(বাঁ দিকে) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেখানেই প্রার্থী হবেন, সেখানেই হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী ছাত্রদের নিয়ে তাঁকে তাড়া করবে তৃণমূল। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিনই অভিজিৎকে এই মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস উপলক্ষে মিছিলের শেষে সভায় স্পষ্ট হুঁশিয়ারির সুরে মমতা বলেন, ‘‘তৈরি থাকুন! আপনি যেখানেই দাঁড়াবেন, আমি ছাত্রদের নিয়ে যাব। তারা আপনার বিরুদ্ধে বলবে! আপনি হাজার হাজার ছাত্রের চাকরি খেয়েছেন।’’
অভিজিৎ বিজেপিতে যোগ দেবেন, এই ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূলের তরফে বিচারপতির আসনে বসে পদ্মশিবিরের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাঁর দেওয়া বিভিন্ন রায়ের আড়ালে ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ ছিল কি না, সে প্রশ্নও তুলেছে রাজ্যের শাসকদল। এমনই অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার মুখ খুললেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘আমি খুশি যে, মুখোশটা খুলে পড়েছে! অনেক কিছু দেখেছি। সাক্ষাৎকার দেখেছি। একের পর এক নির্দেশ দেখেছি। কাল থেকে আপনার রায় তো জনগণ দেবে। তৈরি থাকুন।’’
তবে কোনও বক্তব্যেই অভিজিতের নাম করেননি মমতা। কিন্তু অভিজিৎকে আক্রমণ প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার সমালোচনা করা যায় না। কিন্তু রায়ের সমালোচনা করাই যায়।’’ সেই সঙ্গেই অভিজিতের বিরুদ্ধে অনেকের চাকরি খাওয়া এবং অনেকের চাকরি আটকে রাখার অভিযোগও তুলেছেন মমতা। নিয়োগের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ মামলা করার প্রসঙ্গ টেনে আক্রমণ করেছেন বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলিকে। তিনি বলেছেন, ‘‘এখনও পাঁচ লাখ চাকরি তৈরি আছে আমার কাছে! কিন্তু সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেস বসে আছে। চাকরি দিলেই পিল (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বা জনস্বার্থ মামলা) করবে।’’
তিনিও যে আইনজীবী ছিলেন, তা মনে করিয়ে অভিজিৎকে আক্রমণ করেন মমতা। প্রাক্তন বিচারপতির নামোচ্চারণ না করেও তিনি বলেন, ‘‘এঁদের দিকে তাকিয়ে মানুষ বিচার পাবে? বিচারের চেয়ারে বসে রোজ একটা করে পিল (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) গিলছে! রবীন্দ্রনাথ লিখে গিয়েছিলেন, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’’
বিজেপি সূত্রে এখনও পর্যন্ত বলা হচ্ছে, অভিজিৎকে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী করা হতে পারে। গত লোকসভা ভোটে ওই আসনে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর ভাইয়ের আসনেই অভিজিৎকে প্রার্থী করার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। তবে শেষমুহূর্তে বার বদলও হতে পারে। দিব্যেন্দু খাতায়কলমে এখনও তৃণমূল সাংসদ হলেও দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বহু যোজন। সে ক্ষেত্রে তৃণমূল অভিজিতের বিরুদ্ধে কাকে প্রার্থী দেয়, সে দিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। তবে মমতা বৃহস্পতিবার বুঝিয়ে দিলেন, দলের প্রার্থী যিনিই হন, প্রাক্তন বিচারপতির আসল লড়াই হবে তাঁর সঙ্গেই।