—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রথম দফা ভোটের আগেই বঙ্গে আরও ১০০ কোম্পানি বাহিনী পাঠানো হচ্ছে বলে সোমবার কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। এখন রাজ্যের কাছে ১৭৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, নতুন যে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে আসার কথা, তার মধ্যে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলায় নিযুক্ত থাকা-সহ সিআরপিএফ আসছে ৫৫ কোম্পানি, বিএসএফ ৪৫ কোম্পানি (মণিপুরে নিযুক্ত থাকা ২৫ কোম্পানি-সহ)।
১৯ এপ্রিল প্রথম দফা ভোটের আগেই এত বাহিনী পাঠানোর পিছনে কমিশন কর্তাদের যুক্তি, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে রাজ্যের একশো শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর ধরেই ভোট প্রস্তুতি নিতে চাইছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রের দাবি, একশো শতাংশ বুথে (রাজ্যে মোট বুথ ৮০ হাজার ৫৩০) কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দিয়েই ভোট করানোর চেষ্টা চলছে। ফলে সেই দিক থেকে কোনও বুথ আর আলাদা করে স্বাভাবিক থাকছে না। কমিশনের নজরে তা স্পর্শকাতরই থাকছে।
প্রসঙ্গত, এই লোকসভা ভোটে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ, ৯২০ কোম্পানি বাহিনী পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশন। পর্যবেক্ষকদের অনেকের অনুমান, ভবিষ্যতে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভোট বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, বিগত ভোটে গোলমাল, কম ভোটদানের হার, ভোটদানে বাধা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ইত্যাদি একাধিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে স্পর্শকাতর বুথ নির্বাচন করা হয়ে থাকে।
এই সব অভিযোগ সামনে রেখেই সোমবার কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক অনিল কুমার শর্মার সঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন। গত বিধানসভা ভোটের পরের হিংসা নিয়ে তাঁকে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় রাজ্যের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে ভোট হবে। কিন্তু সেই তিন আসনের সর্বত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। কারণ, সব বুথে দেওয়ার মতো সংখ্যায় বাহিনী নেই রাজ্যে। ভিন্ রাজ্য থেকে সশস্ত্র পুলিশ এনে তাদেরই কেন্দ্রীয় বাহিনী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। কমিশন-কর্তাদের একাংশের মতে, প্রথম দফার পরে বাহিনী পেতে আর কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, অন্য অনেক জায়গায় ভোট হয়ে যাবে। দফা যত এগোবে, বাহিনী পাওয়ার রাস্তা তত প্রশস্ত হবে। সপ্তম দফায় ভোট হবে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে।
অন্য দিকে কমিশন জানিয়েছে, প্রথম দফার আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট নেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে ভোটকর্মীদের সঙ্গে অর্ধেক সেকশন (চার জন) কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং দুই-চার জন রাজ্য পুলিশ থাকবেন। কমিশনের নির্দেশ, প্রচারের সময়ে নকল ব্যালট ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট বিধি মানতে হবে। তাতে সেই নকল ইউনিট কাঠ, প্লাস্টিক বা প্লাইয়ে তৈরি হতে হবে। আয়তন হতে হবে আসলের অর্ধেক। বাদামি, হলুদ বা ধূসর রং করা যেতে পারে তাতে। পাশাপাশি সাইলেন্স পিরিয়ডে (ভোট শেষের সময় থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে) সংবাদমাধ্যম, গণমাধ্যম বা সিনেমা হলে এমন কিছু দেখানো যাবে না, যা ভোটারদের প্রভাবিত করে বা ভোটের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলে।
সূত্রের খবর, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পৃথক পদক্ষেপ করতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জানা গিয়েছে, ভোটার, আধার বা ১০টি পরিচয়পত্রের মধ্যে একটিও না-থাকলে বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের দেওয়া স্লিপের ভিত্তিতে ভোট দিতে পারবেন সেই সমস্ত ভোটারেরা। কিছু দিন আগেই জলপাইগুড়িতে এমন বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে।
আজ, মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন বিশেষ সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক। এলাকা পরিদর্শন এবং ভোট প্রস্তুতি খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরিন্দম নিয়োগী জানিয়েছেন, সোমবার পর্যন্ত মদ, মাদক, নগদ, দামী ধাতু মিলিয়ে ১৯৯.৫৫ কোটি টাকার জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।