WB Class 11 Result

একাদশের পরীক্ষার নম্বর যেন টি-টোয়েন্টি ম্যাচের স্কোর!

বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস বা এডুকেশনের মতো বিষয়েও ৪০-এর মধ্যে কেউ ৩৯ কেউ ৩৭। আর খুব কম নম্বর পেলে ৩৫। এখানেই আশঙ্কা যে, সর্ব স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ নম্বর পাওয়ার যে প্রবণতা, তা বৃদ্ধি পাবে।

Advertisement
অরুণাভ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:০৮

সংগৃহীত চিত্র।

সদ্য শেষ হয়েছে একাদশ শ্রেণির প্রথম সিমেস্টার পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ধাঁচে নম্বর পাচ্ছে পড়ুয়ারা। সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে পড়ুয়াদের মেধার সঠিক উন্নতি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক মহলেরই একাংশ।

Advertisement

বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস বা এডুকেশনের মতো বিষয়েও ৪০-এর মধ্যে কেউ ৩৯ কেউ ৩৭। খুব কম নম্বর পেলে ৩৫। এখানেই আশঙ্কা যে, সর্ব স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পাওয়ার যে প্রবণতা, তা বৃদ্ধি পাবে। শৈলেন্দ্র সরকার স্কুলের প্রধানশিক্ষক দেবকুমার বিশ্বাস বলেন, “পড়াশোনাকে প্রহসনের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিলেবাসভিত্তিক বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় খামতি রয়েছে। এই জায়গাগুলোর উন্নতি না করলে ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত মেধা লাভ করা সম্ভব নয়। এক দিকে এমসিকিউ ধাঁচে প্রশ্ন। তার উপর আছে হল কালেকশন অর্থাৎ একে-অন্যকে জিজ্ঞেস করে উত্তর লিখে ফেলা। সব মিলিয়ে নম্বরের ছড়াছড়ি।”

শিক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, এ বছর একাদশের সিংহভাগ পড়ুয়ার প্রাপ্ত নম্বর ফুল মার্কস ছুঁইছুঁই। উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি আমূল বদলের পরে এই প্রথম একাদশের পরীক্ষায় সবই মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন। উত্তর দিতে হচ্ছে ওএমআর শিটে। নেই কোন‌ও বর্ণনামূলক বা সংক্ষিপ্ত বর্ণনামূলক প্রশ্ন।

কলকাতার নামী স্কুলের তালিকায় অন্যতম যাদবপুর বিদ্যাপীঠ। স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়াসংখ্যা ২৫৭। তার মধ্যে ১৫০ জনের খাতা দেখা হয়েছে। হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া অধিকাংশেরই নম্বর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। যদিও স্কুলের প্রধানশিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “হল কালেকশনের কথা বলা মানে শিক্ষকদের ব্যর্থতাকে সামনে আনা। আমাদের স্কুলে একটি ছেলেও এ কাজ করেনি। তার পরেও তাদের নম্বর যথেষ্ট ভাল। মেধাবী পড়ুয়ারা যে কোন‌ও স্তরে মেধাবী।”

বিগত বছরের একাদশের পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর থাকত এমসিকিউ। বাকি ৪০ নম্বর থাকত ডেসক্রিপ্টিভ টাইপ ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনামূলক প্রশ্ন। কিন্তু সেখানে একই দিনে এই দু’ধরনের পরীক্ষা একসঙ্গে দিতে হত পড়ুয়াদের। ফলে আলাদা করে তুল্যমূল্য নম্বর বিচার করার জায়গাটা ছিল না। যার প্রতিফলন মূল্যায়নে হত। এ বছর থেকে সিমেস্টার পদ্ধতিতে এমসিকিউ প্রশ্নপত্রে পুরোটাই প্রথম সিমেস্টারে পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। যারা অকৃতকার্য হবে, তাদের সাপ্লিমেন্টারি দেওয়ার সুযোগ থাকছে দ্বিতীয় সিমেস্টারের সঙ্গে। এ ছাড়াও প্রজেক্টের নম্বরও রয়েছে। পার্ক ইনস্টিটিউশন স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “এক দিকে এই নয়া পদ্ধতির যেমন ভাল দিক রয়েছে, পাশাপাশি তার বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। আমি মনে করি এমসিকিউ কমিয়ে ডেসক্রিপ্টিভ প্রশ্নের অংশ বৃদ্ধি করা হোক, ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার উৎকর্ষের স্বার্থে।”

বহু স্কুলে শিক্ষকদের বক্তব্য, সিলেবাস দেখে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে পরীক্ষার প্রশ্নের ধাঁচ ও পদ্ধতি দেখে একেবারেই উল্টো মনে হচ্ছে। ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর তো আসবেই। তবে প্রকৃত শিক্ষা পড়ুয়ারা কতটা পাবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। নদিয়ার ভীমপুর স্বামীজি বিদ্যাপীঠের সহকারী অধ্যাপক নির্মল ভট্টাচার্য বলেন, “সার্বিক ভাবে সবার নম্বর বাড়বে। এটা নিয়ে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। তবে মেধার উৎকর্ষ নিয়ে সংশয় রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement