প্রতীকী ছবি
এ বার শুধু দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা নন, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও পেতে চলেছেন মোবাইল ও ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, মাধ্যমিক পাশ করে যাঁরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবেন, তাঁদেরও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করবে এই টাকা, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল সরকার।
কয়েক দিন আগেই রাজ্য সরকার যে বাজেট পেশ করেছিল, তাতে শিক্ষাখাতে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। বিকাশ ভবন থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২৪-’২৫-তে সরকার, সরকার পোষিত ও মাদ্রাসা বোর্ডের পড়ুয়াদেরও এই আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে মোবাইল বা ট্যাব কেনার জন্য। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ পড়য়ার কাছে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
এই খাতে সরকারের খরচ হবে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা মতো। চলতি সপ্তাহে বা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে লোকসভার নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। তার আগেই রাজ্য সরকারের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শিক্ষক মহলে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, “এই বছরটা নির্বাচনের বছর তাই ‘জুমলা’ দেখা যাবে এ বছরে। গ্যাসের দাম কেন্দ্রীয় সরকার কমিয়ে দিল, আর ট্যাব এবং মোবাইলের নামে আর্থিক অনুদান ‘জুমলা’-ই। তবে এতে যদি ছেলেমেয়েদের উপকার হয়, ক্ষতি কিছু নেই।”
সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘ দিন তাঁদের মহার্ঘ ভাতার দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে থেকেও একাধিক বার ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। সেই খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি, অথচ অতিমারি পরবর্তী সময়ে যখন স্বাভাবিক ভাবে পঠন-পাঠন চলছে, তখন মোবাইল বা ট্যাব কেনার জন্য আর্থিক অনুদান বাবদ এত টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন।
কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “অতিমারির সময়ে স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এখন সব স্বাভাবিক। ফলে এর প্রয়োজনীয়তা নেই। তা হলে এত টাকা খরচ কেন? মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
মোবাইল কেনার আর্থিক অনুদানের জন্য সরকারের খরচা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেল। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “এ বছর যে হেতু নির্বাচন রয়েছে, তাই সরকার চাপে আছে। যত বেশি সংখ্যক পরিবারের কাছে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যাবে, দল লাভবান হবে। মোবাইল দেওয়াতে ছাত্রছাত্রীদের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। আর সরকার সেই ক্ষতিটাই করতে চাইছে।”
অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দাবি, সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হবে। কিন্তু স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, ল্যাব ও কম্পিউটার সেন্টার তৈরির ব্যাপারে সরকার বেশি গুরুত্ব দিলে শিক্ষার মানের উন্নয়ন হবে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিতে আমরা বাধ্য। আমাদের এত দিন দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ডেটা তৈরি করে জমা দিতে হত। এ বার একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ডেটাও জমা দিতে হবে। তবে স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার আরও বেশি সচেতন হলে শিক্ষার মানের অনেকটাই উন্নতি হবে।”
প্রসঙ্গত, এত দিন পর্যন্ত যে সমস্ত পড়ুয়া একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হত, তারাই এই মোবাইল বা ট্যাব কেনার জন্য আর্থিক অনুদান পেত। আগামী অর্থবর্ষের জন্য সেই আর্থিক অনুদানের নিয়ম পরিবর্তন করল সরকার। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সমস্ত পড়ুয়াই এই আর্থিক অনুদান পাবে। তার পরের আর্থিক বর্ষ থেকে শুধু মাত্র একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্য বলেন, “সরকার এই আর্থিক অনুদান দিচ্ছে পড়ুয়াদের পড়াশোনার কাজের সুবিধার জন্য। তবে ছাত্রছাত্রীরা তা কী ভাবে ব্যবহার করবে, এটা তাদের উপর নির্ভর করবে।”