তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। — ফাইল চিত্র।
তামিলনাড়ু বিধানসভায় পাশ হল ‘এক দেশ এক ভোট’ এবং লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত দু’টি প্রস্তাব। দেশে একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে তৎপরতা শুরু করেছে তাকে ‘অবাস্তব ও অগণতান্ত্রিক’ বলা হয়েছে গৃহীত প্রস্তাবে।
পাশাপাশি, লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের জন্য মোদী সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগেরও বিরোধিতা করে পৃথক প্রস্তাব পাশ করিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের সরকার। তাতে দাবি তোলা হয়েছে, সালের জনসুমারিকে মাপকাঠি ধরে প্রক্রিয়াটি আসন পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। অন্যথায় বিষয়টি ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ হবে বলেও তামিলনাড়ু বিধানসভার মত।
প্রসঙ্গত, লোকসভার সাংসদ সংখ্যা এখন ৫৪৩। কিন্তু নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় ৮৮৮টি আসন রাখা হয়েছে। গত পাঁচ দশক ধরে লোকসভার সদস্য সংখ্যা একই রয়েছে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সাংসদ সংখ্যাও বাড়ার কথা। কিন্তু তা করতে গেলে দেশের মধ্যে বিবাদ তৈরি হবে বলে এত দিন এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের তরফে বছর কয়েক আগে জানানো হয়, জনগণনার পরে ২০২৬ সালেই লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস হতে পারে। আর তা নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
তামিলনাড়ু-সহ দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলির রাজনীতিকরা মনে করছেন, সর্বশেষ জনগণনার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস হলে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির লোকসভার আসন বিশেষ বাড়বে না। উল্টো দিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুবাদে উত্তর ভারত এবং পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্যের লোকসভা আসন অনেক বাড়বে। কারণ ওই রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মাপকাঠিতে এগিয়ে। সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। তাই এই রাজ্যগুলিতে লোকসভার আসন খুব একটা বেশি বাড়বে না।
এর ফলে সামগ্রিক ভাবে লোকসভায় উত্তর ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির পাল্লা ভারী হবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দাক্ষিণাত্যের রাজনীতিতে। নতুন পদ্ধতিতে পুনর্বিন্যাস হলে দক্ষিণ ভারতে তেমন ভাল ফল করতে না পারলেও কোনও দল দেশে সরকার গড়ে ফেলতে পারবে। ফলে দক্ষিণ ভারত রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাবে। ঘটনাচক্রে, এক মাত্র কর্নাটক ছাড়া দক্ষিণ ভারতের কোনও রাজ্যের বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি জোরদার নয়।
অন্য দিকে, ২০২৪-২০২৯ সালের মধ্যে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর হতে পারে কি না, ইতিমধ্যেই তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে আইন কমিশন। ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি চালু করার প্রশ্নে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছে কেন্দ্র। কমিটি ঠিক করেছে, এ বিষয়ে বিভিন্ন স্বীকৃত জাতীয় এবং আঞ্চলিক দলগুলির মতামত প্রথমে জানা হবে। মতামত জানাতে বলা হয়েছে আইন কমিশনকেও। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিভিন্ন দল ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতির বিরোধিতা করেছে। বিরোধী নেতৃত্ব কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে দেশের ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত’ বলেও চিহ্নিত করেছেন।