বেথুন কলেজ নিজস্ব চিত্র।
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার শিবির এ বার বেথুন কলেজে। এই কলেজের ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী সায়ন্তনী অধিকারী। কলেজ থেকে বেরিয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই দাঁড়ি পড়ে যায় তাঁর জীবনে। হোলি চাইল্ড স্কুল থেকে বেথুন কলেজ হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতেই অতিমারির কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন সায়ন্তনী।
দীর্ঘ লকডাউনের পর্ব কাটিয়ে তাঁর আর ফেরা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অকালে না ফেরার দেশে চলে যান সায়ন্তনী। তাঁর স্মৃতিচারণায় মা-বাবা গড়ে তোলেন সায়ন্তনী অধিকারী ফাউন্ডেশন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছিলেন তাঁর এই অকাল মৃত্যুর কারণ সায়ন্তনী দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।
মানসিক অবসাদের কারণে আর কোনও মেধাবি ছাত্রী যাতে অকালে চলে না যায় তাই সায়ন্তনীর পরিবারের তরফ থেকে এই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়।
সায়ন্তনীর বাবা বিদ্যুৎবরণ অধিকারী বলেন, “আমার সন্তানতুল্য সকলকে বলি কখনও ভেঙে পড়ো না। জীবনের ঝড়ঝাপটা যা-ই আসুক না কেন তার মোকাবিলা কর, অসুবিধা থাকলে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা কর। জীবন থেকে পালিয়ে যেও না।”
সায়ন্তনী অধিকারী ফাউন্ডেশন আর বেথুন কলেজের মনস্তত্ত্ব কাউন্সিলিং সেলের সহযোগিতায় বছরে দু’বার স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বেথুন কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ধরনের অনুষ্ঠানে উদ্যোগী হলে মেয়ের স্মৃতিতে কলেজকে চার লক্ষ টাকা অনুদান দেন সায়ন্তনীর মা-বাবা।
তবে বেথুন কলেজের মনস্তত্ত্ব বিভাগ শুধু মানসিক সচেতনতার অনুষ্ঠান করে থেমে থাকে না। ছাত্রীদের মানসিক অবস্থার উপর অ্যাসেসমেন্ট করার কাজটাও করে থাকেন। মনস্তত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নীলাঞ্জনা বাগচী বলেন, “এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেটা আমরা চাই। মানসিক অবসাদ অন্যান্য পাঁচটি রোগের মতো একটা ব্যাধি। এটা সকলের বোঝা উচিত। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাক সেটাই আমরা চাই।”
মেয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা সায়ন্তনী অধিকারী ফাউন্ডেশন শুধু বেথুন কলেজে নয়, উত্তর কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরির পরিচালনায় সায়ন্তনী অধিকারী অবৈতনিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে তুলেছে। সেখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ দেন তাদের বেতনের ৫০ শতাংশ খরচ বহন করে অধিকারী পরিবার। যেখানে সপ্তাহে পাঁচ দিন সোম থেকে শুক্র রোজ তিনটি ব্যাচে ক্লাস করানো হয়। প্রতিটি ব্যাচে ১০ জন করে ছাত্র-ছাত্রী থাকেন। মূলত আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা যাতে স্কুল স্তরে কম্পিউটার-এ দক্ষতা লাভ করে তার জন্য এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
এ ছাড়াও সায়ন্তনীর পরিবারের তরফ থেকে হোলি চাইল্ড স্কুলে যেখানে তাঁর মেয়ে বাংলা মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন সেখানেও চার লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তাঁর প্রধান কারণ সায়ন্তনী বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও ইংরেজিতে ভাল ফলাফল করতেন বরাবর। তাই যারা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে ইংরেজিতে ভাল ফল করে তাদের ওই টাকা থেকে পুরস্কৃত করা হয় তার জন্য এই অনুদান দেওয়া হয়েছে পরিবারের তরফ থেকে। আগামী দিনে হোলি চাইল্ড স্কুলেও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার শিবির গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছে সায়ন্তনীর পরিবার।