Afghanistan

অতল

আফগান মেয়েরা এই অপমানে, অধিকার হরণে কেঁদেছেন, প্রতিবাদে পথেও নেমেছেন— তালিবান সেই প্রতিবাদ ছত্রভঙ্গ করেছে জলকামান আর প্রহারে। বার্তাটি পরিষ্কার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:১১
আফগান মহিলাদের প্রতিবাদ।

আফগান মহিলাদের প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।

মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ করেছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। ২০২২-এর মার্চে মেয়েদের মাধ্যমিক স্তরে স্কুলে ফেরা নিষেধ হয়েছিল, এ বার বছরশেষে উচ্চশিক্ষায় দাঁড়ি। সরকারের তরফে ব্যাখ্যাটি অ-বিশ্বাস্য: যে পোশাকে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিলেন তা শাস্ত্রবিরোধী, অতএব পড়াশোনাই বন্ধ। অথচ বিশ্বসুদ্ধ লোক জানেন তালিবান জমানায় নিজেদের পছন্দের পোশাক পরার কোনও ‘অধিকার’ই নেই মেয়েদের। যে দেশ ও সরকার নারীর প্রকাশ্য চলাফেরায় লাগাম পরিয়েছে, পুরুষ অভিভাবক বা সঙ্গী ছাড়া বাইরে বেরোনোয় নিষেধ চাপিয়েছে, সেখানে শরিয়ত-বিরুদ্ধ পোশাকের প্রশ্নই নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা আসছিলেন মাস্ক ও হিজাবে মুখ-মাথা ঢেকেই। পোশাক ওজর মাত্র, আসল কথা মেয়েদের একের পর এক অধিকার হরণ, পুরুষতান্ত্রিক ও চরম কর্তৃত্ববাদী শাসনে তাঁদের স্রেফ ঘরবন্দি করে রাখা। আফগান মেয়েরা এই অপমানে, অধিকার হরণে কেঁদেছেন, প্রতিবাদে পথেও নেমেছেন— তালিবান সেই প্রতিবাদ ছত্রভঙ্গ করেছে জলকামান আর প্রহারে। বার্তাটি পরিষ্কার।

এবং ভবিষ্যতের রূপরেখাও। সরকার গড়ার আগে তালিবান বলেছিল আফগানিস্তানে মেয়েদের সম্মান জানানোর কথা, এমনকি নতুন সরকার শুরুর দিকে কাবুল কন্দহর-সহ দেশের নানা শহর ও অঞ্চলের মেয়েদের পড়াশোনা আর কাজে যাওয়ার চিত্রটি আগের তালিবান জমানার চেয়ে ঢের ভাল বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু তালিবান যে সেই তিমিরেই আছে, মালুম হয়েছে অচিরেই: মেয়েরা প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত পড়লেই যথেষ্ট এমন কথা বলা, মাধ্যমিক ও তার উপরের স্তরে মেয়েদের স্কুলে আসায় ফতোয়া, সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে, বিশেষত গণমাধ্যমে নারী কর্মীদের দৃশ্যমানতা নিয়ে আপত্তি— মাথাচাড়া দিয়েছে একে একে। বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষা থেকে মেয়েদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই ধারাবাহিকতারই ফল। মনে রাখতে হবে, একই সঙ্গে নির্দেশ পৌঁছেছে আফগানিস্তানে কর্মরত দেশি-বিদেশি অসরকারি সংস্থা তথা এনজিওগুলির কাছেও, কোনও মেয়েকে কাজে রাখা চলবে না। শিক্ষাক্ষেত্রের সর্বোচ্চ স্তর ও কর্মক্ষেত্র, দু’টিকেই হস্তগত করতে পারলে দমনপীড়নের শাসনের পোয়াবারো।

Advertisement

এমনই কি চলতে থাকবে? পুরুষের ধর্মীয় কর্তৃত্ববাদে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকও নয়, তারও নীচের স্তরে জীবন কাটবে আফগান মেয়েদের, এই একুশ শতকে? আন্তর্জাতিক স্তরে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা চলছে, কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জ বা বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার স্রেফ উদ্বেগ প্রকাশই যথেষ্ট নয়, আমেরিকা-সহ উন্নত দেশগুলির তর্জনও— কারণ বোঝাই যাচ্ছে নিজভূমে তালিবান বেপরোয়া, বিশ্ব-কূটনীতির তোয়াক্কা তারা করে না। আফগান মেয়েরা পথে নেমেছেন প্রাণের ভয় উড়িয়েই, তাঁদের সঙ্গী হয়েছেন পুরুষরাও। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা ক্লাস ও পরীক্ষা বয়কট করেছেন, সরব হয়েছেন প্রতিবাদে। শাসক যতই রক্তচক্ষু আর বজ্রমুষ্টি হোক, গণআন্দোলনের শক্তি তারও বেশি— সম্প্রতি বুঝিয়ে দিয়েছেন ইরানের নারীপুরুষ। সেখানে শাসকের দমননীতির অস্ত্র ছিল হিজাব-বিধি, আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে তা উচ্চশিক্ষার দ্বাররোধ। তার বিপ্রতীপে সাধারণ মানুষের, বিশেষত মেয়েদের এই প্রতিরোধই হয়তো দেশকে তলিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাবে।

আরও পড়ুন
Advertisement