ইউসুফ পাঠান। —ফাইল চিত্র।
ক্রিকেট ময়দানে তাঁর পরিচিতি ছিল ‘পিঞ্চ হিটার’ হিসাবে। কিন্তু ইউসুফ পাঠান নিজে সেটা মোটেই মানেন না। তাঁর দাবি, যে কোনও পরিস্থিতিতে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি খেলতে পারেন এবং খেলার মোড়ও ঘোরাতে পারেন। প্রথম বার ভোটের ময়দানে নেমেও কি সেটাই বিশ্বাস করেন পাঠান? তৃণমূলের জবাব ‘হ্যাঁ’। ভোটের ‘স্কোরবোর্ড’ দেখেই অধীর চৌধুরীর ‘চেনা মাঠে’ কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘খেলতে’ নেমেছেন পাঠান। তাই প্রচারের প্রথম দিনই পাঠান বেছে নিয়েছেন ‘কঠিন পিচ’। প্রথমটা বড়ঞা বিধানসভা। যেখানকার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা এখন দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি। আর দ্বিতীয়টি কান্দি বিধানসভা। যেখানে গত বার লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে বেগ পেতে হয়েছিল।
স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়পর্ব সেরে নিয়েছিলেন শুক্রবারই। শনিবার সকাল হতেই নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন বহরমপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পাঠান। প্রচারের শুরুটা হল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বিধানসভা কেন্দ্র বড়ঞা থেকে। তৃণমূল সূত্রে খবর, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে শুক্রবার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তার পর প্রচারের ‘রূপরেখা’ চূড়ান্ত হয়। ইউসুফের প্রচারের পরিকল্পনায় ছিলেন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার, বিধানসভা এলাকার বিধায়ক এবং বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। তার পর বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার বিধায়ক, সমস্ত ব্লক সভাপতি ,শাখা সংগঠন এবং ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের নিয়ে আলাদা বৈঠকে বসেন তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ স্বয়ং। কিন্তু প্রচারের শুরুটা কেন বড়ঞা দিয়ে? বিধায়ক জেলে বলেই কি? তৃণমূল নেতৃত্বের একটি অংশ বলছেন, দলের দুর্বল জায়গায় হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র— বহরমপুর, কান্দি এবং বড়ঞা। বহরমপুর শহরে নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব পড়েছে পৌরপিতা নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের উপর। তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘নির্বাচনী ফলাফলের পরিসংখ্যান দেখে ইউসুফ নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রচারের প্রথম দিনে কান্দি এবং বড়ঞাকে বেছে নিয়েছেন। দলের সাংগঠনিক নেতৃত্ব আলোচনার ভিত্তিতে ইউসুফের প্রস্তাবে মান্যতা দেন।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভোটের ময়দানে আনকোরা হলেও বেশ প্রস্তুতি নিয়েই ‘খেলতে নেমেছেন’ পিঞ্চ হিটার পাঠান। তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী করার পর থেকেই নাকি বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল যথেষ্ট চর্চা করেছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার। আর এই গোটা বিষয়টি দেখভালের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর এক বিশ্বস্ত সহযোগীকে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান ঘেঁটে ইউসুফের ব্যক্তিগত নির্বাচনী পরামর্শদাতা বড়ঞা, কান্দি এবং বহরমপুর বিধানসভার উপর জোর দিতে বলেছেন। সেই মতো ওই তিন বিধানসভায় প্রচারে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন ইউসুফ স্বয়ং।
বস্তুত, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের অধীরের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল বহরমপুর এবং কান্দি বিধানসভার। বহরমপুরে অধীর প্রায় ৯০ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন। কান্দি বিধানসভাতেও ‘ভূমিপুত্র’ অপূর্ব সরকারের থেকে কংগ্রেস প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন ৩৭ হাজারের কাছাকাছি ভোটে। বড়ঞা বিধানসভায় তৃণমূলের ব্যবধান ছিল মাত্র ৩,৭০০ ভোট। বাকি পাঁচ বিধানসভায় তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও ৮০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয় পেয়েছিলেন অধীর।
পাঁচ বছরে পরিস্থিতি বদলেছে অনেকটা, বিগত পৌরসভা এবং বিধানসভা ভোটের নিরিখে বহরমপুর বিধানসভা নিয়ে উদ্বেগ খানিকটা কমলেও কান্দি বিধানসভা এখনও ইউসুফের জয়ের কাঁটা হতে পারে বলে ধারণা অনেকের। অন্য দিকে, শিক্ষক নিয়োগ মামলায় জেলবন্দি জীবনকৃষ্ণের বিধানসভা এলাকায় ‘দুর্নীতি’ এবং ‘অনুন্নয়ন’কে হাতিয়ার করে ভোটপ্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। তাই গত বারের ব্যবধান ধরে রাখা তো দূরের কথা, যে কোনও মূল্যে কংগ্রেস যাতে ওই বিধানসভায় এগিয়ে না যায়, সে নিয়েই পরিকল্পনা চালাচ্ছেন পাঠানের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। মূলত সেই পরামর্শ মেনেই প্রথম দিনের নির্বাচনী প্রচারে বেছে নেওয়া হয়েছে কান্দি এবং বড়ঞা বিধানসভা কেন্দ্রকে। প্রচারের আগে ইউসুফ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে আমি ততটা অভিজ্ঞ নই। স্থানীয় যাঁরা অভিজ্ঞ আছেন, তাঁদের পরামর্শ মতো প্রচার কর্মসূচি চলবে। তবে আলোচনা করে যেটুকু বুঝেছি, আজকের প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ আর দলীয় বৈঠকে সম্পর্কে তৃণমূল প্রার্থীর মন্তব্য, ‘‘দলের ‘সিনিয়র’ নেতারা অনেক কিছু বলেছেন। আমি সেগুলো শুনেছি। আমার নিজস্ব কিছু মতামতও দিয়েছি।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, শনিবার ভরতপুর, বড়ঞা এবং কান্দি বিধানসভা এলাকার তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের নিয়ে হেলিফক্স ময়দানে একটি কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই ইউসুফ পাঠান আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করবেন। পাঠানের প্রচার নিয়ে জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের কটাক্ষ, ‘‘কান্দির মানুষ জানেন তৃণমূলের রথী-মহারথীদের রাজনৈতিক জন্ম কে দিয়েছে। গত বছরের থেকেও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন অধীরদা। প্রচারে গিয়েও কোনও লাভ হবে না।’’