আমরা কী ভাবে নিজেদের তৈরি করেছি তা বলব। এ বার আমাদের ৯৭ কোটি ভোটার রয়েছে। ১০.৫ লক্ষ ভোট কেন্দ্র রয়েছে। ৫৫ লক্ষ ইভিএম থাকছে।’’
লোকসভা নির্বাচনের দিন শুক্রবার পর্যন্ত ঘোষিত হয়নি। দেশে এক জন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ মোট তিন জন নির্বাচন কমিশনারের থাকার কথা। এত দিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এবং নির্বাচন কমিশনার অরুণ গয়ালই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তৃতীয় নির্বাচন কমিশনারের পদটি দীর্ঘ দিন ধরেই শূন্য। কিন্তু গত শনিবার হঠাৎই ইস্তফা দেন অরুণ। দু’টি পদ খালি হয়ে যায় কমিশনে। কেবল মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বেই দেশে লোকসভা নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। বৃহস্পতিবারই সেই শূন্যপদ পূরণ হয়েছে। দেশের দুই নির্বাচন কমিশনারের পদে এসেছেন সুখবীর সিংহ সান্ধু এবং জ্ঞানেশ কুমার।
নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার সঙ্গেই সারা দেশে চালু হয়ে যাবে আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি। অর্থাৎ, নতুন কোনও প্রকল্পের ঘোষণা করতে পারবে না কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি। গুগ্ল, ফেসবুক, টুইটার-সহ সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের নথি জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে মাইক, লাউড স্পিকারের ব্যবহার।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচন ক’দফায় হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে সাত দফায় ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল নয় দফায়।
শনিবার দুপুর ৩টেয় নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্টও প্রকাশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্রের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে এই তথ্য জানানো হয়। পরে পোস্টটি শেয়ার করা হয় নির্বাচন কমিশনের এক্স হ্যান্ডলে। এক্সের পোস্টে লেখা হয়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং ‘কিছু’ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হবে শনিবার দুপুর ৩টেয়। তবে নির্দিষ্ট করে কোনও রাজ্যের নাম লেখা হয়নি। কমিশনের তরফে সমাজমাধ্যমে সাংবাদিক বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোট-দামামা বেজে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।