(বাঁ দিকে) তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রচারের প্রথম দিন ‘শিল্পের ধোঁয়া’ দেখেছিলেন হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বিস্তর। সমাজমাধ্যম জুড়ে ‘মিম’-এর বন্যা বয়ে গিয়েছিল। যদিও সেই সবে পাত্তা দেননি রচনা। তিনি দই খেয়ে সিঙ্গুরের গরুর প্রশংসা করেছেন। ফলপ্রকাশের আগের দিনে ‘রিলাক্সড মুড’-এ রচনা জানিয়ে দেন তিনি ভাগ্যে বিশ্বাসী। আর ফল যা-ই হোক, তিনি মেনে নেবেন। মঙ্গলবার ফলঘোষণার পর দেখা গেল ‘ভাগ্য সহায়’ তৃণমূলের তারকা প্রার্থীর। বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে রচনা বললেন, ‘‘বলতে পারব না কে ধোঁয়া দেখছেন এখন।’’ আবার এ-ও বললেন, ‘‘পরের বার এক প্লেট দই নিয়ে বসে কথা বলব।’’
গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের কাছ থেকে হুগলি আসন ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। সৌজন্যে তারকা প্রার্থী লকেট। যদিও তার আগেই ভোটে লড়ার অভিজ্ঞতা ছিল লকেটের। ছিল রাজনীতির অভিজ্ঞতাও। তাই রচনাকে হারানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী ছিলেন তিনি। সোমবার রচনা যখন জানান, তিনি বুঝতে পারছেন না যে ফল কী হবে, তখন বড় পর্দার বন্ধু লকেট সহানুভূতির সুরেই জানান, তৃণমূল প্রার্থী রাজনীতিতে নতুন। তাই বুঝতে পারছেন না। তবে তিনি বুঝে গিয়েছেন যে ভোটে তাঁরাই জয়ী হবেন। আবার হুগলি লোকসভা আসনটি ‘মোদীজি’কে উপহার দেবেন। নয় রাউন্ডের শেষে দেখা গেল, রচনা তাঁর থেকে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে এগিয়ে। শেষ পর্যন্ত জয়ী ঘোষণা করা হয় রচনাকে।
২০১৯ সালে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে হারের ময়নাতদন্তে বসে তৃণমূল দেখেছিল, মূলত গোষ্ঠীকোন্দলই তাদের ডুবিয়েছে। ২০২৪-এর আগেও গোষ্ঠীকোন্দল ভুগিয়েছে। তার পরেও জয় এসেছে। তৃণমূলেরই অনেকে বলেছেন, রচনাকে জেতানোর জন্য দলের সবাই বৈরিতা ভুলে একসঙ্গে ঝাঁপিয়েছিলেন। তাই গত ২০ মে বুথে বুথে তৃণমূল এবং বিজেপিকে ‘রণংদেহী’ ভাবে দেখা গিয়েছে। ধনিয়াখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী লকেটের ‘চোর চোর’ এবং পাল্টা ‘ডাকাত ডাকাত’ স্লোগান বাংলার ভোট ইতিহাসে বেনজির সব ছবির মধ্যে একটি। সেই ধনিয়াখালিতে বড় ‘লিড’ পেয়েছেন তিনি। যা নিয়ে রচনা বলেন, ‘‘আমি ভীষণ খুশি। ধনিয়াখালির প্রতিটি মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁদের করজোড়ে নমস্কার করছি।’’
অন্য দিকে, বিজেপির হারের নেপথ্যে প্রাথমিক ভাবে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
সোমবার হুগলি এইচআইটি কলেজে ভোটগণনা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে রচনা বলেছেন, ‘‘দু’মাস ধরে প্রচার করেছি। বহু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভোটগণনার আগে নতুন একটা অভিজ্ঞতা তো বটেই। তবে আজ অনেকটা ‘রিলাক্সড’ লাগছে। অদ্ভুত রকমের একটা অনুভূতি হচ্ছে। ভোট মেটার পর তো ছুটি পাইনি।’’ তৃণমূলের ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর সংযোজন, ‘‘অনেকেই ঘুরতে গিয়েছেন। কিন্তু আমার ঘোরার জায়গা ছিল রাজারহাটে শুটিং ফ্লোর।’’ আর ভোটের গণনা শুরুর আগে রচনা জানান, অনেক মিষ্টি খাওয়া হয়েছে। এ বার ‘ডায়েট’-এ ফিরে যাবেন। জেতার পরে রচনা বলেন, ‘‘দিদি নম্বর ওয়ান এক জনই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি এখন হুগলি নম্বর ওয়ান।’’ বলেই সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করা সেই হাসি হাসলেন রচনা। পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘সবাই আনন্দ করুন। কিন্তু কাউকে আঘাত করে নয়।’’
জয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বী লকেটকে নিয়ে কিছু বলবেন? রচনার জবাব, ‘‘কিচ্ছু বলব না। আমি বার বার বলেছি, কাউকে ছোট না করে, কারও সম্পর্কে কুমন্তব্য না করে প্রচার করতে।’’