গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটপর্বের মাঝেই শুক্রবার সকালে সমস্ত ভোটের বুথে ইভিএমের ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দুপুরে বিহারে বিজেপির ভোট প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানালেন। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিরোধীরা এত দিন ইভিএম নিয়ে কান্নাকাটি করত। তাদের সপাটে চড় মেরেছে সুপ্রিম কোর্ট। এ বার ওদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
ভিভিপ্যাট পদ্ধতির মাধ্যমে কাগজের স্লিপ-সহ বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) পাওয়া ভোটের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের (ক্রস-ভেরিফিকেশন) দাবিতে শীর্ষ আদালতে শতাধিক আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে বিভিন্ন ভোট-নজরদার অসরকারি সংস্থার পাশাপাশি বিরোধী দলগুলিও ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী শুক্রবার বিহারের অরারিয়ায় বিজেপির সভায় সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘গোটা বিশ্ব আমাদের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রশংসা করে। কিন্তু বিরোধীরা তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সেই ব্যবস্থার মর্যাদাহানি করেছে।
ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হল কি না, ভিভিপ্যাট স্লিপের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ রয়েছে ভোটারের। কিন্তু প্রতিটি বিধানসভায় কম-বেশি ২০০টি ভিভিপ্যাট মেশিন থাকলেও পাঁচটির বেশি গণনাই করা হয় না! সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এক আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী নিজ়াম পাশা বলেছিলেন, ‘‘ভিভিপ্যাট স্লিপ সংগ্রহ করে ব্যালট বাক্সে ফেলার সুযোগ দেওয়া উচিত ভোটারদের। জালিয়াতির সম্ভাবনা আটকাতে প্রতিটি ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনা করা উচিত।’’ আবেদনকারী পক্ষের অন্য এক আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এই মামলার শুনানিতে জানিয়েছিলেন, ইউরোপের অধিকাংশ দেশই ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট করাতে শুরু করেছে। ফলে ভারতেও ব্যালটে ফিরে যাওয়া যেতে পারে, অথবা ভিভিপ্যাট স্লিপ ভোটারদের হাতে দেওয়া হোক। তাঁরা সেটি ব্যালট বাক্সে জমা করবেন।
কিন্তু সেই ব্যবস্থায় ভোটারের পছন্দের গোপনীয়তা রাখার গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি খন্না। শুক্রবার মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি বলেন ‘‘অন্ধ ভাবে অবিশ্বাস অযৌক্তিক সন্দেহের জন্ম দিতে পারে।’’ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং তার রক্ষাকারী সংস্থার উপর বিশ্বাস বজায় রাখারও সওয়াল করেন তিনি। শীর্ষ আদালতের সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই লোকসভা ভোটপর্বের মাঝে বিরোধীদের নিশানা করলেন মোদী।