সংগৃহীত চিত্র।
পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে না পড়ে চলে গেল অন্যের অ্যাকাউন্টে। ১৮ লক্ষ পড়ুয়ার মধ্যে ৮৪ জন পড়ুয়ার সঙ্গে ঘটল এমন ঘটনা। কী ভাবে হল তা নিয়ে তদন্তে শিক্ষা দফতর।
পূর্ব মেদিনীপুর এবং পূর্ব বর্ধমানের দু’টি জেলা মিলিয়ে ছ’টি স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে ঘটল এমন ঘটনা। পূর্ব বর্ধমানের আসানসোলের একটি নামী সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, পুজোর আগে চলতি মাসের প্রথম থেকে টাকা প্রবেশ করতে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের আ্যাকাউন্টে। তারপর স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন দ্বাদশ শ্রেণির ১২৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে ২০ জন পড়ুয়ার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে আসেনি। স্কুলের তরফ থেকে খোঁজ নেওয়া হলে জানা যায়, তাঁদের দেওয়ার নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের বদলে সম্পূর্ণ ভিন্ন অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে টাকা। ইতিমধ্যে স্কুলের তরফ থেকে সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “২০ জন পড়ুয়ার সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাঙ্ক এবং সরকারি সহায়তায় ন’জনের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। শুধু বাকি পড়ুয়াদের টাকা কী হবে, তা এখনও জানা নেই। শুধু আইএফএসসি নম্বর দিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে কী করে টাকা যায় এটা হ্যাকারদের ছাড়া সম্ভব নয়।”
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘তরুণের স্বপ্ন’। অতিমারি আবহে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য ১০ হাজার টাকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। সংশ্লিষ্ট জেলার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা হ্যাকারদের কাজ ছাড়া কিছু নয়। স্কুলের তরফ থেকে দেওয়া আইএফসি নম্বর ও অ্যাকাউন্ট নম্বরে না গিয়ে,সম্পূর্ণরূপে আলাদা নম্বরে এই টাকা প্রবেশ করছে। পূর্ব বর্ধমানের একটি স্কুলের এক ছাত্রের অ্যাকাউন্টের আইএফএসসি কোড এসবিআই-এর মেন ব্রাঞ্চের (কলকাতার)। কিন্তু টাকাটা জমা পড়েছে দাসপাড়া শিলিগুড়িতে। যে ব্রাঞ্চের আইএফএসসি কোড দেখানো হচ্ছে সেখানে জেনারেল অ্যকাউন্ট হয় না। শুধুমাত্র বিজনেস অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
স্কুল শিক্ষা দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের চারটি এবং পূর্ব বর্ধমানের দু’টি স্কুলের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে না পড়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। শুধু পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে ৬৪ জন পড়ুয়া রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করার জন্য ইতিমধ্যেই পুলিশে এফআইআর করেছি। তদন্তের পরই বলা যাবে এটা হ্যাকিং না কি ভুল কোনও তথ্য দেওয়া হয়েছে। যার ফলে অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। পাশাপাশি এনআইসিইও বিষয়টি তদন্ত করচ্ছে, এখানে প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটি আছে কি না।”
বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন যে ধরনের ঘটনা ঘটছে ট্যাবের টাকা লেনদেনের সময় এর জন্য সরকারের উচিত সবুজ সাথীর মতো, ট্যাবের টাকা না দিয়ে সরাসরি কিনে দেওয়া। শুধু এই দু’টি জেলাতে নয় ইতিমধ্যেই কলকাতা জেলার ক্ষেত্রেও একটি সরকারি স্কুলের দু’জন ছাত্রের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। তাদের অ্যাকাউন্ট নম্বর কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের দেখাচ্ছিল। স্কুলের নজরে আসতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “ট্যাব / মোবাইল কেনার টাকা হ্যাক করে অন্য অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেওয়া, গত বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে। কলকাতার একটি ছাত্রের অ্যাকাউন্টে টাকা না ঢুকে মুর্শিদাবাদের এক জন সাধারণ লোকের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল। সেই টাকা উদ্ধার করার ক্ষেত্রে সরকার কোনও সদিচ্ছা দেখায়নি। তার ফলে এ বছর সংখ্যাটা বেড়েছে।"
সূত্রের খবর, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় অনলাইনে। পড়ুয়ারা তাদের অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং আইএফএসসি কোড স্কুলের কাছে জমা দেয়। বহু সময় দেখা গিয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন হলেও আইএফএসসি কোড আগেরটাই দিয়ে দিয়েছে। স্কুলের কাছে এই তথ্য জমা করার পরে তা সংশ্লিষ্ট পোর্টালে তোলা হয়। জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছ থেকে অনুমোদন আসার পর পুনরায় তার ডাউনলোড করে ফাইনাল চেকিং এর পর আপলোড করা হয় সংশ্লিষ্ট পোর্টালে পিডিএফ ফরমাটে। আর এখানেই হচ্ছে নম্বর পরিবর্তন। বেশ কিছু স্কুলে যখন এক্সেল ফাইলকে পিডিএফ-এ কনভার্ট করা হচ্ছে তখনই বেশকিছু নম্বর অ্যাকাউন্টে তা পরিবর্তন হচ্ছে। তবে সেটা প্রথম দিক থেকে নয় মধ্যবর্তী কোনও অংশ থেকে এই পরিবর্তন ঘটছে।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বা স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা এর জন্য স্কুলের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন। তাঁদের মতে বাংলা শিক্ষা পোর্টালের যে জেনারেল পাসওয়ার্ড দেওয়া হয় তা অনেক সময় পরিবর্তন করছে না স্কুলগুলি। বেশ কিছু স্কুল সাইবার কাফেতে গিয়ে কাজ করে। অনেক সময় যাঁরা কাজটা করেন তাঁরা অসাবধানতাবশত লগ-আউট করতে ভুলে যান। যার ফলে অসাধুচক্র খুব সহজেই এই সমস্ত জায়গায় প্রবেশ করছে।