Mamata Banerjee Abhishek Banerjee

মোদী ‘পিন্টুবাবু’, বিজেপি ওয়াশিং পাউডার, ‘দূরত্ব’ ভুলে জনগর্জনের আগে যুগলবন্দি মমতা-অভিষেকে

ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের মঞ্চেও মমতা-অভিষেক দু’জনেরই ছবি ছিল। কিন্তু যে হেতু নারীদিবসের প্রাক্কালে এই মিছিলের আয়োজক ছিল মহিলা তৃণমূল, তাই মঞ্চে ওঠেননি তৃণমূলের সেনাপতি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪ ২০:৩৪
Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee walk in rally together in Kolkata ahead of brigade meeting

কলকাতার মিছিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

তিনি যে ডায়মন্ড হারবারের গন্ডি পার করে সারা বাংলায় নামছেন, তা গত কয়েক দিনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার তার ষোলকলা পূর্ণ হল। মহিলা তৃণমূলের ডাকে মিছিলে কলকাতার রাজপথে হাঁটলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কয়েক গজ পিছনে হাঁটলেন দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

ব্রিগেডে জনগর্জন সভার ৭২ ঘণ্টা আগে মমতা-অভিষেকের একসঙ্গে মিছিল তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জন্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ তো বটেই। বিশেষত, যখন গত বেশ কয়েকমাস দু’জনের মধ্যে ‘দূরত্ব’ নিয়ে জল্পনা চলছিল শাসক শিবিরের অন্দরে। গত ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনের দিনেও হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত হেঁটেছিলেন মমতা-অভিষেক। মঞ্চে বক্তৃতাও করেছিলেন দু’জন। কিন্তু সেই কর্মসূচির সঙ্গে বৃহস্পতির যুগলবন্দির ‘গুণগত’ ফারাক রয়েছে বলেই অভিমত তৃণমূলের অনেকের।

বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতে গিয়েও মমতা-অভিষেক একই রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন। তাপস রায় এবং প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে অভিষেক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে যেমন আগ্রাসী কটাক্ষ করেছেন ‘ওয়াশিং মেশিন’-এর উপমা দিয়ে, তেমনই মমতাও বৃহস্পতিবার ডোরিনা ক্রসিংয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপি তথা মোদীকে কড়া কটাক্ষ করেছেন। ইঙ্গিতে, নাম না করে মোদীকে ‘পিন্টুবাবু’ বলে সম্বোধন করেছেন। বলেছেন, ‘‘কি পিন্টুবাবু? বাংলার মেয়েরা নাকি নির্যাতিত? আপনি মণিপুর দেখতে পান না? হাথরাস, উন্নাও দেখতে পান না? পিন্টুবাবু, ইতনা গুস্‌সা কিঁউ আতা হ্যায়?’’ অভিষেকের ‘ওয়াশিং মেশিন’ কটাক্ষের সুরেই মমতা বলেছেন, ‘‘ওয়াশিং পাউডার ভাজপা! তৃণমূলে থাকলে কাদা, ওদের দিকে গেলে সাদা!’’

গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূলের অনেকে এই আলোচনা করছিলেন যে, মমতা কেন ব্রিগেডের সভার কথা বলছেন না! তবে দু’দিন আগেই মেদিনীপুরের সভা থেকে ব্রিগেডের কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তার পর মেদিনীপুর থেকে হেলিকপ্টারে ডুমুরজলায় নেমে তৃণমূলনেত্রী ব্রিগেডে বড় জমায়েতের বার্তা দিয়েছিলেন। তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের পোশাকি নাম ‘জনগর্জন সভা’। বৃহস্পতিবার মিছিল শেষে ডোরিনা ক্রসিংয়ের সভা থেকেও মমতা বলেছেন, ‘‘আর দু’দিন বাদে ব্রিগেড। সেখান থেকে গর্জন করতে হবে। ভয়ঙ্কর গর্জন হবে। এমন গর্জন করতে হবে, যাতে দিল্লি কেঁপে যায়। বিজেপি একটু চেপে যায়!’’

ডোরিনা ক্রসিংয়ের মঞ্চেও মমতা-অভিষেক দু’জনেরই ছবি ছিল। কিন্তু যে হেতু আন্তর্জাতিক নারীদিবস উপলক্ষে ওই মিছিলের আয়োজক ছিল মহিলা তৃণমূল, তাই মঞ্চে ওঠেননি তৃণমূলের সেনাপতি। প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনের মঞ্চে অভিষেকের ছবি না থাকা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল শাসকদলের অন্দরে। সেই সময়ে অভিষেকের ‘সরে থাকা’ নিয়েও যারপরনাই আলোচনা চলেছিল তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে। ঘনিষ্ঠ নেতারা বোঝাতে গেলেও অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি নিজেকে ডায়মন্ড হারবারেই সীমাবব্ধ রাখতে চান। সারা বাংলায় তিনি ‘সেনাপতি’র ভূমিকায় নামবেন না।

মাস খানেক আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিষেক জানিয়েছিলেন, দল চাইলে তিনি চৌকাঠ ডিঙিয়ে তিনি ডায়মন্ড হারবার থেকে সারা বাংলায় নামবেন। তবে ‘অযাচিত’ ভাবে নয়। তিনি নেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। বিবিধ বিষয়ে মমতার সঙ্গে তাঁর যে মতানৈক্য রয়েছে, তা-ও স্বীকার করে নিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তবে, এ-ও স্পষ্ট বলেছিলেন, যে, মতানৈক্য থাকাটা ‘স্বাস্থ্যকর’। কিন্তু তাঁর নেত্রী মমতাই। তার পরেই সন্দেশখালি নিয়ে সক্রিয় হন অভিষেক। ব্রিগেড-সহ লোকসভা ভোটের প্রচারের নীল নকশা আঁকাও হচ্ছে তাঁরই নেতৃত্বে।

সরকারের কর্মসূচির সঙ্গে সংগঠনকে ময়দানে নামিয়ে দেওয়ার মধ্যেও তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ দেখা গিয়েছে। কেন্দ্র না দিলেও রাজ্য সরকার ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরির টাকা মিটিয়ে দিচ্ছে। রাজ্যের ৫৯ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ঢুকতে শুরু করেছে। তার আগে এলাকায় এলাকায় শিবির করে তৃণমূল তাঁদের নাম সংগ্রহ করেছিল। ঘটনাচক্রে, রাজ্য সরকার প্রথমে বলেছিল ২১ লক্ষ মানুষ টাকা পাননি। পরে তা বেড়ে হয় ২৪ লক্ষ। কিন্তু তৃণমূলের সাংগঠনিক হিসাব বলেছিল, মোট ৫৯ লক্ষ শ্রমিকের মজুরি কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের সরকারি সভা থেকে তিন দিন আগে সেই সংখ্যাই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে বিবিধ সূচকে মমতা-অভিষেকের যুগলবন্দি দেখা যাচ্ছিল। ফলিত স্তরে তা দেখা গেল বৃহস্পতিবার কলকাতার রাজপথে।

ঘটনাচক্রে, বিধায়ক তাপস তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর দিন পাল্টা যোগদানটিও হল বৃহস্পতিবার মমতা-অভিষেকের মিছিলে। পদ্ম ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরে যোগ দিলেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। সেই যোগদানেও নতুন ছবি তৈরি করেছেন মমতা-অভিষেক। এত দিন যোগদান হত দলীয় কার্যালয়ে। ২০২১-এর আগে বিজেপি নামী হোটেলেও যোগদানের আসর বসিয়েছিল। এই প্রথম কোনও যোগদান হল রাস্তায়। মিছিলে। সেখানে মুকুটমণি প্রথমে অভিষেকের হাত থেকে পতাকা নিলেন। তার পরে মিছিলের শেষে মঞ্চে মমতাও তাঁর হাতে তুলে দিলেন জোড়াফুলের পতাকা।

আরও পড়ুন
Advertisement