দিলীপ ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
পরাজিত দিলীপ ঘোষ। ১,৩৭,৫৬৪ ভোটে। ‘আদি’ বিজেপি শিবিরে সবচেয়ে শোকের খবর এটাই। আসন বদলের পরে প্রথম দিকে মনমরা থাকলেও দিলীপ নিজে এবং তাঁর অনুগামীরা আশা করেছিলেন সহজ জয় হবে। কিন্তু দেড় লক্ষের মতো ভোটে হারলেন দিলীপ।
মেদিনীপুর আসনে ২০১৯ সালে প্রায় ৮৯ হাজার ভোটে জয়ের পরে দিলীপ জানিয়েছিলেন, এ বার লক্ষাধিক ভোটে ওই আসন থেকেই জিতবেন। তবে শেষে যখন তাঁর আসন বদলে যায়, তখন দিলীপ ব্যবধান নিয়ে কিছু না বললেও চিন্তায় ছিলেন না জয় নিয়ে। প্রথম দিন বর্ধমান-দুর্গাপুরে পা রেখেই বলেছিলেন, ‘‘আমি জেতার জন্যই এসেছি।’’ জয় নিয়ে নিশ্চিতও ছিলেন। মেদিনীপুর নিয়ে আক্ষেপের বদলে এমনও বলেছিলেন যে, ‘‘ওই আসনটা কি আমার পৈতৃক সম্পত্তি নাকি? সব আসনই বিজেপির।’’ ২০১৯ সালে ওই আসনে একেবারে শেষ বেলায় প্রার্থী করা হয়েছিল এসএস অহলুওয়ালিয়াকে। অনেকটা সময় পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জিতেছিলেন আড়াই হাজারের কম ভোটে।
তবে এ বার দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে প্রথম থেকেই চাপে ছিল বিজেপি। একটু একটু করে ব্যবধান বাড়ছিল তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদের। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদও দিলীপ বলেন, ‘‘পিছিয়ে থাকলেও আমার জয় নিশ্চিত।’’ কিন্তু দুপুর গড়াতেই দিলীপের পিছিয়ে থাকার ব্যবধান লাখ ছাপিয়ে যায়। বিকেল হতেই তা পৌঁছে যায় সওয়া লাখের উপরে। প্রথম থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তিকে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন দিলীপ। অতীতে বিজেপির টিকিটে জেতা কীর্তিকে আরও অনেক কিছু নিয়েই তোপ দেগেছেন। কিন্তু বাংলার ‘ভূমিপুত্র’ দিলীপকে হারিয়ে কীর্তি স্থাপন করলেন কীর্তিই। ২০১৪ সালে যে ব্যবধান জিতেছিলেন তৃণমূলের সঙ্ঘমিত্রা মমতাজ, তার চেয়েও বেশি ব্যবধান এনে দিলেন কীর্তি।
আর দিলীপ! প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক থেকে রাজনীতিতে এসেই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। পর পর দুই দফায় রাজ্য সভাপতি থেকেছেন। প্রথমে খড়্গপুর সদরের বিধায়ক এবং পরে মেদিনীপুরের সাংসদ হয়েছেন। রাজ্য সভাপতি পদে সুকান্ত মজুমদার আসার পরে তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিও হয়েছিলেন। কিন্তু মাঝে বারংবার নেতৃত্বের বিরোধিতা করার খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে। চলে যায় সর্বভারতীয় পদও। এর পরে রাজ্য বিজেপির ‘সফলতম’ রাজ্য সম্পাদকের ‘সাংসদ’ পরিচয়টুকুই ছিল। এ বার আর সেটাও রইল না।
প্রসঙ্গত, দিলীপের পুরনো আসন মেদিনীপুরেও হেরেছে বিজেপি। তবে দিলীপের হাতে একটা অস্ত্র রইল যে, তিনি অন্তত আসনবদলকে হারের কারণ হিসাবে দেখাতে পারবেন।
এর পরে কী করবেন দিলীপ? তিনি বরাবরই বলে এসেছেন, নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে মনে করেন, তবে তিনি পুরনো সংগঠন আরএসএসে ফিরে যাবেন। তবে রাজ্য বিজেপির অনেকে এমন সম্ভাবনা নিয়েও আশাবাদী যে, এত বড় ধাক্কা খাওয়ার পরে দলের হাল ধরতে তাঁর উপরেই ফের ভরসা করতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু হেরে-যাওয়া দিলীপ কি আর পুরনো মেজাজে ফিরতে পারবেন? এমন প্রশ্নও তৈরি করে দিল জুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার।