KMC Polls 2021

নাগরিক পারবে

যেন তেন প্রকারেণ উপার্জন, ঘুম থেকে উঠে শুধুই ভবিষ্যৎ-অর্থনৈতিক সুরক্ষার ভাবনা— এগুলোই তো মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৪৪

‘মিছিলের শব্দ শুনি না, হারিয়েছে প্রতিবাদী সমাজ’ (৫-১২) শীর্ষক প্রবন্ধে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, এখন মনোভাব অনেকটা এ রকম, “আমার মেয়ে প্রথম হবে, কিন্তু প্রতিবেশীর সন্তানটি যেন ফেল করে। তাকে পাশ করতে দেখতে চাই না।” আবার তার পরেই জানিয়েছেন, “বিশ্বায়নের দৌলতে ভোগবাদী সমাজের এই আত্মসর্বস্বতা গিলে নিচ্ছে আমার কলকাতার অন্য শহরের চরিত্র।” মাত্র ৩০ বছরেই এমন অভাবনীয় সামাজিক পরিবর্তন। এই ভোগবাদী আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার প্রতিফলন সর্বস্তরে। যেন তেন প্রকারেণ উপার্জন, ঘুম থেকে উঠে শুধুই ভবিষ্যৎ-অর্থনৈতিক সুরক্ষার ভাবনা— এগুলোই তো মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে। ভাল স্কুলে ইংরেজি পড়ব-শিখব, কিন্তু খেলার মাঠে গিয়ে শৃঙ্খলা-ভ্রাতৃত্ববোধ-দায়িত্ববোধের শিক্ষা নেব না। মানবিকতা, মূল্যবোধ, দায়বদ্ধতা— এই শব্দগুলো এখন অধিকাংশের কাছেই হয় অপরিচিত, নয় দুর্বোধ্য। মানুষের জন্য কাজ করতে নেমে, নিজের আখের গোছানোর চেষ্টাই যেন এখন স্বাভাবিক। যে কোনও উৎসবে বাজি পুড়িয়ে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে যাচ্ছে সকলে। কর্পোরেশনের জল যত খুশি অপচয় করা হচ্ছে। গাছ কাটা, পুকুর ভরানো হচ্ছে। পরিবেশ দূষিত হয়, রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, সামাজিক সম্পদ নষ্ট হয়, অথচ কেউ কিছু বলার সাহস দেখান না।

১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে দায়িত্ববোধ আশা করার অর্থ, সোনার পাথরবাটি চাওয়া। কিন্তু বিকল্প কিছু কি মানুষের হাতে আছে? হাত গুটিয়ে বসে না থেকে আমরাই যদি আশপাশটুকু সুন্দর করার আগ্রহ দেখাই, গোটাটা সেজে উঠবে। ব্যক্তিগত ভাবে কাজ করা হয়তো কঠিন, কিন্তু সকলে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারি। এখনও যাঁরা সমাজটাকে সুন্দর করার আগ্রহ নিয়ে নানা ধরনের অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন পরিচালনা করেন, সাধারণ মানুষের সেবায় নানা রকম কর্মকাণ্ডে অংশ নেন, তাঁরা একটু উদ্যোগী হলেই যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা, শব্দ-বায়ুদূষণের হাত থেকে শিশু-বৃদ্ধ-রোগীদের রক্ষা করা, পানীয় জল অপচয় বন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে নাগরিক সচেতনতার প্রসারে কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়।

Advertisement

রতন রায়চৌধুরী

কলকাতা-১১৪

মিছিল, আজও

নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেছেন— “মিছিলের শব্দ শুনি না, হারিয়েছে প্রতিবাদী সমাজ।” বক্তব্যটি পড়ে অবাক হলাম, কলকাতা সব সময়ই প্রতিবাদী, প্রতিবাদের ধরনে বদল এসেছে হয়তো। সবাই তো আর চিৎকার করে প্রতিবাদ করে না, নিঃশব্দ প্রতিবাদও প্রতিবাদ। এই শহরে আজও, প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও সময় বামপন্থীরা কোনও না কোনও বিষয় নিয়ে মিছিল করেন, করে চলেছেন। অথচ, অবাক হলাম রুদ্রবাবুর চোখে কোনও মিছিল ধরা পড়ে না, মিছিলের শব্দ তাঁর কানে যায় না।

অমরেন্দ্র নাথ ধর

কলকাতা-৫১

ক্যাব যন্ত্রণা

‘পরিষেবার স্বার্থে’ (৬-১২) সম্পাদকীয়তে সঠিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। হলুদ ট্যাক্সি হোক বা অ্যাপ-ক্যাব, রিফিউজ়াল আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে নতুন নতুন কায়দায়। হলুদ ট্যাক্সির কীর্তি সবাই জানে, ২০১৪ সালে সরকারি স্তরে নড়াচড়া হলেও ওই পর্যন্তই। অভিযান শুরু হয়, কালের নিয়মে থেমেও যায়। এর থেকে নিষ্কৃতি পেতে যদিও বা অ্যাপ-ক্যাব রাস্তার দখল নিল, তারা এখন বুকিং পেয়ে আগে ট্রিপ ‘অ্যাকসেপ্ট’ না করে পার্টির ফোনের অপেক্ষা করে জেনে নেয় গন্তব্যস্থল। সেই বুঝে কোম্পানির পাঠানো ট্রিপ নেয় বা বাতিল করে দেয়। পার্টি একটার পর একটা বুকিং করে আর হয়রান হয়। শুরুর দিকটা সার্ভিস এত ত্রুটিমুক্ত ও নির্ভরশীল ছিল, সময়ে-অসময়ে ডাকলেই দোরগোড়ায় হাজির হত, রাতবিরেতে বাড়ির সামনে বিনা বাক্যব্যয়ে নামা যেত। ফলে, গাড়ি কেনার প্ল্যান বাতিল করেছিলেন অনেকে। কিন্তু এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। আমার নিজের শহর কলকাতায় হামেশাই হচ্ছে বুকিং বাতিলের নাটক। আসলে হলুদ ট্যাক্সি হোক বা অ্যাপ-ক্যাব চালক, এঁরা অনেকেই জামা বদলেছেন, কিন্তু আচরণ বদলাননি।

তবে এই শহরেই অনেক ক্যাব-চালক জিপিএস চালু রেখে নিঃশব্দে পরিষেবা দিয়ে যান, আর মোবাইল স্ক্রিনে দেখানো ভাড়ার বাড়তি অর্থ ফেরত দিতেও ভোলেন না। চালকদের চাই উপযুক্ত শিক্ষা, সে প্রাতিষ্ঠানিক হোক বা পেশাগত, চাই কঠিন বাঁধন ও তাঁদের উপর নজরদারি, পরিষেবা প্রদান বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলা। এতে সরকারের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ যেমন থাকে, তেমনই শহরটির মানসম্মান ও ঐতিহ্য উচ্চে স্থাপন করা যায়। মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করে, চমক দিয়ে শোধরানো যাবে না। দুয়ারে সরকারের ভাবনায় সব দফতরের জন-পরিষেবা সহজলভ্য করার চেষ্টা করলে সরকারের উপর জন-আস্থা বৃদ্ধিই পাবে।

দায়িত্বশীল অফিসারদের এ সব জনসেবামূলক কাজে লাগালে আখেরে কাজ হবে। বিভিন্ন দফতরে মন্ত্রী ও সর্বভারতীয় স্তরের কাজ করা অভিজ্ঞ আমলা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনে ডজন ডজন উপদেষ্টা রাখার দরকার হয় কেন? কেন জনগণের অর্থে তাঁদের লক্ষ লক্ষ টাকার প্যাকেজ ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়? জনপরিষেবা বণ্টন বা প্রদানে গতি আনতে অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য বা কেন্দ্রীয় স্তরের আমলাদের উপরি-নিয়োগ নিয়ে সরকার ভাবতে পারে। এঁরা সঠিক দফতরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পথেঘাটে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সাফল্য এলে সে কৃতিত্ব প্রশাসনেরই হবে, জনগণের অসন্তোষও কমবে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা

কলকাতা-১৫৪

বিরোধী কই?

দেবাশিস ভট্টাচার্য “‘লড়াই’ নিজের সঙ্গেও’ (২৫-১১) শীর্ষক প্রবন্ধে তৃণমূলকে যে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার কথা বলেছেন, সেটা তৃণমূলের কাছে কোনও বড় চ্যালেঞ্জই নয়। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের শতকরা সাফল্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে উপনির্বাচনে জয়ের ব্যবধান। সাধারণ মানুষ মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও বুঝতে পারছেন, প্রধান বিরোধী দলকে ভোট দিয়ে জেতালেও পরবর্তী সময়ে প্রলোভনের হাতছানিতে দলবদল করে অনেকের শাসক দলে চলে যাওয়াটাই ভবিতব্য। উপনির্বাচনে ইচ্ছে না থাকলেও তাই অনেকেই শাসক দলকে ভোট দিয়েছেন নতুবা বিরত থেকেছেন ভোটদান থেকে। যদি বিধানসভায় নির্বাচিত রাঘব-বোয়ালেরা এই ভাবে দল বদল করতে পারেন, তবে পুরসভা নির্বাচনে নির্বাচিতদের কাছে এই ব্যাপারটা তো আরও সহজ। কারণ দলবদল করলেও পুর সদস্যপদ চলে যাওয়ার তেমন ভয় নেই আইন এবং কৌশলের মারপ্যাঁচে। সাধারণ মানুষের পরিষেবা নিয়ে হাজার ক্ষোভ থাকলেও, শুধুমাত্র বিরোধিতার কারণেই বর্তমানে বিরোধী দল হিসাবে পরিগণিত দলগুলোর ভোটবাক্সের প্রতি এখনও তাঁরা সদয় নন। মানুষের মনে ভরসা জোগাতে সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়া এবং জ্বলন্ত সমস্যাগুলো নিয়ে সদর্থক আন্দোলনে না নামলে, শাসক দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আগে মানুষ পাঁচ বার ভাববেন।

আবার নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে বেশির ভাগ সংবাদপত্রই শাসক দলের সমালোচনার ক্ষেত্রে যতটা কার্পণ্য দেখায়, দলবদলের সংবাদ পরিবেশনে ততটাই উদারহস্ত। এতে প্রভাবিত হন সাধারণ মানুষও। কাজের সুযোগে দেশের মধ্যে যতই শেষে থাক কলকাতা; যতই থাক নিয়োগে দুর্নীতি; ক্ষুধা ও দারিদ্রের মাপকাঠির সার্বিক বিচারে শেষ সারির ১০টা শহরের একটা হোক, বিরোধীরা মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠতে না পারলে কোনও চ্যালেঞ্জ তৃণমূলকে দমাতে পারবে না।

অশোক দাশ

রিষড়া, হুগলি

আরও পড়ুন
Advertisement