দেবাশিস ভট্টাচার্য তাঁর প্রবন্ধে (‘জোটের জটিল জট’, ৯-১২) এক বার প্রশ্ন করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে বিরোধী জোটকে দুর্বল করতে চাইবেন কেন? আবার অন্য দিকে বলেছেন, জাতীয় স্তরে ৪২টি লোকসভা আসনে যাঁর রণভূমি, তাঁর হাতে বিরোধী জোটের চাবিকাঠি। আমার তিনটি প্রশ্ন আছে। এক, মমতার হাতে সত্যিই কি বিরোধী জোটের চাবিকাঠি? দুই, ঠিক কতগুলো বিজেপি-বিরোধী দল মমতার পাশে থাকবেন এবং ওঁকে নেত্রী হিসাবে মানবেন? মোদীকে টক্কর দিতে গেলে বিরোধী পরিসরে এক জন গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় নেতার দরকার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে হারানো, আর দেশে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়া, দুটো এক কথা নয়। তিন, ২০১৬ সালেও মমতা বাংলার বিধানসভায় প্রায় সমসংখ্যক আসন পেয়েছিলেন। ২০১৯-এ তাঁর ডাকে কংগ্রেস-সহ সব বিজেপি-বিরোধী দল ব্রিগেডে হাজির হয়। কংগ্রেসকে সেই জোটে নেতৃত্ব দিতে মমতা অনুরোধ করেছিলেন। আজ কেন তিনি কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোটে থাকতে চাইছেন না? তা হলে কি এর পিছনে রয়েছে জাতীয় স্তরে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ, যার জন্যে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস থেকে নেতা-কর্মী ভাঙিয়ে তৃণমূলে আনা হচ্ছে? কিন্তু মমতা ভালই জানেন, তিনি বঙ্গে কংগ্রেসের যে অবস্থা করেছেন, তা অন্য রাজ্যে এত দ্রুত সম্ভব নয়।
একটা শক্তপোক্ত বিরোধী জোট কংগ্রেসের নেতৃত্বে গড়ে উঠলে বিজেপি সরকারের বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা হতে পারত। দেবাশিসবাবুর কথায়, কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতিতে মমতাকে পাত্তা দেবে না। কারণ প্রায় দু’শোটি আসনে কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে। এখানে কোনও আঞ্চলিক দলের ভূমিকা নেই। এই দু’শোটি আসনে কৃষক আন্দোলনের ফলে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। যদি কংগ্রেস এই ২০০ আসনের অর্ধেক আসনে জয়ী হতে পারে, তা হলে বিজেপির কেন্দ্র থেকে বিদায় নিশ্চিত। নেতৃত্বের প্রশ্নে রাহুল গাঁধীকে সব বিরোধী দলের মান্যতা দেওয়া উচিত। তিনি আগের চেয়ে অনেক পরিণত।
কমল চৌধুরী
কলকাতা-১৪০
বিকল্প?
‘জোটের জটিল জট’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। রাজ্যে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করার ইচ্ছে তৃণমূলের কাছে যেন পাখির চোখ হয়ে দেখা দিয়েছে। এই প্রয়াসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই কংগ্রেসকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এ ধরনের সাফল্য পেতে গেলে, ইচ্ছে বা বাসনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষমতা থাকাও দরকার। মনে রাখতে হবে, কংগ্রেসের সবচেয়ে খারাপ সময়েও, অর্থাৎ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই দলটি ১২ কোটি ভোট পেয়েছিল। কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল, যেখানে তৃণমূলের ক্ষমতা এই রাজ্যেই সীমাবদ্ধ। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভোট শেয়ার ১৯.৪৭ শতাংশ, তৃণমূলের ৪.০৬ শতাংশ। ইতিমধ্যেই শরদ পওয়ারের এনসিপি, এবং শিবসেনা তাদের মুখপত্র সামনা-য় কংগ্রেসবিহীন বিরোধী জোটের প্রস্তাব খারিজ করেছে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মমতা কংগ্রেস ও সিপিএমের অনেক নেতা-কর্মীকে নিজের দলে নিয়ে এসেছেন। সেই সুযোগেই বিজেপি আজ এই রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি। ত্রিপুরায় মমতা কংগ্রেসের মোট ১৭ জন বিধায়কের মধ্যে ১২ জনকে নিজ দলে নিয়ে এলেন। তাঁর কংগ্রেসবিহীন বিরোধী জোটের ডাক এবং মোদীর ‘কংগ্রেসমুক্ত’ ভারতের স্লোগানের মধ্যে কোথায় যেন মিল খুঁজে
পাওয়া যায়।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত
বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
কৃষকের শক্তি
‘দ্বেষ নয় দেশ, পাঠ অন্নদাতার’ (১২-১২) প্রতিবেদনটি পড়লাম। অর্থাৎ, আন্দোলন শুধু দাবি আদায় করে না, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত, এগুলিকেও ভুলিয়ে সবাইকে এক সূত্রে বেঁধে দেয়। অর্থাৎ, ধর্মীয় মৌলবাদীদের বিভেদের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করেছে আন্দোলন। কারণ আন্দোলন এই শিক্ষা দেয় যে, যে কোনও ধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষের সমস্যা একই। কৃষকদের একটাই জাত, তাঁরা অন্নদাতা। সারা দেশকে খাদ্য জোগান। আন্দোলনের ময়দানে গিয়ে তাঁরা জানলেন, তাঁরা তুচ্ছ নয়, অসীম ক্ষমতার অধিকারী, যাঁদের শক্তিশালী সরকারও সমীহ করে।
নিখিল কবিরাজ
কল্যাণী, নদিয়া
গানের ভুবন
সম্প্রতি বীরভূমের এক প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক মানুষ ভুবন বাদ্যকরের গানে মেতেছে নেট দুনিয়া। এই গ্রাম্য সরল মানুষটি বেচা-কেনার সুবিধার্থে গান বেঁধেছিলেন। তাঁর বাঁধা গান অচেনা এক ব্যক্তির তৎপরতায় সমাজমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। জনপ্রিয়তায় এই গান দুই বাংলার মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে শুরু করেছে। কিন্তু সংবেদনশীলতার ন্যূনতম নজির না রেখে ভুবনবাবুর জীবনসংগ্ৰামের হাতিয়ার এই গানটিকে নিয়ে যে ভাবে কিছু মানুষ নতুন ভিডিয়ো বানিয়ে সমাজমাধ্যমে তাঁকে ‘ভাইরাল’ করার নেশায় মেতেছেন, তা অভব্যতার নামান্তর। যে মানুষটির প্রতিটি পদক্ষেপ দারিদ্রে ক্ষতবিক্ষত সেই মানুষটিই হাসিমুখে গান গাইতে গাইতে যুঝে যাচ্ছেন জীবনের প্রতিটি লড়াই। অথচ, তাঁর জীবন সংগ্রামকে নিয়ে কুরুচিকর ভিডিয়ো তৈরির মাধ্যমে তাঁকে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে। আশার কথা, দুই বাংলারই বেশ কিছু সংস্থা, কেউ কেউ ব্যক্তিগত ভাবেও এগিয়ে এসেছেন ভুবন বাদ্যকরের সহায়তায়। আন্তরিক সাধুবাদ জানাই এই ধরনের সুপ্রচেষ্টাকে। ‘অন্য ভুবন’ তৈরি
হোক বাংলায়।
তন্ময় মণ্ডল
গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
মেয়েদের শিক্ষা
‘মেয়েদের শিক্ষায় ধাক্কা বেশি কোভিডে, আশঙ্কা’ (১১-১২) সংবাদটি অতি উদ্বেগজনক হলেও নতুন কিছু নয়। সরকারি ভাবে স্বীকার না করা হলেও বাস্তব সত্য হল, ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা অতি সামান্য কিছু অংশের ছাত্রছাত্রীদের উপকার করেছে। বড় অংশের ছাত্রছাত্রীদের কাছে তা অধরাই থেকে গিয়েছে। ১৫ কোটি ছাত্রীর মধ্যে কেবল শহুরে বেসরকারি স্কুলের ছাত্রীরা ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা করতে পেরেছিল। শুধু ছাত্রীদের নয়, ৩২ কোটি ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনায় ঠিক কতখানি ধাক্কা লেগেছে, আগে খতিয়ে দেখুক সরকার। আর লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এক অলীক কল্পনামাত্র! বৈষম্য দূরীকরণের বিবিধ উদ্যোগ প্রচারেই যখন বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৭ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে যায়, তখন উদ্যোগের উদ্দেশ্যটি আসলে যে গৌণ, বুঝতে বাকি থাকে না। রূঢ় বাস্তব হল, অতিমারি এক বৃহৎ সংখ্যক মেয়েদের পড়াশোনার ভুবন থেকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন করেছে। অনেকের পরিবার তাদের পড়াশোনা থেকে ছাড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। লিঙ্গবৈষম্যের প্রবহমানতা এবং সরকারি উদাসীনতা ‘বেটি বচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পকে উপহাসের বিষয় করে তুলেছে।
অভিজিৎ কাপাস
রাজনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর
নির্লোভ পুলিশ
পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল নয়। পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষ খায়, জোর করে তোলা আদায় করে— নানা অভিযোগ। তাই যখন পড়ি, শালিমার স্টেশনে মুম্বইযাত্রী দম্পতির ফেলে যাওয়া ব্যাগ ফিরিয়ে দিল আরপিএফ রেল পুলিশ, তখন আনন্দ ও বিস্ময়ে মন ভরে যায় (‘ব্যাগ ফেরত’, ১৩-১২)। আশি হাজার টাকা, সোনার গয়না-সহ বহু দামি জিনিসে ভরা ছিল ব্যাগটি। এমন নির্লোভ কর্তব্যনিষ্ঠা বিরল। অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই ওই পুলিশকর্মীদের।
অনন্তলাল কুন্ডু
কলকাতা-৭৫