সিকিম সীমান্তে সেনার মহড়া। ছবি: এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া।
লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) টানাপড়েন এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সিকিমের চিন সীমান্তের কাছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ এবং মহড়া শুরু করল ভারতীয় সেনা। ঘটনাচক্রে, আগামী ১৯ এপ্রিল সিকিমে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের ঠিক আগেই!
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, সিকিমের এলএসির অদূরে প্রায় ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় যুদ্ধের মহড়া শুরু করেছে ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কোর। সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অন্তর্ভুক্ত মূলত ‘মেকানাইজ্ড ইনফ্যান্ট্রি’ ব্যাটেলিয়নগুলি এই যুদ্ধাভ্যাসে অংশ নিচ্ছে। মহড়ার মূল উদ্দেশ্য, হিমালয় ঘেরা উঁচু উপত্যকায় চিনা ট্যাঙ্কের হামলা রোখার প্রস্তুতি নেওয়া।
২০২০-র অগস্টে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার হামলায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে সম্ভাব্য চিনা হামলার আশঙ্কায় দ্রুত এলএসি-তে সেনা মোতায়েন করার সময় খামতি ধরা পড়েছিল হালকা ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে। ডিআরডিও-র তৈরি ‘অর্জুন’ কিংবা রুশ টি-৯০ (ভীষ্ম), টি-৭২ (অজেয়) ওজনে ভারী হওয়ায় লাদাখ বা সিকিমের পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধের উপযুক্ত নয়। অন্য দিকে, চিনা ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’র কাছে রয়েছে হালকা ট্যাঙ্ক জ়েডটিকিউ-১৫।
এই পরিস্থিতিতে চিনা ট্যাঙ্কের মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাকে ভরসা করতে হয়েছিল আশির দশকে রাশিয়া থেকে আনা বিএমপি-২ ‘ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল্’ (সাঁজোয়া গাড়ি)-এর উপর। এই পরিস্থিতিতে ট্যাঙ্ক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে ‘ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা’ (ডিআরডিও)-র তৈরি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র (এটিজিএম) ‘নাগ’-এর তৃতীয় সংস্করণ ব্যবহারে জোর দিতে চাইছে ভারতীয় সেনা। সেই উদ্দেশ্যেই এই মহড়া।
প্রসঙ্গত, আশির দশকে ডিআরডিও ‘ইন্টেগ্রেটেড মিসাইল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এর আওতায় যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করেছিল, ‘নাগ’ তার অন্যতম। এই প্রকল্পের আওতায় বাকি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হল অগ্নি, পৃথ্বী, আকাশ এবং ত্রিশূল। অগ্নি, পৃথ্বী এবং আকাশ ইতিমধ্যেই সেনার হাতে এসেছে। বাতিল হয়েছে ‘ত্রিশূল’ প্রকল্প। পরীক্ষা চলাকালীন একাধিক বার ‘নাগ’-এর আধুনিকীকরণের কাজ করেছে ডিআরডিও। ক্ষেপণস্ত্রবাহী যান বা যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া যায় নাগের নয়া সংস্করণ। মাটি থেকে ছুড়লে ৫০০ মিটার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ট্যাঙ্ককে গুঁড়িয়ে দিতে পারে এটি। আকাশ থেকে ছুড়লে সাত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে।