মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সদ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা আসলে তোষণের বড় উদাহরণ।’’ ইঙ্গিত দিয়েছেন, সংখ্যালঘু তোষণ করতে গিয়ে গরিব মহিলাদের অত্যাচারকে দেখতেই চায়নি রাজ্য প্রশাসন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও একই কারণে দুষেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে। সোমবার যেন সেই সব অভিযোগেরই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার সভা থেকে তিনি দাবি করেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা পরিকল্পিত রচনা।’’
তৃণমূলের শীর্ষ নেত্রীর দাবি, ‘‘এখানকার মহিলারা না কি খুব দুঃখে আছেন! মোদীবাবুর চোখে কান্না। কুম্ভীরাশ্রু।’’ তাঁর পাল্টা তোপ, ‘‘বিজেপি কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্ছে, ‘মহিলাদের উপরে অত্যাচার চলছে’। জিজ্ঞাসা করুন, হাথরসের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিয়েছে? একটি পরিবারের ছ’জনকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কী ব্যবস্থা নিয়েছ? দেশের গর্ব সাক্ষীকে (কুস্তিগির সাক্ষী মালিক) বিজেপি নেতারা যে ভাবে অসম্মান করেছে, তাদের এক বারও গ্রেফতার করেছ?’’ সেই সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা তোমাদের পরিকল্পিত রচনা। নির্বাচনের আগে এ রকম দু’-একটা ঘটনা ওরা ঘটায়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এ বার কি উনি বলবেন, চাকরি বিক্রিও সাজানো ছিল?’’ তার কথায়, ‘‘(নিয়োগ দুর্নীতির মতো) সন্দেশখালিতেও সিবিআই গিয়েছে। সব সত্যি সামনে আসবে।’’ দিলীপের দাবি, ‘‘শাহজাহান তো সব স্বীকার করে নিয়েছেন।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘গোটা দেশের কাছে ওঁর সন্দেশ, পশ্চিমবঙ্গে যা-ই ঘটে, তা সাজানো। যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, সেই শাহজাহান, উত্তম, শিবুদের কীর্তির সময় নিরাপদ সর্দার বিধানসভায় বলেছিলেন। যদি সাজানো হবে, তা হলে তাঁর মাইক তখন কেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল?’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘সন্দেশখালিতে জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা হয়েছিল। প্রশাসন সেই বিষয় পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু মহিলা সংক্রান্ত যে রটনা হয়েছিল, সেটা পরিকল্পিত চক্রান্ত। সেটাই বলতে চেয়েছেন।’’
সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘বিজেপি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ পার হওয়ার দাবি করেছিল, ৮০টি পার করতে পারেনি। এখন তারা (লোকসভা ভোটে) ৩০টি আসন পাওয়ার কথা বলছে। ৩০টি যদি আসন পায়, তা হলে নাকি সরকারই ভেঙে যাবে!’’ তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘আগে ১০টা আসন পেয়ে দেখাও। তার পরে ৩০টার কথা বোলো। এই সরকার ফেলা অত সহজ নয়।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘গোয়ার সরকার ফেলেছ। মহারাষ্ট্রের সরকার ফেলেছ। ঝাড়খণ্ডের সরকার ফেলতে গিয়েছিলে।... আমরা যদি তোমাদের চোখরাঙানিতে ভয় পেতাম তা হলে তৃণমূল ছেড়ে দিতাম।’’ ঘটনাচক্রে, সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, এ রাজ্যে ৩০ বা তার বেশি আসন পেলেও তাঁরা সরকার বা বিপক্ষ দল ভাঙবেন না। সঙ্গে অবশ্য যোগ করেন, ‘‘তৃণমূল যদি ভেঙে যায়, তবে আলাদা কথা।’’