অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রথমেই এসেছিলেন নন্দীগ্রামে। লোকসভা ভোটের প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার পরও সেই নন্দীগ্রামেই হাজির হলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বার বার নন্দীগ্রামের মাটি ছুঁয়েই কাজ শুরু করছেন কেন? প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। জবাবে অভিজিৎ বলেছেন, ‘‘এই নন্দীগ্রাম অনেক ইতিহাস তৈরি করেছে। আগামী দিনেও দেখুন না নন্দীগ্রাম কী করে!’’
অভিজিৎ যে লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সেই তমলুকের অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রের একটি নন্দীগ্রাম। যে নন্দীগ্রাম প্রকৃত অর্থেই বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে দেওয়ার সাক্ষী। সাক্ষী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানেরও। তৃণমূলনেত্রীর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠা যে নন্দীগ্রামের কাঁধে ভর করে, সেই নন্দীগ্রামেই গত বিধানসভা ভোটে হেরেওছেন মমতা। হেরেছেন একদা তাঁর সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গী শুভেন্দু অধিকারীর কাছেই। তাই নন্দীগ্রাম যে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে অভিজিতের বক্তব্যে কোনও ভুল নেই। তবে কি সে জন্যই নন্দীগ্রামে ফিরে ফিরে যাচ্ছেন অভিজিৎ?
গত ৭ মার্চ বিজেপিতে যোগদান করেছেন অভিজিৎ। তার ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় ১২ মার্চ তিনি প্রথম রাজনৈতিক সফরে যান নন্দীগ্রামে। অভিজিৎকে যে তমলুক থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী করা হতে পারে, সে ব্যাপারে জল্পনা শুরু হয়েছে তার অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বিজেপির তরফে তখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। তবু শুভেন্দুকে ‘গাইড’ হিসাবে সঙ্গে নিয়ে নন্দীগ্রামের জমি দেখে গিয়েছিলেন অভিজিৎ। কথা বলেছিলেন স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে। বুঝে নিয়েছিলেন মাটি কতটা শক্ত। গিয়েছিলেন শুভেন্দুর বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জে’ও। শিশিরের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি।
তার ১৫ দিন পর তমলুকের ভোট ময়দানে বিজেপির ঘোষিত লোকসভা প্রার্থী হিসাবে কাজ শুরু করলেন অভিজিৎ। গত ২৪ মার্চ তমলুকের প্রার্থী হিসাবে অভিজিতের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। তার দু’দিনের মধ্যেই তিনি চলে এলেন সেই নন্দীগ্রামে। আর এ বারও তাঁর সঙ্গী সেই শুভেন্দু। অভিজিৎকে পাশে নিয়ে মঙ্গলবার শুভেন্দু বললেন, ‘‘এই নন্দীগ্রামে বসে আমরা ঠিক করেছিলাম শহিদদের প্রতিনিধি ফিরোজা বিবিকে প্রার্থী করা হবে। সেই সিদ্ধান্তে মানুষ সমর্থন করেছিল। এ বারও আমরা মানুষের কথা ভেবে প্রার্থী ঠিক করেছি। এ বারের ভোটের দু’টি ইস্যুর সবচেয়ে বড়টি হল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। গোটা শিক্ষা দফতরটাই জেলে। তাই আমরা জানি, মানুষ কাকে সমর্থন করবে। আর কাদের ছুড়ে ফেলে দেবে।’’
এ ব্যাপারে অভিজিৎকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নন্দীগ্রামের ইতিহাস বদলে ইতিহাসেই ভরসা রাখছেন তিনি। এবং সেই ইতিহাসে ভর করেই তমলুকে নতুন ইতিহাস তৈরির স্বপ্ন দেখছেন প্রাক্তন বিচারপতি।