রাহুল গান্ধী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপ্টারে আয়কর হানা নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাহুল গান্ধীর কপ্টারে ‘তল্লাশি’ চলল। তবে কংগ্রেস সাংসদের কপ্টারে আয়কর তল্লাশি নয়, হানা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’। শুধু রাহুলই নন, সোমবার ফ্লাইং স্কোয়াডের নজরে অভিষেকের কপ্টারেও। ভোটপ্রচারে হলদিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে অভিষেকের কপ্টার পরিদর্শনে গেলেন ফ্লাইং স্কোয়াডের তিন সদস্য।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সোমবার নিজের কেন্দ্র কেরলের ওয়েনাড়ে যাওয়ার পথে রাহুলের কপ্টারে তল্লাশি চালান নির্বাচন কর্মীরা। ভোটের প্রচারের জন্য কপ্টার ভাড়া নিয়ে থাকেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। পুলিশ জানিয়েছে, দলের ভাড়া নেওয়া রাহুলের সেই চপারে হানা দেয় ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’।
এর আগে রবিবার ভোটের প্রচারের জন্য ভাড়া নেওয়া অভিষেকের চপারে আচমকা হানা দেন আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা। তৃণমূল সূত্রের খবর, হলদিয়ায় সোমবার অভিষেকের কর্মসূচির জন্য বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে হেলিকপ্টারটির ‘ট্রায়াল রান’-এর কথা ছিল। সেই কারণে অভিষেকের সরকারি নিরাপত্তারক্ষীরাও ক্লাবের মাঠে উপস্থিত হন। কিন্তু দুপুরে ‘ট্রায়াল’ শুরু হওয়ার আগে সেখানে আয়কর আধিকারিকদের একটি দল হানা দেয়। চপারটি সম্পর্কে খোঁজখবর করে তারা তল্লাশি শুরু করে। তৃণমূলের দাবি, চপারের প্রায় সর্বত্র খুঁটিয়ে দেখেও আয়কর দফতরের অফিসারেরা আপত্তি করার মতো কিছু মতো পাননি। তার পরে চপারে থাকা ব্যাগ খুলে দেখেন তাঁরা। সেখানেও কিছু মেলেনি। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলে এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক লেখেন, ‘‘জমিদারেরা সব শক্তি ব্যবহার করেও বাংলার প্রতিরোধ ডিঙিয়ে যেতে পারবে না!’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই তল্লাশির সময়ে অভিষেকের নিরাপত্তারক্ষীরাও ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন চপারের সামনে। এক সময়ে তাঁরা আয়কর তল্লাশির ভিডিয়ো রেকর্ড করতে গেলে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা আপত্তি করেন। এবং এই নিয়ে বেশ কিছু সময় দু’পক্ষের মধ্যে বিতণ্ডাও হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে আয়কর আধিকারিকদের কেউ কেউ খারাপ ব্যবহারও করেন। জোর করেই তাঁরা ফোনে অভিষেকের নিরাপত্তারক্ষীদের তোলা ভিডিয়ো মুছে দেন। দু’পক্ষের বচসায় দীর্ঘ ক্ষণ ‘ট্রায়াল রান’ আটকে যায়।
বিরোধীদের দমন করতে কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগে লাগাতার সরব রয়েছে তৃণমূল। কপ্টারের ঘটনার পরে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‘এনআইএ-র ডিজি, এসপি-কে সরানোর বদলে আয়কর দফতরের আজ্ঞাবহদের আমার চপারে তল্লাশিতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কিছু পাননি!’’ আয়কর দফতরের হানাকে তৃণমূল-বিরোধী চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করে রবিবার নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আয়কর দফতরের দুই ইনস্পেক্টরের নাম জানিয়ে কমিশনকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তৃণমূলকে পাল্টা বিঁধেছে বিজেপিও। জলপাইগুড়িতে বিজেপি নেতার গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য ছিল, ‘‘উনি (অভিষেক) কি আইনের বাইরে? কালও এক বিজেপি নেত্রীর থেকে তল্লাশি চালিয়ে এক লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা তো থাকতেই পারে।’’