মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
গত লোকসভা ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের জয়ের ব্যবধান ছিল ৬৫ হাজার। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ‘রানিমা’ অমৃতা রায়। ব্যবধান কি বৃদ্ধি পাবে? আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে মহুয়া বললেন, ‘‘পাওয়া উচিত।’’ উচিত তো বোঝা গেল, কিন্তু বাড়বে কি? মহুয়া জানালেন, বাড়বে। কত? মৈত্রের জবাব, ‘‘এক লক্ষ করার চেষ্টা করব।’’ অর্থাৎ, মহুয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন, কৃষ্ণনগরে তাঁর লড়াই ভোটের ব্যবধান বৃদ্ধি করার। লক্ষের লক্ষ্য নিয়ে চলছেন তিনি। প্রার্থী হিসেবে অবশ্য গত বারের প্রতিপক্ষ কল্যাণকেই এখনও এগিয়ে রাখছেন মহুয়া। তাঁর বক্তব্য, কল্যাণ যে ভাবে গত লোকসভায় এখানে-সেখানে পৌঁছে যাচ্ছিলেন, ‘রানিমা’র ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না।
লোকসভায় ‘প্রশ্ন ঘুষ’কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল মেয়াদ শেষের আগেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শিল্পপতি গৌতম আদানিকে জড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের এই সাংসদ। অনেকে বলেন, রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হতে বসেছিল মহুয়ার। তাঁকে ‘নতুন জীবন’ দিয়েছেন মোদীই। টিকিট না পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যে ভাবে তিনি মোদী-বিরোধিতার ‘পোস্টার গার্ল’ হয়ে উঠলেন, তাতে কি স্বয়ং মোদীর ভূমিকা নেই? মহুয়ার জবাব, ‘‘সংবাদমাধ্যমের অনেক সম্রাট আমায় এমন কথা বলেছেন। কিন্তু বিষয়টা একেবারেই তা নয়। আমি যে ভাবে কাজ করেছি, তাতে আমার রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না।’’
মহুয়ার বক্তব্য, ‘‘আমি নিজের এলাকা নিয়ে থাকি। আর সংসদে যতটুকু বলার বলি। এলাকার বাইরে আমায় অন্য জায়গায় দেখতে পাবেন না। কলকাতার রাজনীতিতেও আমায় সে ভাবে দেখা যায় না।’’ মহুয়ার কথায় স্পষ্ট, তাঁর এক্তিয়ার, দায়িত্ব বিষয়ে তিনি সচেতন। তার ভিত্তিতেই তিনি যা করণীয় তা করেন।
মহুয়ার ভোটে তরুণ-তরুণীরা তাঁর ‘ওয়ার রুম’ সামলান। ১০০ শতাংশ কাজ ঠিক করলে ‘দিদি’ মহুয়া তাঁদের পিঠ চাপড়ে দেন। কিন্তু ৯৯ শতাংশ হলেই জোটে বকুনি। কেন? মহুয়ার স্পষ্ট জবাব, ‘‘আমি জেপি মর্গ্যানে চাকরি করার সময়ে এক্সেল শিট ঠিক করে ভাঁজ না করায় বস্ ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই থেকে আমিও সে ভাবে কাজটা শেখাই। আমার সঙ্গে কাজ করা অনেকেই এখন তাঁদের নিজস্ব কনসালট্যান্সি ফার্ম খুলেছেন।’’ মহুয়া কি তা হলে ছোট ছোট ‘প্রশান্ত কিশোর’ তৈরির কারখানা খুলেছেন? হাসতে হাসতে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থীর জবাব, ‘‘প্রশান্ত কিশোরের অনেক আগে থেকে আমি এই কাজ করছি।’’
তিনি ম্যানেজমেন্টের ধাঁচে ভোট পরিচালনা করেন। তাতে নাকি অনেক বিধায়ক ও স্থানীয় স্তরের নেতা ক্ষুব্ধ হন। তাই কি? মহুয়া জানিয়েছেন, তিনি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, এমন একটা টিম দিয়ে গোটা প্রক্রিয়াটা করতে চান। তা স্থানীয় নেতাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁদের পক্ষে দিনের পর দিন ‘ওয়ার রুম’ সামলানোও সম্ভব নয়। কারণ, তাঁদেরও কাজ রয়েছে। তাঁদের নিজের নিজের কেন্দ্র বা এলাকা দেখভাল করতে হয়। মহুয়ার কথায়, ‘‘বুথের কর্মীরাই ভোট করাবেন। কিন্তু তাকে সুসংহত করবে একটি টিম।’’ যে টিমের উপর ভরসা রেখেই মহুয়া দাবি করছেন, ৬৫ হাজারের ব্যবধান এ বার এক লক্ষ হবে।