R G Kar Hospital Incident

ভয়ঙ্কর

প্রশ্নগুলো নেহাত সহজ। কেন একটি অসুরক্ষিত সেমিনার কক্ষকে মহিলা-চিকিৎসকদের বিশ্রামের জায়গা বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল? কেন সেখানে সিসিটিভি-র মতো প্রাথমিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল না?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৯

কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার কক্ষে এক তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত মৃতদেহ মিলল। প্রতিবাদরত ছাত্রছাত্রীদের এক জনের হাতের কাগজে দেখা গেল একটি প্রশ্ন— আমাদের দেশে ঘর, বাহির, এমনকি হাসপাতালও তা হলে সুরক্ষিত নয়? এর দায় কার? রাজ্যের প্রতিটি মানুষের মনে এই প্রশ্নটিই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ, তবে ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় নির্যাতন, ধর্ষণ— বস্তুত নৃশংস ধর্ষণ— এবং খুন, সন্দেহের অতীত। ২০১২ সালে দিল্লিতে, ২০১৯ সালে হায়দরাবাদে দুই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর ধর্ষণ ও হত্যায় দেশ উত্তাল হয়েছিল, কারণ কর্মরত মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার বহর সকলের সামনে স্পষ্ট হয়েছিল। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর অপমৃত্যু ততোধিক ভয়ানক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াল। দিল্লিতে ফিজ়িয়োথেরাপির ছাত্রী, এবং হায়দরাবাদের পশুচিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা ঘটেছিল বাসে, নির্জন রাস্তায়। কলকাতায় তরুণী চিকিৎসকের দেহ কিন্তু পাওয়া গিয়েছে তাঁর নিজের মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরে। মেডিক্যাল কলেজগুলি চিকিৎসক-পড়ুয়ার ঘরবাড়ি, সেখানেই তাঁদের সব চাইতে বেশি সময় থাকতে হয়। সেই পরিসরকে নিরাপদ, কাজ ও বিশ্রামের উপযোগী করে তোলার দায় অবশ্যই কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সিসিটিভি, নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও যদি সেই নিরাপত্তা না দেওয়া যায়, তবে তা আর কেবল দায় থাকে না, অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ— অপরাধী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাধীর প্রাণদণ্ড দাবি করেছেন। ন্যক্কারজনক এই ঘটনায় ধর্ষণকারী ও হত্যাকারীর কঠিন শাস্তি প্রাপ্য তো বটেই, কিন্তু যেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষই এমন ভয়ানক দায়হীনতার অপরাধে অপরাধী, মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়ে কী করছেন?

Advertisement

প্রশ্নগুলো নেহাত সহজ। কেন একটি অসুরক্ষিত সেমিনার কক্ষকে মহিলা-চিকিৎসকদের বিশ্রামের জায়গা বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল? কেন সেখানে সিসিটিভি-র মতো প্রাথমিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল না? কেন নিরাপত্তা রক্ষীরা টহল দেন না? কেন ছাত্রী ও মহিলা-ডাক্তাররা তাঁদের উপর অহরহ ঘটে যাওয়া শারীরিক নিগ্রহ নিয়ে কথা বললে তা অনুধাবনসহকারে শোনা হয় না? অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগ জানালে কেন কর্মীদের কানাকানি শোনা যায়, চাকরিটা তো রাখতে হবে, বেশি কিছুতে না জড়ানোই ভাল? কার বা কাদের প্রশ্রয়ে ঘটে এই সব দৈনন্দিন অপরাধ? হাসপাতালের অভ্যন্তরে চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অকস্মাৎ ঘটে না। কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ দিনের শিথিলতার সুযোগ নিয়েই ঘটে। রোগীর আত্মীয়দের হাতে আক্রান্ত হন জুনিয়র ডাক্তাররা। আছে দালালচক্র, কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছড়ি ঘোরানো, কর্মচারীদের মধ্যে দলীয় বাহুবলীদের উপস্থিতি। কর্তৃপক্ষ এক অনড়, অনমনীয় মনোভাব নিয়ে থাকেন। কারও কোনও প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেওয়া, কোনও অভিযোগের সারবত্তা স্বীকার করাকে অধ্যক্ষ, সুপাররা যেন দুর্বলতা বলে মনে করেন।

এই মনোভাবটি রাজনীতির। মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনে তার অনুপ্রবেশের ফলে ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসকরাও আজ কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘প্রতিপক্ষ’ হয়ে উঠেছে। তরুণ চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের বিপন্নতা বাড়ছে। রাজনীতির প্রভাব পুলিশ-প্রশাসনের উপরেও। না হলে কী করে ঘটনাটির যথাযথ তদন্তের আগেই মেয়েটির মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে আখ্যা দিলেন পুলিশ কর্তা? এ রাজ্যে যে কোনও গুরুতর নারী-নির্যাতনের ঘটনাকে লঘু করে দেখানোর যে জঘন্য চেষ্টা, আবারও তাই ঘটল। হাঁসখালির কিশোরী, সন্দেশখালির গৃহবধূ থেকে কলকাতায় কর্মরত চিকিৎসক, সকলের ক্ষেত্রেই সত্য ঘটনার প্রকাশের চাইতে শাসক দলের তৈরি বয়ানকে সত্য বলে চালানোর চেষ্টাই বেশি। এই অপচেষ্টাকে সর্বশক্তিতে পরাভূত করা চাই।

আরও পড়ুন
Advertisement